‘এটা কোনো কথা হলো!’ দিয়োগো জোতার মৃত্যুতে এভাবেই শোকবার্তা শুরু করেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। পর্তুগাল জাতীয় দলে একসঙ্গে খেলেছেন ছয় বছর। গত মাসেই দেশের হয়ে জিতেছেন উয়েফা নেশনস লিগের ট্রফি। এমন একজন সতীর্থের আচমকা বিদায়ে রোনালদো স্বাভাবিকভাবেই হতচকিত।
স্পেনে সড়ক দুর্ঘটনায় ভাই আন্দ্রেসহ জোতার মৃত্যু কতটা হতবিহ্বল করে দিয়েছে, সেটা ফুটে উঠেছে রোনালদোর ইনস্টাগ্রাম বার্তায়, ‘এই তো সেদিন আমরা একসঙ্গে ছিলাম জাতীয় দলে, এই তো সেদিন তোমার বিয়ে হলো। তোমার পরিবার, স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। আমি তাদের জন্য পৃথিবীর সব শক্তি কামনা করছি। আমি জানি, তুমি সব সময় তাদের সঙ্গেই থাকবে। শান্তিতে বিশ্রাম নাও, দিয়োগো ও আন্দ্রে। আমরা সবাই তোমাদের ভীষণ মিস করব।’
মাত্র ২৮ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া জোতাকে নিয়ে শোকে মুহ্যমান এখন গোটা বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব উলভারহ্যাম্পটনে জোতার সাবেক সতীর্থ রুবেন নেভেস ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘মানুষ বলে, আমরা নাকি কাউকে তখনই হারাই, যখন তাকে ভুলে যাই। আমি তোমাকে কোনো দিন ভুলব না।’
এই ‘না ভোলা’ কিংবা ‘মিস করা’র কথা উঠে এসেছে আরও অনেকের শোকবার্তায়। লিভারপুলে চার মৌসুম জোতার কোচ ছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। এই জার্মান কোচ ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘এটি এমন এক মুহূর্ত, যাতে আমি নিজেই ভেঙে পড়েছি! এত কিছুর নিশ্চয়ই কোনো বড় উদ্দেশ্য আছে, কিন্তু আমি সেটা দেখতে পাচ্ছি না। দিয়োগো ও তার ভাই আন্দ্রের মৃত্যুর খবর শুনে আমার হৃদয় ভেঙে গেছে।’
লিভারপুলে জোতার সতীর্থ হিসেবে খেলা উরুগুয়ের দারউইন নুনিয়েজ স্মরণ করেছেন এভাবে, ‘এই যন্ত্রণার কোনো সান্ত্বনার ভাষা নেই। আমি তোমাকে চিরকাল মনে রাখব। তোমার হাসিমুখ, মাঠে ও মাঠের বাইরে এক অসাধারণ সঙ্গী হিসেবে।’
পর্তুগালের হয়ে দুটি নেশনস লিগ শিরোপা জেতা জোতা খেলোয়াড় হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়িয়েছেন লিভারপুলের হয়ে। সর্বশেষ পাঁচ মৌসুমে ইংলিশ ক্লাবটিতে ছিলেন এই ফরোয়ার্ড। জোতা সেই ফরোয়ার্ডদের একজন, যাঁকে সেন্টার ফরোয়ার্ড, পুরোদস্তুর স্ট্রাইকার, উইঙ্গার, ফলস নাইন অথবা ইনসাইড ফরোয়ার্ড—যেকোনো ভূমিকায় খেলাতে পারেন কোচ।
সাধারণত ডান পায়ে খেললেও দুই পায়েই শক্তিশালী ছিলেন জোতা। বিশেষ করে প্রতিপক্ষের মনে ভয় ধরানো ফিনিশিং, অদম্য গতি এবং ড্রিবলিং–সামর্থ্যের জন্য আলাদাভাবে নজর কেড়েছিলেন। সব মিলিয়ে লিভারপুলের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে ১২৩টিসহ মোট ১৮২ ম্যাচ খেলেছেন জোতা। গোল করেছেন ৬৫টি।
২০১৪ সালে পর্তুগিজ ক্লাব পাকোস দে ফেরেইরার হয়ে শীর্ষ পর্যায়ে ক্লাব ক্যারিয়ার শুরু হয় জোতার। লিভারপুলের আগে খেলেছেন উলভারহ্যাম্পটন ও এফসি পোর্তোতেও। সব মিলিয়ে ক্লাব ক্যারিয়ারে ৩৯৮ ম্যাচে গোল ১৩৬টি। লিভারপুলের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ জিতেছেন সর্বশেষ (২০২৪-২৫) মৌসুমেই। একবার জিতেছেন এফএ কাপও। এ ছাড়া দুবার জিতেছেন লিগ কাপ।
কী রেখে গেলেন জোতাপ্রত্যেকে রেখে যান স্মৃতি, রেখে যান অর্জন। জোতার মতো শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলারদের বেলায় অনেকের কৌতূহল অর্থসম্পদ নিয়েও। সেলিব্রিটি নেট ওর্থ অনুযায়ী, মৃত্যুর সময় জোতার আনুমানিক সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার (২২০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা)। খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার আর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তিই ছিল তাঁর আয়ের প্রধান উৎস।
২০২০ সালে জোতা লিভারপুলের সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি করেছিলেন। ২০২২ সালে চুক্তির মেয়াদ বেড়ে হয় পাঁচ বছর। ওই সময় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, জোতার বার্ষিক বেতন ছিল প্রায় ৭০ লাখ মার্কিন ডলার (৮৫ কোটি টাকা)। পারফরম্যান্স বোনাস হিসেবে আরও ২০ লাখ ডলার (২৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা) বাড়তি পাওয়ার সুযোগ ছিল।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
কিছুদিন ধরে গুঞ্জন উড়ছে, ভেঙে যাচ্ছে ভারতীয় তারকা দম্পতি মাহি ভিজ ও জয় ভানুশালির ১৪ বছরের সংসার। এ খবর চাউর হওয়ার পরও নীরব ছিলেন এই দম্পতি। এর কিছুদিন পর খবর রটে, বিবাহবিচ্ছেদের পর ভরণপোষণের জন্য ৫ কোটি রুপি খোরপোষ দাবি করেছেন। এ নিয়ে শোবিজ অঙ্গনে যেমন জোর চর্চা চলছে, তেমনি সোশ্যাল মিডিয়াও সয়লাব। ফলে সমালোচনার মুখে পড়েছেন অভিনেত্রী মাহি ভিজ।
এ পরিস্থিতিতে নীরবতা ভেঙেছেন ‘বালিকা বধু’খ্যাত মাহি ভিজি। একটি ভিডিও বার্তায় এই অভিনেত্রী বলেন, “আমি কোথাও পড়েছি, আমি নাকি ডিভোর্স পেপারে সই করেছি, এখন আমাকে সেই কাগজ দেখান। আমরা যতক্ষণ না নিজেরা কিছু বলছি, ততক্ষণ আপনারা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার রাখেন না। আমি জানি, আমরা পাবলিক ফিগার। কিন্তু আমরা যা বলতে চাই, শুধু সেটাই বলব। বাড়িতে আমার অসুস্থ মা আর তিনটি সন্তান আছে। যার মধ্যে দুইজন এখন সবকিছু বোঝে। এমনকি, খুশি (কন্যা) আমাকে মেসেজ করে বলেছে, ‘মা, এসব কী হচ্ছে! ওরা কেন আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে নাক গলাচ্ছে?’ এসব নিয়ে বাচ্চারা স্কুলেও প্রশ্নের মুখে পড়ছে।”
আরো পড়ুন:
হাসপাতালে ধর্মেন্দ্র
মধ্যরাতে শাহরুখের বাড়ির সামনে ভক্তদের ভিড়
খোরপোষের বিষয়ে ক্ষুব্ধ মাহি ভিজ বলেন, “আমাদের বাঁচতে দিন। আমরা তারকা বলেই সবকিছু আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হবে, এমন নয়। কেউ লিখেছে, ‘আমি নাকি ৫ কোটি রুপি খোরপোষ চেয়েছি।’ আমি বা জয় কি এটা বলেছি? যখন প্রমাণ হাতে পাবেন, তখন কথা বলবেন। আমি তো ঠিকমতো জানিই না খোরপোষ কী!”
খানিকটা ব্যাখ্যা করে খোরপোষের বিষয়ে মাহি ভিজ বলেন, “আমার মতে, যদি একজন পুরুষ নিজে পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করে, তবে বিচ্ছেদের পর সেই অর্থে স্ত্রীর কোনো অধিকার নেই। খোরপোষ তখনই যুক্তিযুক্ত, যখন কোনো নারী সারাজীবন গৃহবধূ হিসেবে থেকেছেন এবং কখনো কাজ করেননি। কোনো নারী যদি কাজ করতে পারেন, তবে নিজেরই উপার্জন করা উচিত।”
স্বামীর প্রশংসা করে মাহি ভিজ বলেন, “এ বিষয়ে আমার মুখ থেকে না শোনা পর্যন্ত কোনো কিছু বিশ্বাস করবেন না। আমাদের, আমাদের সন্তানদের ও বাবা-মায়ের গোপনীয়তাকে সম্মান করুন। অনুরোধ করছি, আমাদের একা থাকতে দিন। যদি মনে করি কিছু জানাতে হবে, আমরা নিজেরাই বলব। জয় আমার পরিবার, সে সবসময় আমার পরিবারই থাকবে। সে আমার সন্তানের জন্য দারুণ বাবা এবং একজন অসাধারণ মানুষ।”
২০১১ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মাহি ভিজ ও জয় ভানুশালি। খুব ঘরোয়া আয়োজনে বিয়ে করেন তারা। এ দম্পতির ‘তারা’ নামে একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। ২০১৭ সালে রাজবীর ও খুশি নামে দুই সন্তান দত্তক নেন এই দম্পতি।
ঢাকা/শান্ত