ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা ও অনুভূতিতে আঘাত হলে কঠোর ব্যবস্থা
Published: 2nd, July 2025 GMT
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বর্তমান সরকার সব সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কাজ করছে। কোনো দুর্বৃত্ত যদি ধর্মীয় উপাসনালয়ের ক্ষতি করে কিংবা ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানে, তবে তাকে রেহাই দেওয়া হবে না। রাষ্ট্র এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার শহরের কৃষ্ণানন্দধাম মন্দিরে ‘মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের’ ষষ্ঠ পর্যায়ের কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা সংক্ষিপ্ত আলোচনায় এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সততা, ন্যায়নিষ্ঠা ও ভালোবাসা—এই মূল্যবোধ সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে। এই দেশ সব ধর্মের মানুষের, উন্নয়নেও সবার অবদান দরকার।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে ধর্ম উপদেষ্টা মন্দিরে পৌঁছালে সনাতন ধর্মাবলম্বীর লোকেরা উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি ও ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নেন। এরপর উপদেষ্টা মন্দিরের শিক্ষা কার্যক্রম ঘুরে দেখেন এবং শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন।
আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার ট্রাস্টি পরিমল কান্তি শীল, ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক রণজিৎ বাড়ৈ, কৃষ্ণানন্দধাম পরিচালনা কমিটির সভাপতি দুলাল চন্দ্র দে প্রমুখ।
এ সময় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, কৃষ্ণানন্দধাম পরিচালনা কমিটি ও সনাতন ধর্মের নেতারাসহ শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মন দ র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় গণহত্যায় মাইক্রোসফটসহ ৬০ কোম্পানি
গাজায় ইসরায়েলের চালমান গণহত্যায় মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজনের মতো কোম্পানির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সেসকা আলবানিজ। এক প্রতিবেদনে তিনি ৬০টিরও বেশি কোম্পানির নাম উল্লেখ করেন, যার মধ্যে অস্ত্র প্রস্তুতকারক ও প্রযুক্তি কোম্পানিও রয়েছে। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক কর্মকাণ্ডে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে। আলবানিজ গাজায় আগ্রাসনকে ‘গণহত্যা অভিযান’ বলে বর্ণনা করেন।
ইতালির মানবাধিকার আইনজীবী আলবানিজ অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত। তিনি বিভিন্ন দেশ, মানবাধিকার সংস্থা, কোম্পানি ও শিক্ষাবিদদের ২০০টিরও বেশি খসড়া তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেন। গত সোমবার রাতে প্রকাশিত ২৭ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে কোম্পানিগুলোকে ইসরায়েলের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করা ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে জড়িত নির্বাহীদের জবাবদিহির আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে গতকাল বুধবার দ্য নিউ আরব অনলাইন জানায়, যখন গাজায় জীবন ধ্বংস হচ্ছে বা পশ্চিমতীরে নিপীড়ন বাড়ছে, তখন এ প্রতিবেদন দেখায়– কেন ইসরায়েলের গণহত্যা অব্যাহত আছে। এর কারণ, এটি অনেকের জন্য লাভজনক। ফ্রান্সেসকা আলবানিজ লিখেছেন, তিনি করপোরেট সংস্থাগুলোকে ‘ইসরায়েলের বর্ণবাদ ও সামরিকবাদের সঙ্গে আর্থিকভাবে আবদ্ধ’ বলে অভিযুক্ত করেছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রযুক্তি মহারথি অ্যালফাবেট (গুগলের মূল কোম্পানি), অ্যামাজন, মাইক্রোসফট ও আইবিএম গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ক্ষেত্রে ইসরায়েলের হয়ে নজরদারিতে মূল ভূমিকা পালন করছে। ইসরায়েলকে সহায়তাকারীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন ও লিওনার্দোর মতো অস্ত্র প্রস্তুতকারী কোম্পানি রয়েছে। তাদের দেওয়া অস্ত্র গাজায় ব্যবহৃত হয়েছে। তালিকায় ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী ক্যাটারপিলার ও হুন্দাইয়ের নামও আছে। এ কোম্পানিগুলোর সরঞ্জাম ফিলিস্তিনিদের সম্পত্তি ধ্বংসে ভূমিকা রাখছে।
লকহিড মার্টিনের এক মুখপাত্র বলেন, ‘বিদেশি সামরিক বিক্রয়ের বিষয়টি সরকার থেকে সরকার লেনদেন। এ বিক্রয় সম্পর্কে আলোচনার সমাধান মার্কিন সরকারই সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পারে।’ অন্য কোম্পানিগুলো এ নিয়ে রয়টার্সকে কিছু বলেনি। জেনেভায় ইসরায়েলের মিশন বলছে, আলবানিজের প্রতিবেদনটি ‘আইনত ভিত্তিহীন, মানহানিকর ও তার অফিসের স্পষ্ট অপব্যবহার।’ আর যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে আলবানিজের নিন্দা জানাতে ও তাঁকে অপসারণের আহ্বান জানাতে বলেছে। তারা আরও বলেছে, এখন পর্যন্ত এ ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে আলবানিজ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রচারণা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।
যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ইসরায়েল
শর্তের বিনিময়ে গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েল সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানান, গাজায় যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত করার জন্য ইসরায়েল প্রয়োজনীয় শর্তাবলি মেনে নিয়েছে। ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির সময় যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শেষ করার জন্য সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করবে।
গতকাল বুধবার বিবিসি জানায়, যুদ্ধবিরতির শর্ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে জিম্মি মুক্তি অন্যতম শর্ত হিসেবে থাকতে পারে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে বড় বাধা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি। ইসরায়েল গাজাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেই যুদ্ধবিরতি চাইছে। আর হামাস বলছে, যুদ্ধ বন্ধের পাশাপাশি সব সেনা সরিয়ে নিতে হবে। ট্রাম্প লিখেছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা কাতার ও মিসরীয়রা এ চূড়ান্ত প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করবে। আশা করি, হামাস চুক্তিটি গ্রহণ করবে। না করলে পরিস্থিতি ভালো হবে না; ক্রমাগত খারাপের দিকে যাবে।
ইসরায়েল চুক্তির শর্তাবলিতে সম্মত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেনি। আর হামাসের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, যুদ্ধ শেষ হলে তারা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে ‘প্রস্তুত’। হামাস কর্মকর্তা তাহের আল-নুনু বলেন, যদি যুদ্ধ শেষ করার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্টভাবে পূরণ করা হয়, অথবা যদি তা সম্পূর্ণরূপে শেষের দিকে নিয়ে যায়, তাহলে হামাস যে কোনো প্রস্তাবে সম্মত হতে প্রস্তুত। গাজায় এখনও ৫০ জনেরও বেশি জিম্মি আছেন, যাদের ২০ জনেরও মতো জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।
অনাহারকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার সুযোগ বন্ধ হতে যাচ্ছে: ডব্লিউএফপি
ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধের মুখে গাজায় অনাহারকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। সংস্থাটির আঞ্চলিক পরিচালক সামের আব্দেল জাবের বলেন, উপত্যকার খাদ্য সংকটকে দূর করতে তাদের তিনটি বিষয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। প্রথমত, বিভিন্ন পয়েন্ট ও পথ দিয়ে সব পরিবারের কাছে খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে তাদের কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। তৃতীয়ত, অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে যেটা বেশি প্রয়োজন, তা হলো– টেকসই যুদ্ধবিরতি।
চার সপ্তাহে ত্রাণ নিয়ে নিহত ৬ শতাধিক
গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে গত পাঁচ সপ্তাহে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর গুলিতে ৬ শতাধিক নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ত্রাণ সরবরাহ কেন্দ্র কথিত হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনে গিয়ে তারা গুলিবিদ্ধ হন। জাতিসংঘ এসব ত্রাণকেন্দ্রকে ‘মরণফাঁদ’ বলে বর্ণনা করেছে। আলজাজিরা জানায়, গতকাল বুধবার এক দিনে গাজায় আরও ৪৩ জন নিহত হয়েছেন।