জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত
Published: 20th, June 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গত ১৬ জুন প্রস্তাবিত বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া সভায় সভাপতিত্ব করেন।
সভায় জানানো হয়, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে প্রধান ছয়টি কমিশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করে সেসব কমিশন সরকারের নিকট সংস্কার প্রস্তাব দাখিল করেছে। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে সংবিধান সংশ্লিষ্ট ও বড় সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যের জন্য প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। তবে, যেসব সংস্কার প্রস্তাব প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় নিজ উদ্যোগেই বাস্তবায়ন করতে পারে, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ২৫ মে এ সংক্রান্ত একটি পত্র বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগে প্রেরণ করেছে।
সভায় জানানো হয়, পাঁচটি সংস্কার কমিশনের বাস্তবায়নযোগ্য মোট ১২১টি প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন কার্যক্রম গ্রহণের জন্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের নয়টি, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ৩৮টি, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের ৪৩টি, পুলিশ সংস্কার কমিশনের ১৩টি এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে বাছাই করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে গত ১৬ জুন অনুষ্ঠিত সভার প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি প্রস্তাব।
এই ১৮টি প্রস্তাবের মধ্যে আটটি অপেক্ষাকৃত সহজে বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। এগুলো হলো- মহাসড়কের পেট্রোল পাম্পগুলোতে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সংক্রান্ত; মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটকে ডায়নামিক করা; কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন; কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা; গণশুনানি; তথ্য অধিকার আইন; বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পুনর্গঠন; ডিজিটাল রূপান্তর এবং ই-সেবা।
আলোচনার ভিত্তিতে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ-
মহাসড়কের পেট্রোলপাম্পগুলোতে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ পেট্রোল পাম্প ও সিএনজি মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক করে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপনের বিষয়ে মতবিনিময় করে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের সব পেট্রোল ও সিএনজি পাম্পে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপনের সময়সীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করবে এবং জেলা প্রশাসনকে বাস্তবায়ন তদারকির অনুরোধ জানাবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও জেলা প্রশাসকদের এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করবে। জেলা প্রশাসন নিয়মিত পরিদর্শন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়কে অবহিত করবে।
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটকে ডায়নামিক করা
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এক সপ্তাহের মধ্যে সব মন্ত্রণালয়ের সাথে সভা করে ওয়েবসাইটে হালনাগাদ তথ্য আপলোড এবং নাগরিকদের মতামত প্রদানের অপশন রাখার বিষয়ে করণীয় ঠিক করবে। ন্যাশনাল ডাটা গভর্নেন্স ইন্টেরোপেরাবিলিটির কাজ আগামী দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ২ দিনের মধ্যে ম্যানেজিং কমিটি গঠন সংক্রান্ত নীতিমালা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৫ কর্মদিবসের মধ্যে ভেটিং সম্পন্ন করে তা ফেরত পাঠাবে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তা জারি করবে।
নীতিমালা জারির এক মাসের মধ্যে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনা
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, এনজিওবিষয়ক ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে এক সপ্তাহের মধ্যে সভা করে কমিউনিটি স্বাস্থ্য পরিচালনার কৌশল নির্ধারণ করবে।
সব সরকারি দপ্তরে নির্দিষ্ট বিরতিতে গণশুনানি নিশ্চিত করা
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক সপ্তাহের মধ্যে সব সেবা প্রদানকারী মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে গণশুনানির কৌশল ঠিক করে দেবে।
৬.
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ পর্যালোচনা ও সংশোধনের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ পর্যালোচনা ও সংশোধনের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে 'বাংলাদেশ পরিসংখ্যান কমিশন' হিসাবে রূপান্তর করা
বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় চলমান সংস্কার কার্যক্রমের সঙ্গে কমিশনের সুপারিশ সমন্বয় করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পুনর্গঠন করতে হবে। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এ বিষয়ে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
ডিজিটাল রূপান্তর সম্পন্ন করা এবং ই-গভর্নমেন্ট ও ই-সার্ভিস ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ বর্তমান সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত নাগরিক প্লাটফরমে সরকারের সব সেবা অন্তর্ভুক্ত করার সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে।
ন্যাশনাল ডাটা গভর্নেন্স ইন্টেরোপেরাবিলিটি সিস্টেম দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
আগামী এক মাসের মধ্যে সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তাদের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়কে অবহিত করবে।
সভাপতির বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, প্রতিটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ নিজস্ব বাস্তবায়ন টিম গঠন করবে এবং সময়াবদ্ধ কার্যক্রম গ্রহণ করবে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিবের তত্ত্বাবধানে গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের (জিআইইউ) আওতায় একটি তদারকি টিম থাকবে, যা মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও এই সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন তদারকি করবে।
পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সংস্কার কার্যক্রমও এগিয়ে নিতে নিয়মিত এ ধরনের সভা আয়োজন করা হবে।
এছাড়াও বিগত মাসগুলোতে সরকারের প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় ছোটবড় বহু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। মোট ৫৪টি মন্ত্রণালয়ে এক হাজার ৬১টি সংস্কার ও উন্নয়ন সংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল দ শ পর স খ য ন গ রহণ করব প রস ত ব ব যবস থ ন মন ত র জন য সরক র ন করত গভর ন ন করব র সময
এছাড়াও পড়ুন:
৩০০ আসনে এমপি প্রার্থী বাছাই করছে ইসলামী আন্দোলন
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে তিনশ আসনে প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম শুরু করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। প্রার্থী বাছাই করতে সারা দেশ সফর করছে কেন্দ্রীয় টিম।
এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার (২০ জুন) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৩টি আসনে প্রার্থী বাছাই উপলক্ষে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।
দিনভর তৃণমূল নেতাকর্মীদের (পুরুষ ও মহিলা ইউনিট উভয়) থেকে ব্যালটের মাধ্যমে মতামত নেওয়া হয়। তাদের মতামত অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করবে।
যাত্রাবাড়ীর কাজলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আওতাধীন ঢাকা-৫ আসন, দুপুর ২টায় সূত্রাপুরে ঢাকা-৬ এবং সন্ধ্যা ৬টায় বাসাব খেলার মাঠে ঢাকা-৯ আসনের বাছাই প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে বাছাই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর যুগ্ম মহাসচিব এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ আলম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) মুফতি দেলোয়ার হোসাইন সাকি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন, আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন, আলহাজ্ব এমএইচ মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা কেএম শরীয়াতুল্লাহ।
মাওলানা ইমতিয়াজ আলম তার পৃথক ৩টি বক্তব্যে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ব্যাপকভাবে সাংগঠনিক দাওয়াতি কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, বিগত আমলে আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি থেকে এখন দেশের মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মানুষ এখন কাঙ্খিত মুক্তির জন্য আদর্শিক পরিবর্তন চায়। আর ইসলামকে বিজয়ী করা ব্যাতিত দেশে স্থায়ী শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে না।
তিনি বলেন, “সন্ত্রাস, চাদাবাজ ও দখলদারমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে ঢাকাবাসীকে ইসলাম ও মানবতার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সব স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করতে হবে। ভবিষ্যতেও যাতে কেউ ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখতে না পারে সেজন্য ঢাকাবাসীসহ সর্বস্তরের দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি