Samakal:
2025-11-03@18:34:03 GMT

প্লাস্টিকখেকো ছত্রাক

Published: 27th, June 2025 GMT

প্লাস্টিকখেকো ছত্রাক

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সামুদ্রিক এক ছত্রাকের সন্ধান পেয়েছেন, যা প্লাস্টিক খেয়ে ফেলে; অর্থাৎ এটি প্লাস্টিককে ভেঙে প্রোটিনসমৃদ্ধ জৈব পদার্থে রূপান্তর করতে পারে। অন্ধকার ঘরের ভেতর, শুধু প্লাস্টিক আর কিছুটা সময় দিলে এটি তার কাজ শুরু করে দেয়। বিশেষভাবে চিহ্নিত এই ছত্রাকের নাম ‘অ্যাসপারগিলাস টেরিয়াস’। এটি প্লাস্টিক পুরোপুরি খেয়ে প্রোটিনসমৃদ্ধ ফাঙ্গাল বায়োমাসে রূপান্তর করে; যা ভবিষ্যতে খাবার বা পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহারযোগ্য হতে পারে।
অধ্যাপক আলি আব্বাসের নেতৃত্বে গবেষক দল সামুদ্রিক পরিবেশ থেকে নতুন এ ছত্রাক শনাক্ত করেছে, যা পরিবেশে সবচেয়ে জটিল ও পুনর্ব্যবহারযোগ্যতা কম এমন প্লাস্টিক–পলিপ্রোপিলিন (পিপি৫) ভাঙতে সক্ষম। পলিপ্রোপিলিন সাধারণত খাবারের মোড়ক, বোতলের ঢাকনা বা কাপড়ের হ্যাঙ্গারে ব্যবহৃত হয়। এটি বিশ্বব্যাপী বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অন্যতম চ্যালেঞ্জ। 
গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলে অভূতপূর্ব অগ্রগতি দেখা গেছে। অধ্যাপক আব্বাস জানান, ‘এই সামুদ্রিক ছত্রাক ২০২৩ সালে আমরা যেসব স্থলভিত্তিক ছত্রাক শনাক্ত করেছিলাম, তাদের চেয়েও বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।’
২০২৩ সালে গবেষকরা ৩০ দিনে পলিপ্রোপিলিনের ২১ শতাংশ ভাঙতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে আরেকটি গবেষণায় ৯০ দিনে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত ভাঙার নজির পাওয়া যায়। যেখানে অন্যান্য প্লাস্টিক-ভক্ষণকারী অণুজীবের কাজ করতে মাস বা বছর লেগে যায়, সেখানে ‘অ্যাসপারগিলাস টেরিয়াস’ মাত্র ১৪০ দিনের কম সময়ে সেই কাজ সম্পন্ন করতে পারে। আলো বা বাতাস ছাড়াই কাজ করার ফলে এটি বন্ধ জায়গা। যেমন ল্যান্ডফিল, ভূগর্ভস্থ বায়োরিঅ্যাক্টর বা সাবমেরিনের মতো পরিবেশে ব্যবহারযোগ্য হতে পারে।
প্লাস্টিক নিজ থেকেই ভাঙে না। গবেষণার শুরুতে তা প্রাক-প্রক্রিয়াজাত করা হয়–অতিবেগুনি রশ্মি বা তাপের মাধ্যমে; যা প্রাকৃতিক ক্ষয়ের মতো পরিবেশ তৈরি করে। এরপর সেই প্লাস্টিক ছত্রাকসমৃদ্ধ তরল দ্রবণে ডুবিয়ে রাখা হয়। সেখানে ছত্রাকের তৈরি প্রাকৃতিক এনজাইম পলিপ্রোপিলিনের জটিল অণু ভাঙতে শুরু করে।
অধ্যাপক আব্বাস বলেন, ‘ছত্রাক এমন প্রাকৃতিক এনজাইম তৈরি করে, যা জটিল উপাদান যেমন প্লাস্টিক ভাঙতে পারে। আমাদের শুধু তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে হয়।’ এই পদ্ধতিতে অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রায় কাজ হয়, ফলে শক্তি সাশ্রয় হয় এবং এটি বড় পরিসরে শিল্প প্রয়োগের জন্য উপযোগী।
কেন পলিপ্রোপিলিন নিয়ে এত উদ্বেগ
অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবহৃত প্লাস্টিক মোড়কের প্রায় ২০ শতাংশ পলিপ্রোপিলিন। এর মাত্র ৮ শতাংশ পুনর্ব্যবহৃত হয়। পেছনের মূল কারণ এর জটিল রাসায়নিক গঠন এবং ব্যবহারের পর সৃষ্ট দূষণ।
এই আবিষ্কার ভবিষ্যতের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। কল্পনা করুন–প্লাস্টিকের বর্জ্য থেকে সাবমেরিন, স্পেস স্টেশন কিংবা দুর্গম সামরিক ঘাঁটিতে খাবারের উপাদান তৈরি হচ্ছে; বা স্রেফ সমুদ্র আর মাটির নিচে জমা প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ জৈব বায়োমাস।
তবে এই গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বড় পরিসরে এটি প্রয়োগ করার আগে বিভিন্ন নিরাপত্তা মানদণ্ড পেরিয়ে যেতে হবে। প্রথমবারের মতো আমরা প্লাস্টিককে কেবল বর্জ্য হিসেবে নয়; বরং একটি উপযোগী কাঁচামাল হিসেবে ভাবতে পারি। একটি গৃহস্থালির আবর্জনার স্তূপ থেকে জন্ম নেওয়া ছত্রাক হয়তো এবার পৃথিবীর প্লাস্টিক সংকটের সমাধান দিতে পারে।
এই আবিষ্কারকে ঘিরে যতই আশাবাদ থাকুক, অধ্যাপক আব্বাস মনে করিয়ে দেন, এটি সার্বিক সমাধান নয়; বরং বড় একটি কৌশলের অংশমাত্র। তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন কমানো এবং চক্রাকার অর্থনীতি চালু করাই প্রধান লক্ষ্য থাকা উচিত।
সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এটি প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে এক কার্যকর সমাধানে পরিণত হতে পারে। এই আবিষ্কার পরিবেশগত জৈবপ্রযুক্তির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে সামুদ্রিক ছত্রাক হতে পারে বিশ্বব্যাপী দূষণবিরোধী লড়াইয়ের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পল প র প ল ন ব যবহ র পর ব শ বর জ য

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের বেতন বাড়াল বিসিবি

জাতীয় দলের নারী ক্রিকেটারদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আজ মিরপুরে বিসিবি পরিচালকদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এত দিন ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকা মেয়েরা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মাসিক বেতন পেতেন। তাঁদের বেতন ৪০ হাজার টাকা বাড়ানো হচ্ছে। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে থাকা ক্রিকেটাররা পেতেন ১ লাখ টাকা করে বেতন। তাঁরা এখন থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বেতন পাবেন।

‘সি’ ক্যাটাগরিতে থাকা ক্রিকেটারদের বেতন ৭০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫ হাজার টাকা করা হয়েছে আর ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ৬০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া জাতীয় দলের অধিনায়কদের জন্য ৩০ হাজার ও সহ-অধিনায়কদের জন্য ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া নারী ক্রিকেটারদের নতুন চুক্তিতে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে আছেন তিন ক্রিকেটার—নিগার সুলতানা, নাহিদা আক্তার ও শারমিন আক্তার। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে আছেন ফারাজনা হক, রিতু মনি, ফাহিমা খাতুন, মারুফা আক্তার, রাবেয়া খান ও সোবহানা মোস্তারি। ‘সি’ ক্যাটাগরিতে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে আছেন স্বর্ণা আক্তার।

আরও পড়ুনবিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ না জিতলেও ৩ কোটি টাকা পাবেন নিগাররা৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘ডি’ ক্যাটাগরিতে আছেন সুমাইয়া আক্তারর, ফারিহা ইসলাম, রুবাইয়া হায়দার, সানজিদা আক্তার, নিশিতা আক্তার। এই চুক্তির বাইরে থাকা ক্রিকেটারদের কেউ জাতীয় দলে এলে মাসে ৬০ হাজার টাকা বেতন পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ