‘১০ চাহার (চাকা) গাড়ি চলে। রাস্তাঘাট ভাঙা। সরকার কোনো কাম করে না।  ধরেন, আজ ১২-১৪ বছর কেউ মিয়া ছোয়ালপাল বিয়া দিবার পারে না। এদেশে কেউ বিয়ে করতিও চায় না, দিতিও চায় না। আসা-যাওয়ার খুব কষ্ট। ১৫ বছর ধরে মানুষ খুব দুর্ভোগে পড়ে রইছে। কাদার ছয় মাস মানুষ বাড়িরতে বের হবার পায় না।’ 
আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন ষাটোর্ধ্ব সাদেক আলী। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের উত্তর মূলগ্রামের বাসিন্দা।
একই ইউনিয়নের হিজলাকর গ্রামের তরিকুল ইসলামের স্ত্রী শিলা খাতুন বলেন, ছেলেপক্ষ মেয়ে দেখতে এসে বলে, গ্রামের রাস্তা ভালো না। পরিবেশ ভালো না। এইটা বলে বিয়ে ভেঙে দেয়। তাঁর ভাষ্য, দেড় মাস আগে সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে তাঁর ননদের বিয়ে ভেঙে গেছে।
২০০৬ সালে সদকী ইউনিয়নের জিলাপীতলা বাজার থেকে গড়াই নদীর বালুরঘাট পর্যন্ত প্রায় ৭০০ মিটার গ্রামীণ সড়ক পাকা করা হয়। প্রতিবছর প্রায় দুই কোটি টাকার বালুর ঘাট ইজারা দেয় স্থানীয় প্রশাসন। প্রতিদিনই ২০০ থেকে ৩০০টি বালুভর্তি ছয় চাকা ও ১০ চাকার ডাম্প ট্রাক চলে এই সড়ক দিয়ে। এতে সড়কের কার্পেটিং উঠে অসংখ্য খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালু আর বর্ষায় জমে থাকে কাদাপানি। এতে সারাবছরই চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় জিলাপীতলা, হিজলাকর, উত্তর মূলগ্রামসহ আশপাশ এলাকার অন্তত ১০ হাজার বাসিন্দাকে। এখন নদীতে পানি বাড়ায় বালু তোলা বন্ধ রয়েছে। বালু তোলার ড্রেজিং মেশিন রাখা আছে ঘাটে।
সড়কটি সংস্কারের দাবিতে সোমবার কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক সড়কের জিলাপীতলায় মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। পরে ভাঙা ও জরাজীর্ণ সড়কে ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদ জানান তারা। সরেজমিন দেখা যায়, সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে অনেক আগেই। অসংখ্য খানাখন্দে ভরে আছে গোটা সড়ক। ভারী যানবাহন চলায় সড়কের দুই পাশে নালার মতো গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। তাতে জমে আছে কাদাপানি। সড়ক সংস্কারের দাবিতে স্থানীয়রা বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে তাতে ধানের চারা রোপণ করেন।
মানববন্ধন চলাকালে কৃষক নাজমুল হোসেন বলেন, দিন-রাত শত শত বালুর গাড়ি চলে। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি কাঁচা নাকি পাকা সড়ক। কাদাপানির কারণে এই সড়ক দিয়ে অটোভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ কোনো গাড়ি আসতে চায় না। মাথায় করে কৃষি পণ্য আনা-নেওয়া করা লাগে। এতে খরচ ও ভোগান্তি উভয়ই বেশি হয়। তিনি দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানান। গৃহিণী নাজমা খাতুন বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালুতে বাড়িঘরে টেকা যায় না। নোংরা খাবার খেয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবার হাসপাতালে যাওয়ার জন্য কোনো গাড়িও পাওয়া যায় না।
সদকী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আব্দুল হামিদ ও পল্লি চিকিৎসক আসাদুল ইসলাম বলেন, বালুর গাড়ি চলায় কার্পেটিং উঠে রাস্তার করুণ দশা। সরকার প্রতিবছর দুই কোটি টাকার বেশি রাজস্ব নিয়ে যায়। কিন্তু রাস্তার কোনো কাজ করে না।
হিজলাকর উত্তর মূলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, রাস্তার কারণে বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে কম আসে। একাধিকবার স্থানীয় এমপি, চেয়ারম্যান ও প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন সদকীর ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৭০০ মিটার সড়কের কাছে অসহায় এলাকার মানুষ।
ভ্যাটসহ প্রায় আড়াই কোটি টাকা দিয়ে জিলাপীতলা বালুর ঘাট ইজারা নিয়েছেন কুমারখালী পৌর বিএনপির সভাপতি মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, নদীতে পানি বাড়ায় বালু তোলা বন্ধ আছে। যেহেতু সরকার রাজস্ব আয় করছে, সেহেতু সরকারকেই রাস্তা মেরামত করতে হবে।
গ্রামীণ সড়কে ভারী যানবাহন চলা নিষিদ্ধ হলেও ঘাটের কারণে বালুর গাড়ি চলাচল করে জানিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো.

নাজমুল হক বলেন, সিসি ঢালাই ছাড়া কার্পেটিং করে লাভ হবে না। বরাদ্দ পেলে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক সরক র সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর

শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ফেনী শহরের ব্যস্ততম রাস্তা। এই সড়কের পাশেই শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। একটু ভারী বৃষ্টিতেই ডুবে যায় সড়কটি। গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ কোমরপানিতে তলিয়ে ছিল পাঁচ দিন। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে খানাখন্দ তৈরি হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর পাথর ও ইটের সুরকি দিয়ে অস্থায়ী মেরামত করা হলেও স্থায়ী সংস্কার হয়নি। এ বছর বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আরও বেহাল হয়েছে সড়কটির দশা। ছোট ছোট গর্তে ভরা এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। ফলে সড়কে যানজট লেগেই থাকে।

পৌর শহরের এই প্রধান সড়কে তা–ও যানবাহন চলে কোনোরকমে। শহরের অলিগলি আর অভ্যন্তরীণ সড়কের দশা এর চেয়ে অনেক বেহাল। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক থেকে একটু এগোলে হাসপাতাল মোড় থেকে সালাহ উদ্দিন মোড় পর্যন্ত যে সড়কটি রয়েছে, তাতে আগাগোড়াই বড় বড় খানাখন্দ। সড়কটির সাহেববাড়ি অংশে বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় ইট দিয়ে সাময়িক মেরামত করলেও ছোট-বড় গাড়ির চাকা সেসবকে স্থায়ী হতে দেয়নি। এটিসহ পৌরসভার ছোট-বড় প্রায় ৩০টির বেশি সড়ক এখনো বন্যার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। ২০২৪ সালের বন্যার এক বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর দৃশ্যমান কোনো সংস্কার হয়নি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের কাজ অচিরেই শুরু হবে।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

সরেজমিন ঘুরে শহরের পাঠানবাড়ি সড়ক, মাস্টারপাড়া মুন্সিবাড়ি সড়ক, কদল গাজী সড়ক, বিরিঞ্চি প্রাইমারি স্কুল সড়ক, বিরিঞ্চি রতন সড়ক, সুলতানপুর আমির উদ্দিন সড়ক, গাজী ক্রস রোড, সুফি সদর উদ্দিন সড়ক, আবু বক্কর সড়ক, শহীদ ওবায়দুল হক সড়ক, মহিপাল চৌধুরী বাড়ি সড়ক, চাড়িপুর মৌলভী আব্দুস সালাম সড়ক, উত্তর চারিপুর বাইতুশ শরিফ সড়ক, পূর্ব বিজয় সিং ছোট হুদা দিঘি সড়ক, মধুপুর মালেক মিয়া বাজার সড়কের বেহাল দশা দেখা গেছে। সব মিলিয়ে ৩০টি সড়কের সব কটিই এখন বেহাল।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

ফেনী পৌরসভায় ইজিবাইক চালান সুজাউদ্দিন। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে অন্য অনেকের চেয়ে তাঁকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন। ফেনীর শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে সম্প্রতি সুজাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়। কথায় কথায় তিনি বলেন, ছোট-বড় গর্ত থাকায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রীরা গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার দশা হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভাড়াও কমেছে তাঁর।

শাহিন একাডেমি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম শহরের সড়কগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সড়কের পাশে পর্যাপ্ত নালা নেই। এ কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে। বাড়ির সামনের সড়কের এই হাল হলে আর কাজকর্ম করতে ইচ্ছা হয় না।

ফেনী পৌরসভার বিসিক–মুক্তার বাড়ি সড়কের মাঝে এমন বড় বড় খানাখন্দ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর
  • নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে সড়ক সংস্কার, দুদকের অভিযান