ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অবিনশ্বর জাহাজ’ বলা হয়। কিন্তু ইরানের ভয়ংকর নিখুঁত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের বিখ্যাত ‘আয়রন ডোম’ ভেদ করে সেই জাহাজের গায়ে আঘাত হেনেছে। ইরানের জন্য হুমকি হিসেবে এ যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, কিন্তু এখন তা উল্টো ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েলের বৃহস্পতিবার রাতের হামলার জবাবে ইরানের প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমারা হতবাক হয়ে গেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প গর্ব করে বলে থাকেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সেরা সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করে আর ইসরায়েলকে সেই সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। তবে ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইসরায়েলের ব্যবহৃত দুই বা তিনটি মার্কিন এফ-৩৫ স্টিলথ জেট ইতিমধ্যে ধ্বংস হয়েছে। এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে যদি একটি জেটও ইরান ধ্বংস করে থাকে, তাহলে সেটি নিঃসন্দেহে পশ্চিমা সমর প্রকৌশলীদের এবং ট্রাম্পের জন্য অপমানজনক ব্যাপার হবে।

আরও পড়ুনইরানে হামলা ইসরায়েলের জন্য কৌশলগত বিপর্যয় ডেকে আনবে ১৭ জুন ২০২৫

দীর্ঘদিন ধরে নিষেধাজ্ঞায় ও আর্থিক সংকটে থাকা একটি দেশ নিজেকে রক্ষায় যে সামর্থ্য অর্জন করেছে, তা ইতিমধ্যেই পশ্চিমাদের মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে। কারণ, একটি অত্যাধুনিক মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংসের ফলে বিশ্ব অস্ত্রবাজারে এর প্রভাব পড়তে পারে। মার্কিন বিশ্লেষকেরা সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় ফ্রান্সে তৈরি রাফাল জেটের সক্ষমতা নিয়ে ঠাট্টা করতে পেরে খুশি ছিলেন। কিন্তু এবার দাবার ঘুঁটি তাঁদের দিকে ঘুরে যেতে পারে।

প্রশ্ন হলো, ইসরায়েল কি পশ্চিমের কাছে কেবল স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের একটি পুরোনো অস্ত্র হয়ে আছে, নাকি দেশটি এখনো পশ্চিমাদের আসলেই কোনো কাজে লাগে? একসময় ইসরায়েল আরব দেশগুলোর সঙ্গে দুটি বড় যুদ্ধে জিতেছিল এবং এ অঞ্চলে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব ঠেকাতে সাহায্য করেছিল। তখন পশ্চিমাদের কাছে ইরান ছিল একটি ভারসাম্য তৈরির উপায়।

সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং পারস্য উপসাগরে ৪০ হাজার মার্কিন সেনা আছেন। ম্যাকগ্রেগর সতর্ক করেছেন, ‘তাঁরা সহজ নিশানা হবে। ইরানের শাহেদ-১৩৬ ড্রোনের দাম ২০ হাজার ডলার আর আমেরিকার প্যাট্রিয়ট মিসাইলের প্রতিটি ইন্টারসেপ্টরের দাম ৪০ লাখ ডলার। হিসাব করুন। এই যুদ্ধে আমরা আমাদের মিসাইলের মজুত শেষ করে দেব আর আমেরিকানরা কফিনে করে বাড়ি ফিরবেন।’

পশ্চিমা দেশগুলো বলে যাচ্ছে, ইরান নাকি পারমাণবিক বোমা বানাতে চাইছে। তবে পশ্চিমের এ অভিযোগ খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ঠিক এ ধরনের মিথ্যা কথা বলেই ইরাককে ধ্বংস করেছিল। তারা বলেছিল, সাদ্দাম হোসেন পারমাণবিক বোমা বানাচ্ছেন। পরে প্রমাণিত হয়েছে, তাদের কথা সত্য ছিল না।

ইসরায়েল সৃষ্টির আগেই দেশটির সীমালঙ্ঘন মেনে নেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৬ সালে জেরুজালেমের কিং ডেভিড হোটেলে জায়নবাদী চরমপন্থীরা বোমা মেরে ব্রিটিশ সৈন্যদের হত্যা করেছিল।

এরপর ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল-আরব যুদ্ধের সময় ভূমধ্যসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা জাহাজ ইউএসএস লিবার্টিতে হামলা চালিয়েও শাস্তি এড়িয়েছিল। মার্কিন জেট বিমান ও টর্পেডো বোট ব্যবহার করে তারা ৩৪ মার্কিন নাবিককে হত্যা করেছিল।

সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ইসরায়েল ১৯৫০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক গোপন তথ্য চুরি করে গোপনে বোমা বানাচ্ছিল। ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা সরকারগুলো তা দেখেও চোখ বন্ধ করে রেখেছিল। এভাবে ইসরায়েল সব ক্ষেত্রেই সীমা লঙ্ঘন করে পার পেয়ে গেছে।

আরও পড়ুনইরানে ইসরায়েলের হামলার আসল যে কারণ১৬ জুন ২০২৫

এসব কারণে নেতানিয়াহুর জন্য ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অংশগ্রহণ চাওয়া কিছুটা বেমানান। একটি টেলিভিশন ভাষণে নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে যুদ্ধে সরাসরি জড়ানোর জন্য অদ্ভুত যুক্তি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইরান ১৯৮৩ সালে বৈরুতে ট্রাকবোমা মেরে প্রায় ৩০০ মার্কিন ও ফরাসি সৈন্য হত্যা করেছিল। তিনি ট্রাম্পকে বিশ্বাস করাতে চেয়েছেন, ইরান ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা নেতানিয়াহুকে যুক্তরাষ্ট্রকে তাঁর ব্যক্তিগত যুদ্ধে জড়ানোর জন্য তিরস্কার করেছেন। তাঁরা ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিয়েছেন, ২০০৩ সাল থেকে ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে ১২ ট্রিলিয়ন ডলার হারিয়েছে; আর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ ৩৪ ট্রিলিয়ন ডলার।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল ডগলাস ম্যাকগ্রেগর টুইট করেছেন, ‘৭ কোটি ৭০ লাখ লোক ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন। কারণ, তিনি বিদেশি সংঘর্ষ বন্ধ এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ রোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।’

আরও পড়ুন২৫০০ বছরের পুরোনো দুশমনি: ইসরায়েল কি ‘মরদখাই’? ইরান কি ‘হামান’?১৭ জুন ২০২৫

তিনি অনুমান করেছেন, ইসরায়েল যদি ইরানের খার্গ দ্বীপ (যেখান থেকে ইরানের ৯০ শতাংশ তেল রপ্তানি হয়) বা বন্দর আব্বাস টার্মিনালে হামলা করে, তাহলে ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে। এটি বিশ্বের তেল সরবরাহের ২০ শতাংশ বন্ধ করে দেবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে এবং মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে।

যদি এ যুদ্ধ চলতেই থাকে, তাহলে এক রাতে গ্যাস বা পেট্রলের দাম প্রতি গ্যালন ৭ ডলারে উঠে যাবে। এতে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে যাবে। ট্রাকচালকেরা তখন খাবার বা জরুরি পণ্য পরিবহন করতে পারবেন না। ফলে দেশের পুরো অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।

ম্যাকগ্রেগর প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এই ভোগান্তি পোহাতে হবে কেন? শুধু কি এই জন্য যে ইসরায়েল (যে নিজেই এই ভয়ংকর যুদ্ধ শুরু করেছে) আমেরিকাকে জোর করে একটি বড় আঞ্চলিক সংঘর্ষে টেনে আনতে চায়? এই ভোগান্তি সেই আঞ্চলিক যুদ্ধকে পারমাণবিক বিপর্যয়ে গড়াতে দেওয়ার জন্য পোহাতে হবে?’

সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং পারস্য উপসাগরে ৪০ হাজার মার্কিন সেনা আছেন। ম্যাকগ্রেগর সতর্ক করেছেন, ‘তাঁরা সহজ নিশানা হবে। ইরানের শাহেদ-১৩৬ ড্রোনের দাম ২০ হাজার ডলার আর আমেরিকার প্যাট্রিয়ট মিসাইলের প্রতিটি ইন্টারসেপ্টরের দাম ৪০ লাখ ডলার। হিসাব করুন। এই যুদ্ধে আমরা আমাদের মিসাইলের মজুত শেষ করে দেব আর আমেরিকানরা কফিনে করে বাড়ি ফিরবেন।’

অনেক সাবেক সামরিক ও গোয়েন্দাকর্মী এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাহলে ট্রাম্প কী করবেন? তিনি কি নেতানিয়াহুর শেষ চালে যোগ দেবেন, নাকি ভ্লাদিমির পুতিনের প্রস্তাবিত কূটনৈতিক সমাধান মেনে নেবেন?

ডন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত

জাভেদ নাকভি ডনের দিল্লি সংবাদদাতা

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল র র জন য কর ছ ল কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বাগেরহাটে চার আসন বহালের দাবিতে নতুন কর্মসূচি 

বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। আগামী শুক্র ও শনিবার (১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর) গণস্বাক্ষর সংগ্রহ এবং রবি ও সোমবার (২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর) জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে অর্ধদিবস অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতা এম এ সালাম নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এম এ সালাম বলেছেন, “বাগেরহাটের চারটি আসন অক্ষুণ্ন রাখার দাবিতে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা আছে, তবে জনগণের দাবি প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”

এর আগে আসন কমানোর প্রতিবাদে জেলা জুড়ে হরতাল, বিক্ষোভ ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। পাশাপাশি উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে।

ঢাকা/শহিদুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ