খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার সীমান্তসংলগ্ন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে মো. হানিফ মিয়া (৪৫) নামের এক বাংলাদেশি গ্রাম পুলিশের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তিনি মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ ছিলেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুর আলম। তবে কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। ইউএনও বলেন, ঘটনার বিষয়টি জানার পর বিজিবি ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দুজন ব্যক্তি হানিফ মিয়াকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর তিনি নিখোঁজ ছিলেন। শুক্রবার বিকেলে ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তে এক ব্যক্তির মরদেহের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিহত ব্যক্তির স্ত্রী পারভিন আক্তার ভিডিওটি দেখে মরদেহটি তাঁর স্বামীর বলে শনাক্ত করেন। বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন তবলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ ওসমান আলী। তিনি জানান, যাঁরা হানিফ মিয়াকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজনের নাম বেলাল। তাঁকে খুঁজছে পুলিশ।

ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, হানিফ মিয়ার দুই হাত পেছন থেকে বাঁধা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হানিফ মিয়াসহ পাঁচ ব্যক্তি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ত্রিপুরায় প্রবেশ করলে বিএসএফ তাঁদের ধাওয়া দেয়। এতে অন্য চারজন ফিরে আসেন, কিন্তু হানিফ মিয়া আটক হন। পরে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে নিহত ব্যক্তির ছেলে ও শ্যালক পুলিশকে জানান, ভিডিওতে দেখা ব্যক্তিটি নিখোঁজ হানিফ মিয়া। মরদেহটি বর্তমানে ভারতের কোথায় আছে, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো.

আরেফিন জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, ‘হানিফ মিয়া তবলছড়ি ইউনিয়নের একজন গ্রাম পুলিশ সদস্য ছিলেন। ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে, তাঁকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। তাঁর মরদেহ এখনো ভারতের ভেতরে রয়েছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

‘স্ট্রোক করে মৃত্যুর’ ১০ মাস পর হত্যা মামলা, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কারাগারে

রংপুরে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের একটি হত্যা মামলাকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে আদালতের নিদেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার মাহমুদুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। গত আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে ৩ জুন রংপুর নগরের হাজিরহাট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন রংপুর নগরে রাধাকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা আমেনা বেগম (৬০)। এ মামলার ৫৪ নম্বর আসামি মাহমুদুল হক।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কর্মসূচি বানচাল, প্রয়োজনে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হত্যা করাসহ আন্দোলন প্রতিহত করার নির্দেশ দেন। রংপুরের স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসংগঠনের উল্লেখিত নেতা–কর্মীরা গত বছরের ২ আগস্ট তাঁর স্বামী ছমেস উদ্দিনকে বাড়ি–সংলগ্ন মুদিদোকাানের সামনে দেশি অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে শরীরে বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর জখম করেন। পরে তাঁকে রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাত আটটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তবে ছমেস উদ্দিনের কবরে টাঙানো সাইনবোর্ডের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। সেখানে ছমেস উদ্দিনকে ‘জাতীয় বীর’ উল্লেখ করে লেখা আছে, ‘২ আগস্ট ২০২৪ পুলিশ বিভাগের একটি দল তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করলে তিনি পুলিশ দেখে দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে যান। তিনি সেখানে স্ট্রোক করে মারা যান—তা নিশ্চিত করেন প্রাইম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক।’

মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ
রংপুর নগরের ধাপ ইঞ্জিনিয়ারপাড়া এলাকার বাসা থেকে গতকাল দুপুরে শিক্ষক মাহমুদুল হককে আটক করে মেট্রোপলিটন হাজিরহাট থানার পুলিশ। বিকেলে তাঁকে আদালতে তোলা হয় এবং বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মাহমুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান অভিযোগ করেন, যে হত্যা মামলায় মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি (ছমেস উদ্দিন) হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। মামলার বাদীর কাছ থেকে হাজিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। পরে ইচ্ছামতো আসামি করেছেন। আমার স্বামীকে মূলত পরিকল্পনা করে ফাঁসানোর জন্য এটা করা হয়েছে। এর পেছনে আছেন দুজন—একজন চিকিৎসক, অন্যজন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। আমি তাঁদের নাম এখন বলব না। এর আগেও ওই দুজন আমার স্বামীকে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন।’

মামলার এজাহারে দেওয়া আমিনা বেগমের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে ফোন ধরেন তাঁর ছেলে আশিকুর রহমান। আশিকুর বলেন, তাঁর বাবা ২ আগস্ট মারা গেছেন। ঘটনার সময় তিনি ছিলেন না। তবে যতটুকু শুনেছেন, ওই দিন প্রশাসনের কিছু লোক ছিলেন। আওয়ামী লীগের কিছু লোক ছিলেন।

আশিকুর বলেন, ‘আব্বু মুদিদোকান করেন। পুলিশ দেখে উনি দৌড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। ওখানে আওয়ামী লীগের লোক ছিলেন, প্রশাসনের লোক ছিলেন, তাঁরা পেছন থেকে ধাওয়া দেন। ওখানেই উনি পড়ে যান। তারপর কী হয়েছে, কী হয় নাই, আমি বলতে পারি না।’ মামলার আসামি মাহমুদুল হককে চেনেন কি না জানতে চাইলে আশিকুর বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী।

রাধাকৃষ্ণপুরের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রংপুর নগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সাবেক আমির নাছির উদ্দিনের বাড়ি রাধাকৃষ্ণপুর মৌলভীপাড়ায়। বৈষম্যবিরোধ ছাত্র আন্দোলনের সময় তাঁর বাড়িতে যান সাদাপোশাকের ৯ পুলিশ সদস্য। তিনি তথ্য পেয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ওই সময় মুদিদোকানি ছমেস উদ্দিন ভয়ে পালানোর চেষ্টা করেন এবং হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

এ সম্পর্কে নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই দিন ২ আগস্ট নয়; ২ জুলাই ছিল। তিনটি মোটরসাইকেলে সাদাপোশাকে ৯ পুলিশ সদস্য আমার বাড়ির দিকে আসেন। আগেভাগে জানতে পেরে আমি বাড়ি ছাড়ি। পরে রাতে জানতে পারি, ছমেস পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। মূলত এটা (মামলা) সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, সাজানো নাটক। ছমেস উদ্দিন হার্টের রোগী ছিলেন। মারা যাওয়ার কয়েক দিন আগে ঢাকায় তাঁর রিং লাগিয়ে আনা হয়েছিল।’

রংপুর নগরে রাধাকৃষ্ণপুরে ছমেস উদ্দিনের কবর। ১৩ জুন তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভূতের ট্রেন
  • যশোরে করোনায় আরো একজনের মৃত্যু
  • নাটোরে অটোরিকশায় বাসের ধাক্কা, নিহত ২
  • ইরান আক্রমণের মাস্টারমাইন্ড: হামাসের হামলার পর মোসাদকে নীরবে পাল্টে দিলেন যিনি
  • করোনা পরীক্ষার কিটের সংকট কেটেছে, স্বাস্থ্য বিভাগের নানা প্রস্তুতি
  • নওগাঁয় গণ অধিকার পরিষদের বহিষ্কৃত নেতার এনসিপিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা
  • ‘স্ট্রোক করে মৃত্যুর’ ১০ মাস পর হত্যা মামলা, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কারাগারে
  • বান্দরবানের দেবতাখুমে পর্যটক ভ্রমণে এক সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা
  • বাবার বিরুদ্ধে ছেলের মাদক সেবনের অভিযোগ, ভ্রাম্যমাণ আদালতে ছয় মাসের কারাদণ্ড