কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়ী গ্রামে দুই সন্তানসহ নারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় আট আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে শুনানি শেষে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মমিনুল হক তাঁদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কুমিল্লার আদালত পুলিশের পরিদর্শক সাদেকুর রহমান প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে তিন খুনের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আট আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত সোমবার দুপুরে আদালতে সাত দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। বুধবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করা হয়। আজ শুনানির সময় সব আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন‘মূল হোতা’ গ্রেপ্তার না হওয়ায় চারদিক থেকে ‘খুনের হুমকি পাচ্ছে’ পরিবার০৭ জুলাই ২০২৫

আদালত পুলিশের পরিদর্শক সাদেকুর রহমান বলেন, মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। আট আসামির সাত দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হলেও আদালত শুনানি শেষে প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আসামিদের কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কারাগার থেকে হেফাজতে নেবেন।

আট আসামির মধ্যে ঘটনার ‘অন্যতম পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত মামলার ৩ নম্বর আসামি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বাচ্চু মিয়া রয়েছেন। বাচ্চু মিয়া ছাড়া অন্য সাতজন হলেন কড়ইবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা মামলার ৫ নম্বর আসামি রবিউল আওয়াল, বাচ্চু মিয়ার ছেলে সন্দেহভাজন আসামি আতিকুর রহমান, রবিউল আওয়ালের ছেলে মো.

বায়েজ, মামলার ৩৩ নম্বর আসামি ও পাশের হায়দরাবাদ গ্রামের দুলাল এবং তাঁর ছেলে সন্দেহভাজন আসামি আকাশ, মামলার ১৮ নম্বর আসামি নাজিমউদ্দীন বাবুল এবং ১৯ নম্বর আসামি মো. সবির আহমেদ।

আরও পড়ুনস্থানীয় ইউপি সদস্যের পরিকল্পনায় মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যা০৫ জুলাই ২০২৫

গত বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার কড়ইবাড়ী গ্রামে ‘মব’ সৃষ্টি করে মা, মেয়ে, ছেলেসহ একই পরিবারের তিনজনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত তিনজন হলেন কড়ইবাড়ী গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার ওরফে জোনাকি (২৯)। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৭)। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে তিনি চিকিৎসাধীন।

হত্যার ঘটনায় শুক্রবার রাতে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন রোকসানা বেগমের বড় মেয়ে রিক্তা আক্তার। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে স্থানীয় আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহকে। মামলা হওয়ার পর সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশের সদস্যরা হত্যার ঘটনায় ওই আটজনকে গ্রেপ্তার করেন।

এদিকে তিন খুনের ঘটনায় নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রধান আসামি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ পলাতক। সোমবার রাতে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) মামলাটি হস্তান্তর করা হয়।

মামলাটির নতুন তদন্ত কর্মকর্তা জেলা ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নয়ন কুমার চক্রবর্তী আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান আসামিসহ মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আজ আট আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে, তাঁদের দু-তিন দিনের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ত ন দ ন কর তদন ত কর র ঘটন য় র রহম ন কড়ইব ড় র আস ম ন আস ম সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

নরসিংদীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, গুলিতে বৃদ্ধ নিহত

নরসিংদীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার মুরাদনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম মো. ইদন মিয়া (৬০)। তিনি মুরাদনগর এলাকার বাসিন্দা। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে মোস্তাকিম (৩০) ও আবুল হোসেন (৬০) নামের দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ, স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী আত্মগোপনে গেলে সেখানে বিএনপির দুটি পক্ষকে সক্রিয় হতে দেখা যায়। একটি পক্ষে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ আলম চৌধুরী এবং আরেক পক্ষে সদ্য বহিষ্কৃত সদস্যসচিব আবদুল কাইয়ুম মিয়া নেতৃত্ব দেন। মেঘনা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলাসহ নানা অভিযোগে সম্প্রতি দলীয় পদ থেকে বহিষ্কৃত হন আবদুল কাইয়ুম। স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে তাঁর সক্রিয় থাকার বিষয়টি মানতে পারছিল না শাহ আলম পক্ষ।

অভিযোগ আছে, আবদুল কাইয়ুমকে ঠেকাতে শাহ আলম চৌধুরীর ইন্ধন ও হস্তক্ষেপে আওয়ামী নেতা-কর্মীদের আবার এলাকায় ফেরানোর পরিকল্পনা করা হয়। এর অংশ হিসেবে আজ ভোর পাঁচটার দিকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে এলাকায় ফিরতে শুরু করে আত্মগোপনে থাকা স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। এ খবর পেয়ে আবদুল কাইয়ুমের সমর্থকেরা বাধা দেয়। এ সময় উভয় পক্ষ টেঁটা, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে ইদন মিয়াসহ অন্তত ছয়জন গুলিবিদ্ধ হন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে ইদন মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফরিদা গুলশানারা কবীর। তিনি জানান, ইদন মিয়াকে বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনায় হয়। ওই সময় তিনি মৃত ছিলেন। মরদেহ এই হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে শাহ আলম চৌধুরী ও আবদুল কাইয়ুম মিয়ার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নরসিংদীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, গুলিতে বৃদ্ধ নিহত