হতাশায় দেশ ছাড়া অভিনেত্রী পিয়া বিপাশা বিয়ে করেছেন মার্কিন যুবককে
Published: 8th, July 2025 GMT
পাঁচ বছর আগে দেশের বিনোদন অঙ্গনকে পেছনে ফেলে হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন মডেল ও অভিনেত্রী পিয়া বিপাশা। তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, হয়তো সাময়িক বিরতি নিচ্ছেন তিনি। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় দেখা গেল, সেটিই ছিল তাঁর জীবনের মোড় ঘোরানো সিদ্ধান্ত। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে নিউইয়র্কে বসতি গড়ার পর ধীরে ধীরে বদলে গেছেন পিয়া– পরিণত হয়েছেন একজন কর্মঠ মার্কিন নাগরিক, একাধারে মা, ভালোবাসার মানুষ, আবার সফল পেশাজীবীও।
সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে একাধিক স্থিরচিত্র ও ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করে পিয়া জানান দিয়েছেন, এবার তাঁর জীবনের আরেকটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে– বিয়ে করেছেন তিনি। যদিও বছর শুরুর দিকে তিনি বলেছিলেন, চলতি বছরের শেষ দিকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন, তবে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেননি। পিয়া বিপাশার ইনস্টাগ্রাম পোস্ট থেকে জানা যায়, গত ২৬ জুন তিনি মার্কিন নাগরিক প্রেমিকের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
তবে বরাবরের মতোই ব্যক্তিগত জীবনে প্রাইভেসিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন পিয়া। স্বামীর নাম কিংবা পরিচয় এখনও গোপন রেখেছেন তিনি। নিজের মতো করে বিয়ে করলেও কোনো ঘটা করে অনুষ্ঠান করেননি, এমনকি জনসম্মুখেও স্বামীকে আনেননি। এ প্রসঙ্গে পিয়া বলেন, ‘আমার স্বামী খুব সাধারণ একজন মানুষ, পাবলিসিটি পছন্দ করেন না। আমিও চাই না আমাদের ব্যক্তিগত জীবন হঠাৎ করে জনচর্চার বিষয় হয়ে উঠুক।’
তবে ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা ছবিগুলোতে তাদের মধ্যকার বোঝাপড়া ও ভালোবাসার স্পষ্ট আভাস মিলেছে। পিয়ার এই পোস্টে ১৪ হাজারের বেশি রিঅ্যাকশন এবং প্রায় ৬০টি মন্তব্য জমা পড়েছে। অধিকাংশেই তাঁকে শুভকামনা জানিয়েছেন ভক্ত ও অনুসারীরা।
পিয়া বিপাশার জীবনের গল্প রূপকথার মতোই। ছোটবেলায় রূপকথার বই পড়তে ভালোবাসতেন তিনি, নিজেকে কল্পনা করতেন গল্পের নায়িকা হিসেবে। সেই কল্পনা থেকেই হয়তো মিডিয়ায় পথচলা শুরু। ২০১২ সালে ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন পিয়া। যদিও প্রতিযোগিতার সেরা দশে পৌঁছানোর পর ক্যাম্প ত্যাগ করেন, এরপর দ্রুতই বিজ্ঞাপনচিত্র এবং নাটকে অভিনয় শুরু করেন। তাহসানের বিপরীতে অভিনীত নাটক ‘দ্বিতীয় মাত্রা’ তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয়। বড় পর্দায়ও নাম লেখান পিয়া– মুক্তি পায় ‘রুদ্র: দ্য গ্যাংস্টার’। তবে তারকা শাকিব খানের বিপরীতে ‘রাজনীতি’ ছবিতে অভিনয়ের কথা থাকলেও সেটি বাস্তবায়িত হয়নি।
পিয়া জানান, মিডিয়াতে কাজের পদ্ধতি তাঁকে হতাশ করেছে। ‘বাংলাদেশে লবিং ছাড়া কাজ হতো না। ভালো একটি সিনেমা করার কথা ছিল, সেটা আর হয়নি। এরপর মিডিয়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি,’ বলেন পিয়া। সেই হতাশা থেকেই দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তাঁর সংসারও ছিল ভাঙনের মুখে, একমাত্র কন্যাসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এক অনিশ্চিত যাত্রা শুরু করেন।
পাঁচ বছর আগে আমেরিকায় পাড়ি জমানোর পর শুরু হয় জীবনের নতুন লড়াই। একসময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। তিন বছর ইনস্টাগ্রাম বন্ধ রেখেছিলেন পিয়া। তবে গত এক বছরে মার্কিন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আবারও ফিরেছেন সেই প্ল্যাটফর্মে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন তিনি মূলত পণ্যের প্রচারণা নিয়ে কাজ করেন এবং জানান, এখান থেকে ভালো আয়ের পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তিও পাচ্ছেন।
পিয়া বলেন, ‘আমার একটি মেয়ে ছিল, তাকে নিয়েই টিকে থাকার লড়াই। বাংলাদেশে যেভাবে মিডিয়া চলে, সেটা আমার স্বভাবের সঙ্গে মেলেনি। আমি কাজ করতে চেয়েছি অভিনয় দিয়ে, চাটুকারিতা দিয়ে নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিই আমেরিকায় থাকার। এখন মনে হয়, সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল না।’
পিয়া বিপাশার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে ভালোবাসা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে। বাংলাদেশের মিডিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েও তিনি নতুন করে গড়েছেন নিজের পরিচয়, ভেঙে গেছেন পুরোনো বন্ধন, গড়েছেন নতুন সম্পর্ক। নতুন দেশ, নতুন সংস্কৃতি, নতুন জীবন– সব মিলিয়ে পিয়া এখন রূপকথার নায়িকা নয়, বাস্তব জীবনের লড়াকু এক নারী। তাঁর নতুন জীবনের জন্য রইল শুভ কামনা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইনস ট গ র ম র জ বন র
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।