বরগুনায় কমছে না ডেঙ্গু, হাসপাতালে স্যালাইন সঙ্কট
Published: 25th, July 2025 GMT
বরগুনা জেলা জুড়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনো সঙ্কটজনক। এ অবস্থায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্যালাইন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধের সঙ্কট তীব্র হচ্ছে।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। জেলায় মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৪১ জন। তাদের মধ্যে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ১০৩ জন চিকিৎসাধীন। তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩ জন, পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন, বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮ জন, বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুইজন এবং আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনজন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত বরগুনায় সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৫৬৬ জন। জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন ছয়জন, বিভিন্ন হাসপাতালে মারা গেছেন ৩০ জন।
আরো পড়ুন:
যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনা ও গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে সিএমএইচে নৌ উপদেষ্টা
উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ৬০ জন
এই যখন ডেঙ্গুর পরিসংখ্যান, তখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে দেখা দিয়েছে স্যালাইন সঙ্কট।
বরগুনার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন বরগুনা সদরের ধূপতি এলাকার বাসিন্দা গোসাই সনদ (৫১)। তিনি বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। চিকিৎসক নরমালিন স্যালাইন দিয়েছেন প্রতিদিন দুইটা অথচ আমাকে দিচ্ছে একটা। আরেকটা কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে।”
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে আসা লাকুরতলা এলাকার সোলাইমান, থানাপাড়া এলাকার ইউসুফ মুন্সী ও কলেজ রোড এলাকার মাসুম জানান, হাসপাতালে ভর্তি হয়েও বেশিরভাগ ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। সারা বাংলাদেশের মধ্যে বরগুনায় ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে। অথচ এই হাসপাতালে মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কোনো নজরদারি নেই।”
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.
তিনি বলেন, “অনেকে সঠিক সময়ে হাসপাতালে না এসে একদম শেষ পর্যায়ে আসছেন। তখন আমাদের কিছুই করার থাকে না। আবার অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩/৪ লাখ প্লাটিলেট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকছেন। ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এখনো ওষুধ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১০০ শয্যার। তাই সংকট থাকাটা বিচিত্র কিছু নয়।”
তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন লালপাড়া এলাকার মোছিং সান ডিস্ক। তিনি বলেন, “প্লাটিলেট কমে ৪৬ হাজারে এসেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না। স্যালাইন ও ওষুধ সবটাই কিনতে হচ্ছে বাইরের ফার্মেসি থেকে। যাদের সামর্থ্য আছে তারা কিনতে পারছেন। যারা একান্তই গরিব, তারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। নামেই শুধুমাত্র সরকারি, এখানে কোনো সুবিধাই পাওয়া যাচ্ছে না।”
তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুমন পোদ্দার বলেন, “ওষুধের সঙ্কট আছে। আমরা চেষ্টা করছি।”
বরগুনার সিভিলি সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, “এই জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো ভাবেই কমছে না। ওষুধ সঙ্কট কাটাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি।”
তিনি আরো বলেন, “ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা জেলার প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্য সেবা জোরদার করেছি। এখন মানুষকে সচেতন হতে হবে।”
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বর শ ল স ব স থ য কমপ ল ক স স য ল ইন এল ক র বরগ ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ