এস আলম ও তাঁর পরিবারের সিঙ্গাপুরের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ
Published: 10th, July 2025 GMT
এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলম, তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলের নামে থাকা সিঙ্গাপুরের ব্যাংক হিসাব ও কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, সিঙ্গাপুরের তিনটি পৃথক ব্যাংকে ১৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া দেশটির পাঁচটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে ১৭টি হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া সিঙ্গাপুরের আটটি কোম্পানিতে থাকা এস আলমের শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এর বাইরে এস আলমের ছেলে আশরাফুল আলমের পাঁচটি ব্যাংক হিসাব ও একটি কোম্পানির শেয়ার; আরেক ছেলে আহসানুল আলমের নামে থাকা একটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গতকাল বুধবার এস আলম ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির নামে থাকা ৫৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত।
আরও পড়ুনএস আলমের আরও ১৮০ কোটি টাকা মূল্যের জমি ক্রোকের আদেশ১৭ জুন ২০২৫দুদকের তথ্য অনুযায়ী, এস আলম ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দুটি হিসাব ও ইসলামী ব্যাংকের ১৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আবেদন করে দুদক। আদালত এসব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।
এর আগে গত ২৪ জুন সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রীর নামে বিদেশে থাকা স্থাবর–অস্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।
আরও পড়ুনএস আলম গ্রুপের সাইফুল ও তাঁর স্ত্রীর বিদেশের বাড়ি, ২৫ কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ২৪ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র অবর দ ধ আলম ও ত এস আলম আলম র ল আলম
এছাড়াও পড়ুন:
হেলিকপ্টার উড়েছিল ৩৬ বার, ছোড়া হয় গুলি, কাঁদানে গ্যাস
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র–জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি, নজরদারি, জনবল স্থানান্তরসহ বিভিন্ন কাজে পুলিশ ও র্যাবের নিজস্ব হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছিল। গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৩৬ বার আকাশে উড়েছিল ওই দুটি বাহিনীর হেলিকপ্টার। শটগান ও এসএমজি (সাব–মেশিনগান) থেকে গুলি এবং সাউন্ড গ্রেনেড ও গ্যাসগান (কাঁদানে গ্যাস) ছোড়ার কাজে তখন হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছিল। এই তথ্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় উল্লেখ করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল বুধবার টানা চর্তুথ দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর। এ সময় তিনি বলেন, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাবের হেলিকপ্টারের ৩৬ বার উড্ডয়নের তথ্য পাওয়া গেছে। ওই সময় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, সুনামগঞ্জ, সিলেট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধায় উড্ডয়ন ও অবতরণ করেছে হেলিকপ্টার।
চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের মধ্যে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় হেলিকপ্টার ব্যবহারের দুটি ভিডিও দেখানো হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, র্যাবের হেলিকপ্টার ঢাকার আকাশে উড়ছে এবং সেই হেলিকপ্টার থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের হেলিকপ্টার থেকেও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ধোঁয়া উড়ছে।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, যতটুকু স্বীকার না করলেই নয়, ততটুকু তারা (পুলিশ ও র্যাব) তথ্য দিয়েছে। অনেক গুলির প্রমাণ পাওয়া গেছে (প্রসিকিউশন), যেগুলোর কোনো হিসাব নেই। অন্য জায়গা থেকে গুলি এনে হিসাবটা পূর্ণ করা হয়েছে। হয়তো বাস্তবে গুলি হয়েছে ৫ হাজার রাউন্ড, হিসাব দিয়েছে ১০০ রাউন্ডের। তিনি বলেন, হেলিকপ্টারে কত গোলাবারুদ তোলা হয়েছিল, কত গোলাবারুদ ফায়ার (ব্যবহার) করা হয়েছে এবং কত গোলাবারুদ অবশিষ্ট আছে, সেসবের তথ্যও তাঁরা পেয়েছেন।
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিতে উদ্ধারকাজে, রেকি (গোপনে নজরদারি) করা, টহল দেওয়া, জমায়েত ছত্রভঙ্গ করা, জনবল স্থানান্তর ও আইজিপি মিশনেও (সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে উদ্ধার) হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, র্যাবের হেলিকপ্টারগুলো অত্যন্ত নিচু দিয়ে ওড়ার কারণে এই ফ্লাইটগুলোতে যেসব অফিসার ও সৈনিক ছিলেন, তাঁদের সবার মোবাইল নম্বর সংশ্লিষ্ট মোবাইল টাওয়ারে রেকর্ডেড (নথিভুক্ত) হয়ে যায়। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সবার তথ্য জানা গেছে।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গুলি প্রদর্শনজুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র–জনতার ওপর যেসব গুলি ব্যবহার করা হয়েছিল, তার মধ্যে উদ্ধার করা কিছু গুলি গতকাল ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে একটি স্বচ্ছ কৌটা থেকে একটি গুলি বের করে দেখান চিফ প্রসিকিউটর। তখন তিনি বলেন, ‘একদম মিলিটারি গ্রেড বুলেট (যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত বুলেট)।’
দ্বিতীয় স্বচ্ছ কৌটা থেকে বুলেট বের করে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এটি একজনের শরীর থেকে উদ্ধার করা।
এ রকম আরেকটি কৌটা থেকে একটি গুলি বের করে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এই গুলি একজনের শরীরে প্রবেশ করেছিল।
‘ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ওয়েতে প্রমাণিত’মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আসামি। তবে সাবেক আইজিপি মামুন দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেওয়া; বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করার দায়; চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যার দায় এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায়।
যুক্তিতর্কে আবু সাঈদের ঘটনা ছাড়া অন্য চারটি অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য–প্রমাণ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। এ সময় একটি ভিডিও দেখানো হয়। এতে দেখা যায় চানখাঁরপুলে আন্দোলনকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলি করছেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্য, পুলিশের সাক্ষ্য ও ভিডিও—এই তিনটিকে একসঙ্গে মিলালে খুব ‘ক্রিস্টাল ক্লিয়ারলি’ (একদম স্পষ্ট) প্রমাণ করা যাচ্ছে যে এই অপরাধটা কীভাবে পরিচালিত হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ, যা কমান্ড স্ট্রাকচার (নির্দেশকাঠামো) অনুসরণ করে তৎকালীন আইজিপি হয়ে, ডিএমপি কমিশনার হয়ে, মাঠপর্যায়ে যায়।
এরপর তিনটি ভিডিও (আশুলিয়ার ঘটনায়) দেখানো হয়। এ ছাড়া দুজন সাক্ষীর জবানবন্দি পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর। এ সময় তিনি বলেন, আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়ে বৃহস্পতিবার (আজ) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন।
৪৫ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়লগণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়ে আগামী ৮ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-১ এই আদেশ দিয়েছেন। এই মামলায় ৪৫ আসামির মধ্যে ১৭ জন গ্রেপ্তার আছেন।
এর মধ্যে ১৬ আসামিকে গতকাল ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তাঁরা হলেন আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, তৌফিক–ই–ইলাহী চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, কামরুল ইসলাম, দীপু মনি, গোলাম দস্তগীর গাজী, শাজাহান খান, জুনাইদ আহ্মেদ, কামাল আহমেদ মজুমদার, সোলায়মান সেলিম, মো. জাহাংগীর আলম ও এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। আরেক আসামি ফারুক খান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়নি।
চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ কমিশনারকে হাজিরের নির্দেশগণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলামকে ৩০ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে আছেন সাইফুল ইসলাম।