নাটকের আকাশে উজ্জ্বল এক তারার নাম তানিয়া বৃষ্টি। ২০১৫ সালে অভিনয়ের জগতে পা রেখেছেন। একটানা পথচলার দশ বছর পেরিয়ে আজ তিনি এক পরিপক্ব শিল্পী। এই এক দশকে তাঁর অভিনয়ের পরিধি ছুঁয়েছে বিভিন্ন ধরনের চরিত্র– নরম-কোমল প্রেমিকা, প্রতিবাদী নারী, প্রান্তিক জনপদের নারী, পরিবারের দায়িত্বশীল কন্যা কিংবা ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ের গল্প বলা এক মানুষ। প্রতিটি ভূমিকায় তিনি নিজেকে ভেঙে গড়েছেন, প্রতিবার যেন নতুন এক তানিয়া বৃষ্টিকে খুঁজে পাওয়া যায়।
তানিয়া বৃষ্টির অভিনয়ে একটি অনাড়ম্বর সৌন্দর্য আছে, যা সহজে দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তাঁর হাসি যেমন মিষ্টি, তেমনি চোখের ভাষায় খেলা করে এক অনুচ্চারিত বেদনা। অভিনয়ের ভেতরে যে আত্মনিবেদন, তা হয়তো খুব বেশি উচ্চকিত নয়, তবে গভীর। কখনও কখনও ক্যামেরার সামান্য এক দৃষ্টি বিনিময়েই বোঝা যায় দৃশ্যের ভেতরে তাঁর অনুরণন।
ঈদ মানেই উৎসব, আর সে উৎসবে তানিয়া বৃষ্টির নাটক যেন দর্শকের জন্য এক পরম প্রাপ্তি। গত ঈদেও তাঁর সরব উপস্থিতি ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো। ‘তাসের ঘর’, ‘মানুষ’, ‘ভালোবাসা অন্তহীন’, ‘পাষাণী’, ‘মনে পড়ে তোমাকে’ ও ‘ক্যাফেতে ভালোবাসা’– এই নাটকগুলো এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রচার হয়েছে ইউটিউব ও টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে। প্রতিটি নাটকে তিনি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে, ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দিয়েছেন। একটি নারীর মনের প্রতিটি স্তর যেন খুলে ধরেছেন তিনি অভিনয়ের পরতে পরতে।
এই জনপ্রিয়তার পথে কেবল ফুল বিছানো ছিল না। কিছু কাজ হয়তো তাঁকেও তৃপ্ত করেনি, কিছু চিত্রনাট্যে হয়তো গভীরতা ছিল না, তবু তিনি বলছেন, এখনকার দিনে গল্প বাছাইয়ে তিনি অনেক বেশি সচেতন। তাঁর কথায়, ‘গল্পের প্রতি আগের চেয়ে বহুগুণ বেশি মনোযোগী আমি। এখন মনে হয়, নিজেকে বারবার ভাঙার মতো চরিত্রই আমাকে টানে। শুধু ক্যামেরায় মুখ দেখানোর জন্য কাজ করতে রাজি নই। এখন যেকোনো নাটকে কাজ করার আগে গল্পটা ভালো হওয়া জরুরি মনে করি। কারণ দর্শক গল্পটাই আগে খোঁজেন। এরপর চরিত্রে নিজের অভিনয় করার সুযোগটা কেমন আছে তাও ভেবে দেখি।’ এই আত্মঅনুসন্ধানী মনোভাবই তাঁকে করে তুলছে আরও পরিণত, আরও আবেগপ্রবণ শিল্পী।
শুধু কাজের মাধ্যমে নয়, তানিয়া বৃষ্টি প্রায়ই থাকেন আলোচনায় ব্যক্তিগত নানা প্রসঙ্গেও। প্রেম, বিয়ে, সম্পর্ক সবকিছুতে থাকে ভক্তদের কৌতূহল। তবে তিনি নিজেই জানিয়েছেন, আপাতত ব্যক্তিগত জীবনের এসব পরিকল্পনা থেকে দূরে তিনি। বর্তমানে নিজের সব মনোযোগ অভিনয়ে, নিজেকে আরও শিল্পসম্মত করে গড়ে তোলায়।
বরাবরই নাটকের ছোটপর্দা থেকে সিনেমার বড়পর্দার প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল তাঁর। ক্যারিয়ারের শুরুতে সুযোগ পেয়ে যান আকরাম খানের ‘ঘাসফুল’ ছবিতে। এরপর বেশ কয়েকটি সিনেমার প্রস্তাব পেলেও নিয়মিত হননি বড়পর্দায়। ছোটপর্দাকে ঘিরে যাঁর স্বপ্ন। এখন তিনি চেষ্টা করছেন প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।
২০১২ সালে ‘ভিট চ্যানেল আই টপ মডেল’ দ্বিতীয় রানারআপের মধ্য দিয়ে শোবিজে আসেন তানিয়া বৃষ্টি। এরপরই রচিত হয় শুধুই তাঁর এগিয়ে চলার গল্প।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চর ত র
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনে দুবলার চরে রাস উৎসব শুরু আজ, এবারও নেই মেলার আয়োজন
বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী তিন দিনের রাস উৎসব। পূর্ণিমার তিথিতে পুণ্যস্নান ও পূজার মধ্য দিয়ে এই উৎসব উদ্যাপন করা হয়। এরই মধ্যে সাগরতীরে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তবে এবারও রাস উৎসবে কোনো মেলা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকছে না।
রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনে প্রবেশে কড়া বিধিনিষেধ জারি করেছে বন বিভাগ। শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরাই বন বিভাগের নির্ধারিত পাঁচটি রুট দিয়ে আলোরকোলে যেতে পারবেন। অন্য কোনো ধর্মাবলম্বী বা পর্যটকের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
খুলনার কয়রা উপজেলার কোবাদক ফরেস্ট স্টেশন থেকে আজ সকালে ৩০ জনের একটি পুণ্যার্থী দল রওনা হয় দুবলার চরের উদ্দেশে। দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা। তিনি বলেন, ‘৩৫ হাজার টাকায় ট্রলার ভাড়া করেছি। তিন দিনের বাজার-সদাই সব সঙ্গে নিয়েছি। ট্রলারেই রান্না ও খাওয়া চলবে। সবাই আনন্দ নিয়ে যাচ্ছেন। ভালোভাবে ফিরে এলেই আমাদের সফলতা।’
কয়রার মহারাজপুর এলাকার পুণ্যার্থী মনজিত কুমার রায় বলেন, ‘সুন্দরবনের বাটুলা নদী পেরিয়ে দুবলার চরের দিকে যাচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যে মোবাইলে (মুঠোফোন) নেটওয়ার্ক থাকবে না। তবে সবাই খুব আনন্দে আছে। পূর্ণিমায় জোয়ারের নোনাজলে স্নান করলে পাপমোচন হয় এই বিশ্বাস নিয়েই যাচ্ছি।’
কয়রার গুড়িয়াবাড়ী গ্রামের সুব্রত কুমার মণ্ডল বলেন, এক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছেন। মাঝারি আকারের ট্রলার ভাড়া করেছেন তিন দিনের জন্য। বাজার-সদাই সব করে সকালে রওনা দিয়েছেন ২০ জন পুণ্যার্থী নিয়ে।
রাস উৎসব উদ্যাপন কমিটি ও দুবলার চর ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন বলেন, ‘তিথি অনুযায়ী আজ থেকে পূজা শুরু হচ্ছে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে আলোরকোলে রাধা-কৃষ্ণের অস্থায়ী মন্দির তৈরি করা হয়েছে। ৫ নভেম্বর ভোরে সাগরের প্রথম জোয়ারে পুণ্যস্নান শেষে পুণ্যার্থীরা ফিরে যাবেন। উৎসব নির্বিঘ্ন করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, এ বছর শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরাই অংশ নিতে পারবেন। পর্যটকদের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। পুণ্যার্থীদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য পাঁচটি নির্ধারিত রুটে টহল দল মোতায়েন আছে। সবার জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে এবং চেকিং পয়েন্ট ছাড়া কোথাও নৌযান থামানো যাবে না। এ বছরও রাস উৎসব উপলক্ষে কোনো মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
রাস উৎসবের ইতিহাস সম্পর্কে জানান হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কয়রা উপজেলা সভাপতি অরবিন্দ মণ্ডল। তিনি বলেন, উনিশ শতকের শুরুর দিকে শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুসারী সাধু হরিভজন প্রথম দুবলার আলোরকোলে রাস পূর্ণিমার পূজা শুরু করেন। তিনি তাঁর ভক্তদের নিয়ে সাগরে পুণ্যস্নান করতেন। পরে ধীরে ধীরে এই ধর্মীয় পূজাই লোকসমাগমের মাধ্যমে এক বৃহৎ রাসমেলায় পরিণত হয়। তবে ২০১৭ সাল থেকে বন বিভাগের সিদ্ধান্তে মেলার আয়োজন বন্ধ রয়েছে।
সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন বলেন, অতীতে কিছু পুণ্যার্থী বা জেলের ছদ্মবেশে হরিণশিকারিরা বনে ঢোকার সুযোগ নিতেন, তাই এবার উৎসব চলাকালীন কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। গত ২৭ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত জেলে, পর্যটক ও সাধারণ মানুষের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে গত শনিবার রাতে সুন্দরবনের গহিনে ট্রলারে বন বিভাগের পতাকা লাগিয়ে হরিণ শিকারের চেষ্টা করার সময় সাতজনকে আটক করেছেন বনরক্ষীরা। তাঁদের কাছ থেকে ১০০টি ফাঁদ, ২টি ট্রলার, ১টি বন বিভাগের পতাকা ও ৪টি মাংস রান্নার পাতিল জব্দ করা হয়েছে।