গণপিটুনিতে নিহত ৩: গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য কড়ইবাড়ী গ্রাম
Published: 3rd, July 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগরের কড়ইবাড়ী গ্রামে এক পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যার পর গোটা গ্রাম এখন আতঙ্কের নগরী। পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে পুরো গ্রাম। ঘরে ঘরে তালা ঝুলছে, যেনো কোনো যুদ্ধপরবর্তী জনপদ।
ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল ৯টায়, বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ী গ্রামে। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন, রুবি আক্তার (৫৮), তার মেয়ে জোনাকি আক্তার (৩২) ও ছেলে মো.
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, মোবাইল চুরির মতো একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধি ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ ও সদস্য বাচ্চু মিয়া। তারা উত্তেজনা থামানোর বদলে বরং উসকানিমূলক ভূমিকা পালন করেছেন।
আরো পড়ুন:
ইন্দোনেশিয়ায় ফেরিডুবি: ৪ জনের লাশ উদ্ধার, বহু নিখোঁজ
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেল ছেলেরও
এর আগে, মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় কড়ইবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বাজারে ফটোকপি করাতে গেলে তার মোবাইল চুরি হয়। মোবাইল হারানোর পর সন্দেহভাজন হিসেবে আটক হন রুবির এক আত্মীয় কিশোর। পরে মোবাইল উদ্ধার হলেও উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি। বরং এ ঘটনা ঘিরে এলাকায় তৈরি হয় অসন্তোষ ও দ্বন্দ্ব।
পরদিন বুধবার বিকেলে রুবিদের সঙ্গে তর্কে জড়ান শিক্ষক রুহুল আমিন, ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া এবং চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ। একপর্যায়ে বিষয়টি হাতাহাতিতে রূপ নেয়। পরে বৃহস্পতিবার সকালে দলবদ্ধভাবে রুবিদের বাড়িতে হামলা চালায় একদল উত্তেজিত জনতা।
প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী জানান, রুবির বাড়ির সামনে ৮০-৯০ জন লাঠিসোটা নিয়ে আসে। প্রথমে তারা বাড়িতে ইট ছোড়ে, পরে ভিতরে ঢুকে পড়ে। রুবিকে মারতে মারতে উঠানে ফেলে রাখে। পাশের ঘর থেকে মেয়েরা বের হলে তাদেরও পেটানো হয়।
স্থানীয় আরেক ব্যক্তি বলেন, “চেয়ারম্যান শিমুল আর মেম্বার বাচ্চু সামনে ছিলেন। কেউ কাউকে থামায়নি। বরং লোকে বলেছে, ‘চেয়ারম্যান সাহেব আছেন, কিছু হবে না’। তারপর শুরু হয় পিটুনি।”
নিহত রুবির আত্মীয় হানিফ মিয়া বলেন, “যারা মারল, তারা সাধারণ লোক না। তারা চেয়ারে বসা লোকদের দেখেই সাহস পেয়েছে। ওরা চুপ করে না থাকলে এমন হত না।”
ঘটনাস্থলে থেকে পরিস্থিতি শান্ত করার কোনো চেষ্টা করেননি- প্রত্যক্ষদর্শীদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা নিজেরাই হামলার শিকার হয়ে এলাকা ছাড়ি। পরে গ্রামের লোকজন উত্তেজিত হয়ে ঘটনা ঘটিয়েছে।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে পুলিশি অভিযান শুরু হলে অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। দেখা গেছে, অধিকাংশ বাড়িঘরে তালা ঝুলছে। গ্রামের রাস্তা ফাঁকা, পুরুষ সদস্যদের কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। নারী-শিশুদের চোখে-মুখে আতঙ্ক।
স্থানীয় বাসিন্দা ফয়সাল বলেন, “রুবির পরিবার আগে মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিল। কিন্তু এইভাবে হত্যা তো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। তার ওপর চেয়ারম্যান-মেম্বার সামনে থাকায় আমরা চুপ করে আছি।”
নিহত রাসেলের স্ত্রী মীম আক্তার দুই বছরের সন্তানকে কোলে নিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, “আমার স্বামী নিরপরাধ ছিল। তাকে দা দিয়ে কুপিয়ে মারা হয়েছে। আমি বিচার চাই।”
নিহত রুবির আরেক জামাতা ও মেয়ে এখনো নিখোঁজ। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, বাড়িতে ফিরতে পারছেন না।
কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার নজির আহমেদ খান বলেন, “ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। তদন্ত চলছে। জড়িত কেউ ছাড় পাবে না। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে নিহতদের পরিবার এখনো মামলা করেনি কেন- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা পরিবারকে সময় দিচ্ছি। চাই না তাদের ওপর কোনো চাপ তৈরি হোক।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হত আতঙ ক পর ব র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
আমদানি বৃদ্ধি ইতিবাচক, ধারাবাহিকতা থাকতে হবে
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও ভোগ্যপণ্যের ঋণপত্র খোলার হারে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, সেটিকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। তবে তিন মাসের চিত্র দিয়ে সামগ্রিক অবস্থা এখনো মূল্যায়ন করার সময় হয়নি।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে হঠাৎ প্রায় ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। এটা সুখবর হলেও কোনো বড় প্রকল্পের মালামাল আমদানিতে এত বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। যদি সত্যিকারের নতুন নতুন কারখানার যন্ত্রপাতি আমদানির মাধ্যমে এ প্রবৃদ্ধি ঘটে, তাহলে তা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ধারাবাহিকতা থাকলেই বলা যাবে, দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে। বিনিয়োগ হলে সামনে কর্মসংস্থানও বাড়বে। আর তাতে অর্থনীতিতেও গতি সঞ্চার হবে।
মূলধনি যন্ত্রপাতির মতো ভোগ্যপণ্যের ঋণপত্র খোলার হারও বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তিন মাসের যে তুলনা করে দেখিয়েছে, তাতে ঋণপত্র খোলার হার ২০ শতাংশ বেড়েছে।
সব মিলিয়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা আগামী কয়েক মাস অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিতে কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে।
মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার, পরিচালক, টি কে গ্রুপ