থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সীমান্ত বিরোধ গত বৃহস্পতিবার চরম রূপ নেয়। এদিন কম্বোডিয়ার সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় থাইল্যান্ড। অভিযোগ তোলে, কম্বোডিয়া রকেট ও কামান দিয়ে হামলা চালিয়েছে। পাল্টাপাল্টি এ হামলায় দুই দেশেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। উভয় দেশ একে অপরকে আগে গুলি চালানোর জন্য দায়ী করছে।

কী নিয়ে বিরোধ

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে এ সীমান্ত বিরোধের সূচনা এক শতাব্দীর বেশি আগে। সেই সময়ে কম্বোডিয়া ফ্রান্সের উপনিবেশ (১৯৫৩ সাল পর্যন্ত) ছিল। ফ্রান্স প্রথমবার দুই দেশের স্থলসীমান্তের মানচিত্র তৈরি করে দেওয়ার পর থেকেই বিরোধের সূত্রপাত।

এরপর ৮১৭ কিলোমিটারজুড়ে (৫০৮ মাইল) বিস্তৃত সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের বিরোধ বারবারই মাথাচাড়া দিয়েছে। আর প্রতিবারই তা দেশ দুটির অভ্যন্তরীণ জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দিয়েছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সর্বশেষ উত্তেজনা শুরু হয় মে মাসে। তখন সীমান্তের একটি বিতর্কিত এলাকায় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে অল্প সময়ের গোলাগুলি হয়। এতে কম্বোডিয়ার এক সেনা নিহত হন। এর পরপরই শুরু হয় পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সর্বশেষ উত্তেজনা শুরু হয় মে মাসে। তখন সীমান্তের একটি বিতর্কিত এলাকায় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে অল্প সময়ের গোলাগুলি হয়। এতে কম্বোডিয়ার এক সেনা নিহত হন। এর পরপরই শুরু হয় পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া।

থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত পারাপারে কড়াকড়ি আরোপ করে। আর কম্বোডিয়া পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে থাইল্যান্ড থেকে ফল ও সবজি আমদানি নিষিদ্ধ করে, থাই চলচ্চিত্র সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় এবং থাইল্যান্ড থেকে আসা ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া আরও কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটি।

গত বুধবার টহল দেওয়ার সময় থাইল্যান্ডের পাঁচ সেনা স্থলমাইনের বিস্ফোরণে আহত হলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। থাই কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, মাইনগুলো নতুন করে পুঁতে রাখা হয়েছে। প্রতিবাদে থাইল্যান্ড তাদের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে কম্বোডিয়ার সঙ্গে সব পথ বন্ধ করে দেয়, দেশটির রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে এবং নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনে।

কম্বোডিয়া এসব পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় জানায়, তারা থাইল্যান্ডের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনছে ও ব্যাংককে তাদের দূতাবাস থেকে সব কম্বোডীয় কর্মী ফিরিয়ে নিচ্ছে। কম্বোডিয়া নতুন স্থলমাইন পুঁতে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে।

কম্বোডিয়ায় কার্যত একদলীয় শাসন চলছে। প্রায় চার দশক ধরে দেশটি শাসন করেছেন ক্ষমতাধর স্বৈরশাসক হুন সেন। ২০২৩ সালে তিনি নিজের ছেলে হুন মানেতের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তবে হুন সেন এখনো রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী। তিনি বর্তমানে সিনেটের সভাপতির দায়িত্বে আছেন।দুই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি

কম্বোডিয়ায় কার্যত একদলীয় শাসন চলছে। প্রায় চার দশক ধরে দেশটি শাসন করেছেন ক্ষমতাধর স্বৈরশাসক হুন সেন। ২০২৩ সালে তিনি নিজের ছেলে হুন মানেতের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তবে হুন সেন এখনো কম্বোডিয়ার রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী। তিনি বর্তমানে সিনেটের সভাপতির দায়িত্বে আছেন।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশেষজ্ঞ ম্যাট হুইলার মনে করেন, হুন সেন সম্ভবত জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দিয়ে নিজের ছেলের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, হুন মানেত এখনো তাঁর বাবার ছায়াতেই শাসন করছেন এবং তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক ভিত্তি খুব দুর্বল।

এদিকে থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা বর্তমানে দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত। তাঁর দলকে সীমান্ত সংঘাতের বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগের মুখে পড়তে হয়েছে।

কম্বোডিয়ার একটি বিএম-২১ গ্র্যাড মাল্টিপল রকেট লঞ্চার মোয়ান থম মন্দির থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান নেয়। ২৫ জুলাই, ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কম ব ড য় র র জন ত ক কম ব ড য ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

আজ মহাকাশে গিয়েছিল লাইকা

১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বরকে মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এদিন তাদের দ্বিতীয় মহাকাশযান ‘স্পুটনিক ২’ উৎক্ষেপণ করে। সেই মহাকাশযানে করে লাইকা নামের একটি কুকুর মহাকাশ ভ্রমণ করেছিল। লাইকা ছিল মহাকাশে যাওয়া পৃথিবীর প্রথম প্রাণী।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯৫০ দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে মহাকাশে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের প্রতিযোগিতা চলছিল। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর স্পুটনিক ১ উৎক্ষেপণ করে বিশ্বকে চমকে দেয়। এর পরপরই স্পুটনিক ২ দ্রুত তৈরি করে দেশটি। এই মহাকাশযানের মাধ্যমে মানুষের আগে প্রাণীকে মহাকাশের প্রতিকূল পরিবেশে বাঁচানো সম্ভব কি না, তা পরীক্ষা করা হয়। সেই পরীক্ষা ছিল ভবিষ্যতে মানুষের মহাকাশযাত্রার জন্য অপরিহার্য।

লাইকা ছিল মস্কোর রাজপথ থেকে ধরে আনা একটি মিশ্র জাতের স্ত্রী কুকুর। মূলত তার শান্ত স্বভাব, ছোট আকার ও প্রশিক্ষণে টিকে থাকার কারণে তাকে বেছে নেওয়া হয়। লাইকাকে একটি বিশেষ চেম্বারে বসে থাকার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। হৃৎস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস পরিমাপের জন্য তার শরীরে যুক্ত ছিল একাধিক সেন্সর। সেই সময়ে মহাকাশযানকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার কোনো প্রযুক্তি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের হাতে ছিল না। আর তাই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করা প্রথম প্রাণী লাইকা মহাকাশে থাকা অবস্থাতেই মারা যায়।

১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর লাইকাকে বহন করা স্পুটনিক ২ মহাকাশযান কাজাখস্তান থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। বিজ্ঞানীরা প্রথমে ঘোষণা করেছিলেন, লাইকা কয়েক দিন কক্ষপথে বেঁচে ছিল। কয়েক দশক পরে ২০০২ সালে, রাশিয়ার বিজ্ঞানী দিমিত্রি মালাশেনকভ প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করেন। উৎক্ষেপণের সময় তীব্র শব্দ এবং কম্পনের কারণে লাইকা আতঙ্কিত হয়ে যায়। মহাকাশযান পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছানোর পরপরই তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে কেবিনের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে চলে যায়। অতিরিক্ত চাপ ও তাপে উৎক্ষেপণের মাত্র পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা পরেই লাইকা মারা যায়।

লাইকার মহাকাশযাত্রা একাধিক কারণে মানব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। স্পুটনিক ২ উৎক্ষেপণ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেও, লাইকার মৃত্যু বিশ্বের দরবারে দেশটিকে সমালোচনার মুখে ফেলে দিয়েছিল।

সূত্র: সায়েন্স ২০ ডটকম

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ মহাকাশে গিয়েছিল লাইকা