১০০ বছরে পা রেখেছেন আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার হিসেবে খ্যাত দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় মালয়েশিয়ার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে দেশটির খোলনলচে বদলে দিয়েছেন এই বর্ষীয়ান নেতা। ১০০তম জন্মদিনের প্রাক্কালে নিজের দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। সেখানে মাহাথির বলেছেন, গণতন্ত্র যেমন কাজ করেনি, তেমনি আধুনিক সভ্যতাও ব্যর্থ হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু।

দুই দফায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মাহাথির গণতন্ত্র নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, ‘গণতন্ত্র মানুষের তৈরি একটি পদ্ধতি। এটি নিখুঁত নয়। গণতন্ত্রকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে এর থেকে ভালো কিছু পাওয়া যায় না।’ তাঁর মতে, বহুদলীয় গণতন্ত্র বরং দুর্বলতা তৈরি করে।
মাহাথির বলেন, ‘গণতন্ত্রে শুধু দুটি রাজনৈতিক দল থাকলে ভালো হয়। তখন একটি জিতবে, একটি হারবে। এভাবে একটি শক্তিশালী সরকার গঠন সম্ভব। কিন্তু সবাই নেতা হতে চেয়ে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়, সে ক্ষেত্রে কোনো পক্ষই সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না। তাই গণতন্ত্র বহুক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়।’

চলমান আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটে মাহাথির সরাসরি অভিযোগ করেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ এক ধরনের গণহত্যা, আর যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিয়ে তা চালিয়ে যেতে সহায়তা করছে। তিনি আরও বলেন, ‘একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে ক্ষুধা ও যুদ্ধ ব্যবহার করা হচ্ছে, অথচ যুক্তরাষ্ট্র সেই অপরাধীদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। এটা পশ্চিমা সভ্যতার পতনের প্রতিচ্ছবি। আমরা এমন এক সময় পার করছি, যেখানে মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস হয়ে গেছে।’ বিশ্বনেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মালয়েশিয়ার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

নিজের শতবর্ষের দীর্ঘ জীবনের পেছনে রহস্য কী– এমন প্রশ্নের জবাবে মাহাথির বলেন, ‘অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া না করাই ভালো। আমি নিয়মিত শরীরচর্চা করি, মস্তিষ্কের ব্যায়াম যেমন– পড়াশোনা করি, লিখি, কথা বলি, বিতর্ক করি, নিজেকে সক্রিয় রাখি।’ এ সময় ৯৮ বছর বয়সী স্ত্রী সিতি হাসমাহকে সারাজীবনের সঙ্গী হিসেবে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেন মাহাথির।

সাক্ষাৎকারে ভবিষ্যতের মালয়েশিয়া ও মুসলিম বিশ্ব নিয়েও নিজের ভাবনা জানিয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তিনি মনে করেন, মালয়েশিয়ার ভবিষ্যতের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসন গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিম বিশ্বের বিষয়ে আক্ষেপ করে মাহাথির বলেন, ‘ফিলিস্তিনের মতো ইস্যুতেও মুসলিম দেশগুলো একমত হতে পারে না। তাই ওআইসিও  কিছুই করতে পারে না।’

১৯২৫ সালের ১০ জুলাই তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ মালয়েশিয়ার কেদাহ প্রদেশে জন্ম হয় মাহাথিরের। পেশায় চিকিৎসক হলেও মাত্র ২১ বছর বয়সেই রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ১৯৬৪ সালে পার্লামেন্টে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন মাহাথির। এর পর ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশটির ইতিহাসে দীর্ঘতম টানা ২২ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর শাসনামলে মালয়েশিয়া অর্থনৈতিকভাবে অভূতপূর্ব  উন্নতি লাভ করে। ৮০ বছর বয়স পেরিয়েও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে আবারও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়ে দুই বছর পর পদত্যাগ করেন মাহাথির।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম হ থ র বল গণতন ত র র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

এমন তো হবার কথা ছিল না: তারেক রহমান

জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শেষ পর্যন্ত কোনো অগণতান্ত্রিক কিংবা অপশক্তির কাছে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের পথে হাটতে হয় কি-না, এমন শঙ্কাও জানিয়েছেন তারেক রহমান। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে মাঠে থাকা সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এমন বিপদের কথাও স্মরণ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি। আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।’

বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।’

দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তবে তাঁর বিশ্বাস, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।

শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তাঁর দল।

তারেক রহমান বলেন, ‘দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।’

প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব কি পৈতৃক সম্পত্তি
  • ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
  • গণতন্ত্রের পথে সংকট দেখছেন তারেক
  • এমন তো হবার কথা ছিল না: তারেক রহমান
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাই এখন জাতির দাবি
  • জনগণের বৃহত্তর ঐক্য ছাড়া এই ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার পতন হবে না: সাকি