এক সময়ের জনপ্রিয় গার্ল গ্রুপ ‘দ্য চিতা গার্লস’ আর তারও আগে ‘থ্রিএলডব্লিউ’ দিয়ে যাত্রা শুরু। তারপর দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এখন তিনি একজন মা, ব্যবসায়ী, এমি অ্যাওয়ার্ডজয়ী টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব এবং সবার আগে একজন নারী, যিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন ‘না’ বলার সাহসের ভেতর দিয়ে। তিনি অ্যাড্রিয়েন বায়লন-হাউটন। সম্প্রতি রিডার্স ডাইজেস্ট-এর সঙ্গে এক আলাপচারিতায় অ্যাড্রিয়েন কথা বলেছেন মাতৃত্বের বাস্তবতা, মানসিক সুস্থতা নিয়ে। অনুবাদ ও ফিচার রূপে তা তুলে ধরা হলো।
এই দাগগুলোই আমার গল্পের রং
মাতৃত্বের নিখুঁত ছবির পেছনের বাস্তব রূপটা কেমন? অ্যাড্রিয়েন বলেন, ‘এইমাত্র আমি আরেপা রান্না করেছি আমার ছেলের সঙ্গে। দেখুন, আমার জামাকাপড় কেমন দেখাচ্ছে!’ জামায় লেগে থাকা এই দাগই তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এগুলো তৈরি হয়েছে রান্নাঘরে, সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে, হাসিখুশি মুহূর্ত ভাগ করে। তিনি বলেন, ‘আমি নিখুঁত হওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত নই। শুধু মুহূর্তগুলোকে উপভোগ করতে চাই। কারণ সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে।’
ছোট তালিকায় বড় জাদু
একজন মা, অভিনেত্রী ও উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিদিনের ব্যস্ততা কীভাবে সামলান অ্যাড্রিয়েন? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি তালিকা করার রানী। সব কাজের তালিকা বানিয়ে রাখি। জামাকাপড় থেকে শুরু করে সন্তানের দিনটা কেমন যাবে, সব আগে থেকে পরিকল্পনা করি। ফলে হুটহাট কিছু হলে আমি অতটা বিচলিত হই না।’
নিজের ও সন্তানের কাপড় গুছিয়ে রাখা, ছেলের ঘরে ছোট আয়নার পাশে নিজের মেকআপ ব্যাগ রেখে দেওয়া–এই ছোট ছোট প্রস্তুতির মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাঁর দৈনন্দিন কাজ।
নোচেবুয়েনা, পারান্দাস আর পারিবারিক আলো
উৎসবের সময় এলেই অ্যাড্রিয়েনের ঘর যেন হয়ে ওঠে এক ছুটির রাজ্য। তিনি বলেন, ‘‘আমি এখন নিজের বাড়িতে বড়দিনের আগের রাত–নোচেবুয়েনা–হোস্ট করি। পরিবার-পরিজন মিলে রাত ১২টায় আমরা শুরু করি ‘পারান্দাস’। ঢোল, তবলা, ক্ল্যাভেস, তাম্বোরিন নিয়ে সবাই নাচে, গায় রান্নাঘরে।’’
এখানেই শেষ নয়, তিনি শুরু করেছেন নিজেদের ‘ক্রিসমাস ট্রি লাইটিং’। ১ নভেম্বরেই আলো লাগানো হয় বাড়ির চারদিকে। পরিবারকে ডাকা হয়, কাউন্টডাউন হয়, আর একসঙ্গে জ্বলে ওঠে ঘরের আলো।
‘আমার মা নিখুঁত ছিলেন না, তবুও তিনি আমার নায়িকা’
মাতৃত্বের যাত্রায় নিজেকে খুঁজে পাওয়ার প্রশ্নে অ্যাড্রিয়েনের তিনটি স্পষ্ট পরামর্শ– ১.

নিজেকে ক্ষমা করুন। আপনি যথাসাধ্য করছেন। ২. আপনার মাও নিখুঁত ছিলেন না। তবুও আপনি তাঁকে ভালোবাসেন। তাই নিজেকেও ভালোবাসুন, ভুলগুলোকে অতটা বড় করে দেখবেন না। ৩. সাহায্য চাইতে শিখুন। ভালোবাসার কোনো এক বন্ধু, আত্মীয় বা প্রতিবেশী যখন জিজ্ঞেস করে, ‘কিছু লাগবে?’–তখন বলুন, ‘হ্যাঁ।’ একটি শিশুকে বড় করতে একটি গোটা সমাজ লাগে।
অ্যাড্রিয়েন বায়লন-হাউটনের গল্প কেবল তারকা হওয়ার গল্প নয়–এটি নিজেকে আবিষ্কার ও ভালোবাসার গল্প। তিনি শিখেছেন, সবকিছু সামলাতে গিয়ে নিখুঁত না হয়ে বরং মুহূর্তটিকে সত্যিকারভাবে উপভোগ করাই সবচেয়ে বড় অর্জন।
অ্যাড্রিয়েনের মতে– অতীত নয়, ভবিষ্যৎটাই মুখ্য। যদি কিছু ঠিক করার থাকে, সেটি এখনই জানাটা ভালো। ‘না’ বলতে শেখার ওপর জোর দেন অ্যাড্রিয়েন। তিনি বলেন, ‘আমি অনেকদিন পর্যন্ত না বলতে ভয় পেতাম, নিজের অস্বস্তি মেনে অন্যদের আরাম দিতাম। এটি ছিল নিজের প্রতি অবিচার। এখন বুঝেছি, না বলতে পারার মানে নিজেকে ভালোবাসা, এক দারুণ উপহার।’ v
সৌজন্যে: রিডার্স ডাইজেস্ট
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র গল প

এছাড়াও পড়ুন:

রেস্ট হাউজে ‘নারীসহ ওসিকে আটকে চাঁদাবাজির’ অভিযোগ

যশোরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রেস্ট হাউজে ‘ওসিসহ নারীকে আটকে চাঁদাবাজির’ অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় চলছে। এ সংক্রান্ত সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস হওয়ার পর এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। 

অভিযোগ উঠেছে, ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার ওসি এক নারীকে নিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থান করছিলেন। এ সময় এক ছাত্রদল নেতা ৫-৬ জন সহযোগীকে নিয়ে সেখানে যান। ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ওসির কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে আপোসরফা শেষে তাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করা হয়। গত ৩০ জুন এ ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস হয়ে।  

ফুটেজে দেখা গেছে, ৩০ জুন সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট। এক নারীকে নিয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরাতন রেস্ট হাউজের কপোতাক্ষ কক্ষে উঠেন ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম। এর ঘণ্টা দুয়েক পরে রেস্ট হাউজে ৫-৬ জন সহযোগীদের নিয়ে হাজির হন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসান সনি। রেস্ট হাউজটির দরজা ধাক্কা দিতেই বাইরে বেরিয়ে আসেন ওসি। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কক্ষে প্রবেশ করতে গেলে বাধা দেন তিনি। এক পর্যায়ে টেনে-হিঁচড়ে ওসিকে সঙ্গে নিয়েই কক্ষে প্রবেশ করেন তারা।

স্থানীয়রা জানান, ‘নারী নিয়ে একান্তে’ সময় কাটানোর অভিযোগ তুলে ছাত্রদলনেতা সনি ওসির কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। দিতে অস্বীকৃতি জানালে শুরু করেন ভাঙচুর ও ভিডিও ধারণ। আনসার সদস্য ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মচারীকে মারধরও করেন তারা। একপর্যায়ে এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে দুই লাখ টাকায় রফাদফা করেন তারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে হাজির হলে ছাত্রদলনেতা সনি ওসিসহ নারীকে পেছনের দরজা দিয়ে বের করে দেন।

ঘটনার দিন পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেটে দায়িত্ব পালনকারী আনসার সদস্য রাজু জানান, ওই দিন সন্ধ্যায় একজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে বাংলোতে প্রবেশ করেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। এর ঘণ্টাখানেক পরে এলাকার কিছু লোকজন বাংলোর ভেতরে প্রবেশের পর দরজা আটকে দেন এবং ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেননি। এরপর আরও অনেকে আসেন, থানা থেকে পুলিশের লোকজন আসেন। তবে ভেতরে কি ঘটেছে তা তিনি জানেন না।

রেস্ট হাউজের ইনচার্জ উপ-সহকারী প্রকৌশলী তরুণ হোসেন জানান, কার্যত পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশনায় তিনি ওসি সাইফুল ইসলামকে কক্ষ বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সঙ্গে আনা নারীকে স্ত্রী পরিচয় দিয়েছিলেন। আর সাইফুল ইসলাম রেস্ট হাউজে অবস্থানকালে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পাউবো ও থানার লোকজন সেখানে যান।

পাউবো রেস্ট হাউজের কেয়ারটেকার মিজানুর রহমান বলেন, ওসি সাইফুল স্ত্রী পরিচয়ে একজন নারীকে নিয়ে বাংলোয় ওঠেন। তিনি নিজে দরজা খুলে দেন। এর কিছু সময় পর ওসি স্যার নাস্তা আনতে তাকে শহরের একটি হোটেলে পাঠান। আর সাইফুল ইসলাম ওই নারীসহ কক্ষে ঘণ্টা খানেক অবস্থান করার পরে এলাকার কিছু লোকজন প্রবেশ করেন। রেস্ট হাউজের সামনে এসে দরজা ধাক্কধাক্কি করেন। এর কিছুক্ষণ পর সাইফুল ইসলাম দরজা খুলে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আর চক্রটি তাকে টেনে-হিঁচড়ে ওই নারীসহ ঘরে ঢোকায়। এসময় সাইফুল ইসলাম টাকা বের করে দেন চক্রের লোকজনের হাতে। লেনদেন তিনি দেখে ফেলায় এবং রেস্ট হাউজে অবস্থান করার চেষ্টা করায় তাকেও মারপিট করে ও ভাঙচুর করে। বাবুর্চি মিজানকেও মারধর করে তারা।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী জানান, ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওসিকে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে সেখানে বহিরাগতরা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটায়। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খতিয়ে দেখছে।

এদিকে, সিসিক্যামেরার ফুটেজে ছাত্রদল নেতার কাছে হেনস্তার শিকারের দৃশ্য দেখা গেলেও তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন ওসি সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, তার এক বন্ধুকে নিয়ে যশোরে একটা কাজে এসেছিলেন। তাকে নিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থানের সময় পূর্বপরিচিত কয়েকজন ছাত্রনেতা আসেন। তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়েছে। কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

অভিযোগের ব্যাপারে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসান সনি দাবি করেন, ‘নারীসহ একজন লোক রেস্ট হাউজে অবস্থান করছেন স্থানীয়দের মাধ্যমে এমন সংবাদ পেয়ে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। তবে সেখানে কোনো নারীর অবস্থান পাননি।’

সিসিটিভি ফুটেজে নারী, ওসিসহ তাকে দেখা গেছে এমন তথ্য জানানো হলো তিনি অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টি সত্য নয়। আর যেহেতু নারী পাওয়া যায়নি; তাই ওসির সঙ্গে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলে চলে আসেন।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসনাত বলেন, পাউবো রেস্ট হাউজে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। তবে পুলিশ সেখানে গিয়ে কাউকে পায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘রব্বানা হাবলানা’: পরিবারের জন্য এক অমূল্য দোয়া
  • ‘৪০০ রেকর্ড লারার মতো কিংবদন্তিরই থাকুক’, কোচকে বলেছিলেন মুলডার 
  • ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৯২
  • টাঙ্গাইলে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে অটোরিকশার তিন আরোহী নিহত
  • নেশাগ্রস্ত চরিত্রে অভিনয় করাটা চ্যালেঞ্জিং ছিল: উপমা
  • চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা নয়, সবার কাছে দোয়া চাইলেন ফরিদা পারভীনের ছেলে
  • চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা নয়, সবার কাছে দোয়া চাইলেন ফরিদা পারভীন
  • চাকরির ইন্টারভিউয়ে জেফ বেজোস একটা উদ্ভট কিন্তু দুর্দান্ত প্রশ্ন করতেন, কী সেটা
  • রেস্ট হাউজে ‘নারীসহ’ ওসিকে আটকে ‘চাঁদাবাজির’ অভিযোগ
  • রেস্ট হাউজে ‘নারীসহ ওসিকে আটকে চাঁদাবাজির’ অভিযোগ