‘আশুরা’ শব্দের অর্থ দশম বা দশমী। মহররম মাসের দশম দিনটিকে আশুরা বলা হয়। কারও কারও মতে, এদিনে আল্লাহ ১০ জন পয়গম্বরকে তাঁর ১০টি অনুগ্রহ ও বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন বলে এটিকে আশুরা বলা হয়।

হাদিসে আশুরা দিবসে রোজা পালনের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি আল্লাহর দরবারে আশা রাখি যেন আশুরার রোজা আল্লাহর নিকট পূর্ববর্তী বছরের গুনাহের কাফফারাস্বরূপ গণ্য হয়।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৩২, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১২৪; সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,২৫১: আশুরার দিনে রোজা পরিচ্ছেদে ১৮৭৪ থেকে ১৮৮১ পর্যন্ত আটটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে)।

তবে আশুরার দিনটি যে কারণে আমাদের কাছে বেশি স্মরণীয়, তা হলো কারবালার যুদ্ধের পরিণতি। এদিনে এক হৃদয়বিদারক যুদ্ধের করুণ সমাপ্তি হয়।আরও পড়ুনপরিবেশ নিয়ে নবীজি(সা.

) এর ১০ শিক্ষা১৯ এপ্রিল ২০২৫

তবে আশুরার দিনটি যে কারণে আমাদের কাছে বেশি স্মরণীয়, তা হলো কারবালার যুদ্ধের পরিণতি। এদিনে এক হৃদয়বিদারক যুদ্ধের করুণ সমাপ্তি হয়। হজরত মুয়াবিয়া (রা.) ইন্তেকালের পর মদিনাবাসীর মতামত না নিয়েই ইয়াজিদ ইসলামি রাষ্ট্রনীতির বরখেলাপ করে দামেস্কের মসনদে আসীন হন।

যে নীতি-আদর্শ মহানবী (সা.) প্রতিষ্ঠা করে গেছেন এবং খোলাফায়ে রাশেদিন যে নীতির আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, ইয়াজিদের দ্বারা সে নীতি-আদর্শ পরিবর্তিত হওয়ায় হজরত হোসাইন (রা.) তা রক্ষার জন্য সোচ্চার হলেন। অবশেষে রাসুল (সা.)–এর দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.) অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে সত্যের জন্য সংগ্রাম করে কারবালার প্রান্তরে সপরিবার শাহাদাতবরণ করে সর্বোচ্চ ত্যাগের অতুলনীয় আদর্শ রেখে গেছেন।

ইসলাম আমাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত, দ্বিমত, ইত্যাদিকে কীভাবে দেখে, তা বুঝতে হলে আশুরার ঘটনার পাশাপাশি সিফফিনের যুদ্ধকে রাখা যেতে পারে। ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলী (রা.)–এর শাসনামলে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এটিকে গৃহযুদ্ধ বলা হয়।

সবচেয়ে আশঙ্কার ব্যাপার ছিল, উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) এ যুদ্ধে খলিফা আলীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। রাসুল (সা.)–এর একান্ত পরিবারভুক্ত দুজন প্রথম শ্রেণির সাহাবি পরস্পরের বিপরীতে অবস্থান নেওয়ায় বেশ কিছু দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়। ইতিহাস বিচারে দেখা যায়, এ যুদ্ধের ফলে উমাইয়া শাসকদের হাতে শাসনভার ন্যস্ত হওয়ার ফলেই কারবালার আগমন ঘটে।

ইসলাম আমাদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত, দ্বিমত, ইত্যাদিকে কীভাবে দেখে, তা বুঝতে হলে আশুরার ঘটনার পাশাপাশি সিফফিনের যুদ্ধকে রাখা যেতে পারে।আরও পড়ুনমহানবী (সা.) কীভাবে প্রতিরোধ করেছিলেন১০ মে ২০২৫

দ্বিমত, বহুমত কিংবা পরস্পরবিরোধিতা ইসলামে নাজায়েজ নয়। কিন্তু একে কী করে ধারণ করতে হয়, সংঘাত বেধে গেলে তার পরিণতি কেমন হওয়া উচিত; তা নিয়ে আমরা কারবালার ঘটনার সঙ্গে সিফফিনের যুদ্ধের কিছু পার্থক্য দেখতে পাই।

সিফফিনের যুদ্ধের পর আয়েশা (রা.) বারবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন, যদি এ যুদ্ধে অংশ নেওয়া তাঁর জন্য ভুল সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে সে কথা মনে করে। আবার আলীও (রা.) যুদ্ধের পর আয়েশা (রা.)–কে তাঁর পছন্দের গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছার ব্যবস্থা করে দেন। অথচ কারবালায় হোসাইনকে যুদ্ধে পরাজিত করার পরও তাঁর মাথা কেটে নেওয়া হয়, তাঁর সঙ্গে থাকা তাঁর শিশুপুত্রসহ পরিবারবর্গকেও রেহাই দেওয়া হয়নি। প্রবল আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ এমনই ছিল, যা আজও মুসলিমদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করে চলেছে।

মুসলিম কখনো মুসলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন, নবুওয়াতের মাত্র ৭০ বছরের মাথায় ঘটে যাওয়া সিফফিন ও কারবালার দুটি যুদ্ধই বেদনাদায়ক। কিন্তু এ দুইয়ের পরিণতিতে এসে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা পক্ষগুলো অপর পক্ষের সঙ্গে যা আচরণ করে, তাতেও আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় আছে।

লেখক: শিক্ষক, গবেষক, প্রকৌশলী

[email protected]

আরও পড়ুনপবিত্র আশুরার উৎস২৮ জুলাই ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য দ ধ র পর ক রব ল র আম দ র দ ব মত আল ল হ র জন য ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

পবিত্র আশুরা আজ

আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে দিনটি শোকের। ৬১ হিজরির এই দিনে ফোরাত নদী-তীরবর্তী কারবালার ময়দানে শহীদ হন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা.)। তিনি হজরত আলী (রা.) ও হজরত ফাতেমার (রা.) পুত্র। হজরত আলীর মৃত্যুর পর খলিফা হন হজরত মুয়াবিয়া (রা.)। জীবদ্দশাতেই তিনি পুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকার মনোনীত করেন।

তবে ইয়াজিদের কাছে বায়াত নিতে অস্বীকৃতি জানান ইমাম হোসেন (রা.)। প্রতিবাদে মদিনা ছেড়ে কুফায় হিজরতের জন্য যাত্রা করেন তিনি। পরে কারবালা ময়দানে সঙ্গীদের নিয়ে যাত্রাবিরতি করেন। ইমাম হোসেন (রা.) ও তাঁর অনুসারীদের আটক করে মদিনায় ফিরিয়ে নিতে ইয়াজিদের নির্দেশে উমর ইবনে সাদ বিন আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্য কারবালায় প্রবেশ করে।

আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে ইমাম হোসেনের শিবিরে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তারা। পানির অভাবে কাফেলার নারী-শিশুরা তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়লেও ইমাম হোসেন আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানান। ১০ মহররম অবরোধের বিরুদ্ধে অসম এক যুদ্ধে ইমাম হোসেন ও তাঁর ৭২ সঙ্গী শহীদ হন। শিমার ইবনে জিলজুশান কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে ইমাম হোসেনকে হত্যা করে।

ইসলাম ধর্মমতে, ১০ মহররম আশুরার দিনেই কেয়ামত হবে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) এই দিনে রোজা রাখতেন।

কারবালার শোকাবহ স্মরণ ছাড়াও মুসলমানদের কাছে ১০ মহররম গুরুত্বপূর্ণ দিন। শিয়া মতাবলম্বীরা ইমাম হোসেনের শোকে এ দিনে মাতম করেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হয় তাজিয়া মিছিল।

আশুরা উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস জোগাবে। তিনি সমাজে সাম্য, ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মুসলিম উম্মার ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানিকগঞ্জে তাজিয়া মিছিল দেখতে সড়কের পাশে মানুষের ভিড়
  • আশুরা উপলক্ষে রাজশাহীতে তাজিয়া মিছিল
  • হোসনি দালান থেকে শোকাবহ তাজিয়া মিছিল শুরু
  • অন্তরে ত্যাগের মহিমা লালন করতে হবে
  • আজ পবিত্র আশুরা
  • বাংলার সংস্কৃতিতে ফোরাতের ধারা
  • পবিত্র আশুরা আজ
  • আ.লীগের দমন-পীড়ন ছিল ইয়াজিদ বাহিনীর পৈশাচিকতার সমতুল্য: তারেক রহমান
  • মহররম, আশুরা ও আমল