ইরানের জনগণের ওপর অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে
Published: 20th, June 2025 GMT
ইরানের জনগণের ওপর অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। এই বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরান নিজেকে রক্ষা করছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
আজ শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আব্বাস আরাগচি বলেন, জাতিসংঘ সনদের ২ (৪) অনুচ্ছেদ স্পষ্ট লঙ্ঘন করে ইরানের ওপর উসকানিমূলক আগ্রাসন চালিয়েছে ইসরায়েল। তিনি বলেন, ‘১৩ জুন প্রথম প্রহর থেকেই আমাদের জনগণের ওপর এই অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছুটিতে থাকা সামরিক বাহিনীর কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে বেআইনি ও অপরাধমূলক অভিযান চালায় ইসরায়েল।’
আরাগচি বলেন, ‘ইসরায়েলের আকস্মিক সশস্ত্র হামলায় আমার সহকর্মী ইরানিরা নিহত ও আহত হয়েছেন। আবাসিক এলাকা, সরকারি অবকাঠামো, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।’
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েলের হামলাকে গুরুতর যুদ্ধাপরাধ বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
চলমান কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই ইরানের ওপর হামলা চালানো হয়েছে উল্লেখ করে আব্বাস আরাগচি বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির নিয়ে উদ্ভূত বিষয়গুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য একটি আশাব্যঞ্জক চুক্তি করতে ১৫ জুন আমেরিকানদের সঙ্গে আমাদের দেখা করার কথা ছিল।’
এর আগেই হামলা চালানো হয় উল্লেখ করে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটি ছিল কূটনীতির বিশ্বাসঘাতকতা এবং আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার ভিত্তির ওপর এক নজিরবিহীন আঘাত।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। অন্যথায় জাতিসংঘ-ভিত্তিক সমগ্র আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা চলার মধ্যে ইউরোপে এই সফর করছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইসরায়েলের হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই সংঘাত কূটনৈতিকভাবে সমাধানের লক্ষ্যে আজ তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন ইউরোপের তিন দেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে চলমান এই সংকট কূটনৈতিকভাবে সমাধানের জন্য দুই সপ্তাহের সময় বেঁধে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্যে সমাধান না হলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানে হামলায় যোগ দেবে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ইরানে হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে হামলা শুরুর বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইরানের বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট।
মানবাধিকার পর্ষদের অধিবেশনে বক্তব্য দেওয়ার পর ইউরোপের তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন ইরানের পরররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকের আগে আলোচনার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ‘আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি কূটনৈতিক সমাধান অর্জনের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
আরও পড়ুনইরানের সঙ্গে পারমাণবিক বিষয়ে আগামীকাল আলোচনায় বসছেন ইউরোপের মন্ত্রীরা: রয়টার্সের প্রতিবেদন১৯ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পরর ষ ট রমন ত র র ষ ট রমন ত র র পরর ষ ট র ক টন ত ক ইসর য় ল ন র জন আম দ র র ওপর ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
৩৫৬ কোটি টাকা কি পানিতে গেল
দেশের ১৪টি জেলায় ডাকব্যবস্থাকে আধুনিক ও গতিশীল করার লক্ষ্যে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মেইল প্রসেসিং ও লজিস্টিক সার্ভিস সেন্টার (এমপিসি) নির্মাণ করেছিল। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এই সেন্টারগুলো কার্যত অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে, শতকোটি টাকার সরঞ্জাম পরিণত হয়েছে ‘ভাগাড়ে’। এভাবে জনগণের অর্থ অপচয়ের প্রকল্প খুবই হতাশাজনক। এ প্রকল্প কেন ব্যর্থ হলো, কারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এখন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২৮৯ কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনা হয়েছে, যার মধ্যে ৩৩ ধরনের যন্ত্রপাতি রয়েছে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের মতো প্রধান সেন্টারগুলোতেও অনেক সরঞ্জাম এখনো বাক্সবন্দী বা অযত্নে পড়ে আছে। মেটাল ডিটেক্টর, আর্চওয়ে গেট, ট্রলি, এক্স-রে গুডস—সবকিছুই অব্যবহৃত। ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতেও একই চিত্র। ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, গোপালগঞ্জ, চট্টগ্রাম—সবখানেই কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অলস পড়ে আছে, অনেকগুলো আবার নষ্ট, যা পচনশীল পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ একটি সরঞ্জাম চিলার চেম্বার, সেটিরও কোনো ব্যবহার নেই।
সার্ভিস সেন্টারগুলো চালু না হওয়ার কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে সফটওয়্যারের অভাব এবং দক্ষ ও পর্যাপ্ত জনবলের অভাব। স্মার্ট পোস্টেজ সলিউশন (এসপিএস) চালুর জন্য সফটওয়্যার না দেওয়ায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা ৪২০ সেট হার্ডওয়্যারও অব্যবহৃত। এমনকি এই এসপিএস প্যাকেজ এমপিসি প্রকল্পের অধীনে কেনার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, কারণ এটি মূলত ডাকঘরের পার্সেল ও ই-কমার্স সেবার জন্য কেনা হয়েছিল। এটি কি কেবলই ভুল পরিকল্পনা, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য কাজ করেছে? সম্ভাব্যতা যাচাই ও চাহিদার মূল্যায়ন না করায় এ প্রকল্পটির এমন বেহাল পরিণতি হলো। এখানে সরঞ্জাম কেনার পেছনে বাণিজ্যিক স্বার্থ জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এটি একটি গুরুতর অভিযোগ, যার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি।
ডাক বিভাগের ওয়েবসাইটে এমপিসি সম্পর্কে কোনো তথ্য না থাকা এবং প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট জবাব না পাওয়ার বিষয়টিতে স্পষ্ট হয়, এখানে জবাবদিহির চরম অভাব ছিল। প্রকল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাঁরাই এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের কাছে অবশ্যই জানতে চাওয়া হোক কেন বিপুল ব্যয়ে প্রকল্পটি গ্রহণ করার পর এর বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করা হলো না? কেন অদরকারি সরঞ্জাম কেনা হলো?
জনগণের টাকার এমন অপচয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অবিলম্বে এই এমপিসি প্রকল্পের একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। কারা এই অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী, কেন শতকোটি টাকার সরঞ্জাম অকেজো হয়ে পড়ে আছে এবং কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব, তা খুঁজে বের করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।