Samakal:
2025-08-13@01:25:09 GMT

প্লাস্টিকখেকো ছত্রাক

Published: 27th, June 2025 GMT

প্লাস্টিকখেকো ছত্রাক

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সামুদ্রিক এক ছত্রাকের সন্ধান পেয়েছেন, যা প্লাস্টিক খেয়ে ফেলে; অর্থাৎ এটি প্লাস্টিককে ভেঙে প্রোটিনসমৃদ্ধ জৈব পদার্থে রূপান্তর করতে পারে। অন্ধকার ঘরের ভেতর, শুধু প্লাস্টিক আর কিছুটা সময় দিলে এটি তার কাজ শুরু করে দেয়। বিশেষভাবে চিহ্নিত এই ছত্রাকের নাম ‘অ্যাসপারগিলাস টেরিয়াস’। এটি প্লাস্টিক পুরোপুরি খেয়ে প্রোটিনসমৃদ্ধ ফাঙ্গাল বায়োমাসে রূপান্তর করে; যা ভবিষ্যতে খাবার বা পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহারযোগ্য হতে পারে।
অধ্যাপক আলি আব্বাসের নেতৃত্বে গবেষক দল সামুদ্রিক পরিবেশ থেকে নতুন এ ছত্রাক শনাক্ত করেছে, যা পরিবেশে সবচেয়ে জটিল ও পুনর্ব্যবহারযোগ্যতা কম এমন প্লাস্টিক–পলিপ্রোপিলিন (পিপি৫) ভাঙতে সক্ষম। পলিপ্রোপিলিন সাধারণত খাবারের মোড়ক, বোতলের ঢাকনা বা কাপড়ের হ্যাঙ্গারে ব্যবহৃত হয়। এটি বিশ্বব্যাপী বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অন্যতম চ্যালেঞ্জ। 
গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলে অভূতপূর্ব অগ্রগতি দেখা গেছে। অধ্যাপক আব্বাস জানান, ‘এই সামুদ্রিক ছত্রাক ২০২৩ সালে আমরা যেসব স্থলভিত্তিক ছত্রাক শনাক্ত করেছিলাম, তাদের চেয়েও বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।’
২০২৩ সালে গবেষকরা ৩০ দিনে পলিপ্রোপিলিনের ২১ শতাংশ ভাঙতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে আরেকটি গবেষণায় ৯০ দিনে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত ভাঙার নজির পাওয়া যায়। যেখানে অন্যান্য প্লাস্টিক-ভক্ষণকারী অণুজীবের কাজ করতে মাস বা বছর লেগে যায়, সেখানে ‘অ্যাসপারগিলাস টেরিয়াস’ মাত্র ১৪০ দিনের কম সময়ে সেই কাজ সম্পন্ন করতে পারে। আলো বা বাতাস ছাড়াই কাজ করার ফলে এটি বন্ধ জায়গা। যেমন ল্যান্ডফিল, ভূগর্ভস্থ বায়োরিঅ্যাক্টর বা সাবমেরিনের মতো পরিবেশে ব্যবহারযোগ্য হতে পারে।
প্লাস্টিক নিজ থেকেই ভাঙে না। গবেষণার শুরুতে তা প্রাক-প্রক্রিয়াজাত করা হয়–অতিবেগুনি রশ্মি বা তাপের মাধ্যমে; যা প্রাকৃতিক ক্ষয়ের মতো পরিবেশ তৈরি করে। এরপর সেই প্লাস্টিক ছত্রাকসমৃদ্ধ তরল দ্রবণে ডুবিয়ে রাখা হয়। সেখানে ছত্রাকের তৈরি প্রাকৃতিক এনজাইম পলিপ্রোপিলিনের জটিল অণু ভাঙতে শুরু করে।
অধ্যাপক আব্বাস বলেন, ‘ছত্রাক এমন প্রাকৃতিক এনজাইম তৈরি করে, যা জটিল উপাদান যেমন প্লাস্টিক ভাঙতে পারে। আমাদের শুধু তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে হয়।’ এই পদ্ধতিতে অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রায় কাজ হয়, ফলে শক্তি সাশ্রয় হয় এবং এটি বড় পরিসরে শিল্প প্রয়োগের জন্য উপযোগী।
কেন পলিপ্রোপিলিন নিয়ে এত উদ্বেগ
অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবহৃত প্লাস্টিক মোড়কের প্রায় ২০ শতাংশ পলিপ্রোপিলিন। এর মাত্র ৮ শতাংশ পুনর্ব্যবহৃত হয়। পেছনের মূল কারণ এর জটিল রাসায়নিক গঠন এবং ব্যবহারের পর সৃষ্ট দূষণ।
এই আবিষ্কার ভবিষ্যতের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। কল্পনা করুন–প্লাস্টিকের বর্জ্য থেকে সাবমেরিন, স্পেস স্টেশন কিংবা দুর্গম সামরিক ঘাঁটিতে খাবারের উপাদান তৈরি হচ্ছে; বা স্রেফ সমুদ্র আর মাটির নিচে জমা প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ জৈব বায়োমাস।
তবে এই গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বড় পরিসরে এটি প্রয়োগ করার আগে বিভিন্ন নিরাপত্তা মানদণ্ড পেরিয়ে যেতে হবে। প্রথমবারের মতো আমরা প্লাস্টিককে কেবল বর্জ্য হিসেবে নয়; বরং একটি উপযোগী কাঁচামাল হিসেবে ভাবতে পারি। একটি গৃহস্থালির আবর্জনার স্তূপ থেকে জন্ম নেওয়া ছত্রাক হয়তো এবার পৃথিবীর প্লাস্টিক সংকটের সমাধান দিতে পারে।
এই আবিষ্কারকে ঘিরে যতই আশাবাদ থাকুক, অধ্যাপক আব্বাস মনে করিয়ে দেন, এটি সার্বিক সমাধান নয়; বরং বড় একটি কৌশলের অংশমাত্র। তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন কমানো এবং চক্রাকার অর্থনীতি চালু করাই প্রধান লক্ষ্য থাকা উচিত।
সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এটি প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে এক কার্যকর সমাধানে পরিণত হতে পারে। এই আবিষ্কার পরিবেশগত জৈবপ্রযুক্তির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে সামুদ্রিক ছত্রাক হতে পারে বিশ্বব্যাপী দূষণবিরোধী লড়াইয়ের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পল প র প ল ন ব যবহ র পর ব শ বর জ য

এছাড়াও পড়ুন:

জিরো ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল আইনত দণ্ডনীয়: এনবিআর

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে সব কয়টি ঘর ‘শূন্য’ হিসেবে পূরণ করে রিটার্ন দাখিল করা যায় বলে ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘জিরো রিটার্ন’ দাখিল বিষয়ক কিছু ভ্রান্ত ধারণার পোস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নজরে এসেছে। 

এসব ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে কোনো কোনো করদাতা তাঁদের আয়কর রিটার্নে আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের বিষয়ে অসত্য ঘোষণা প্রদান করে আসছেন। এসব জিরো ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল আইনত দণ্ডনীয় বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর।

রবিবার (১০ আগস্ট) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জানায়, করদাতাদের জানানো যাচ্ছে যে, আয়কর আইন, ২০২৩ অনুসারে ‘জিরো রিটার্ন’ নামে কোনো প্রকার রিটার্ন দাখিলের বিধান নেই। আয়কর আইন অনুসারে একজন করদাতাকে তাঁর প্রকৃত আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায় অবশ্যই সঠিকভাবে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করতে হবে।

করদাতার প্রকৃত আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায় প্রদর্শন না করে এর কোন একটি শূন্য অথবা সবগুলো তথ্য শূন্য হিসেবে প্রদর্শন করা সম্পূর্ণ বে-আইনি এবং এটি একটি ফৌজদারী অপরাধ। করদাতা কর্তৃক দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নে তাঁর আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায় সম্পর্কিত সঠিক তথ্য প্রদর্শন না করে মিথ্যা বা অসত্য তথ্য প্রদান করলে আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৩১২ ও ৩১৩ অনুসারে করদাতাকে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদানের বিধান রয়েছে।

একজন করদাতার আয়, ব্যয়, সম্পদ বা দায় সংক্রান্ত বিষয়ে রিটার্নে সঠিক ঘোষণা প্রদান করা একজন করদাতার পবিত্র নাগরিক ও আইনি দায়িত্ব। করদাতার প্রকৃত আয়ের পরিমাণ আইনানুযায়ী করযোগ্য না হলে তাঁকে কোনো কর পরিশোধ করতে হবে না। তবে কর প্রদেয় না হলেও সঠিক তথ্য-উপাত্ত প্রদর্শন না করে শূন্য আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায় দেখিয়ে শুন্য বা জিরো রিটার্ন দাখিল করার কোন সুযোগ আয়কর আইনে নেই।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করে যে, করদাতা দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে আয়কর রিটার্নে প্রকৃত আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায় প্রদর্শন করে দেশের উন্নয়নে গর্বিত অংশীদার হবেন। একইসাথে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত প্রতারনামূলক জিরো রিটার্নের ফাঁদে পা না দিয়ে নিজেকে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে সুরক্ষিত রাখবেন।

ঢাকা/নাজমুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাবি উপাচার্যের বাসভবনে সাবেক ছাত্রদল নেতার তালা
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে তালা দিলেন ছাত্রদলের সাবেক নেতা
  • জবিতে র‍্যাগিংয়ের নামে ‘অমানবিক’ নির্যাতনের অভিযোগ
  • ৯ দাবিতে প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদে
  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘র‍্যাগিংয়ের’ জন্য তিন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার, চারজনকে ক্লাস থেকে বিরত থাকার নির্দেশ
  • রাউজানে দেড় শ বছরের পুরোনো পুকুর ভরাট, জনপ্রতিনিধিসহ ৫ জন কারাগারে
  • গাজায় উড়োজাহাজ থেকে ফেলা ত্রাণের বাক্সের নিচে চাপা পড়ে কিশোর নিহত
  • জিরো ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল আইনত দণ্ডনীয়: এনবিআর