অস্থিরতার কয়েকটি ঘটনা, ঘৃণার চাষ ও রাজনৈতিক সংকট
Published: 31st, July 2025 GMT
দেশে একের পর এক অস্থিরতা সৃষ্টির বেশ কয়েকটি ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করলাম। এগুলোর কোনোটিই প্রত্যাশিত ছিল না। অনেকেই এগুলো নির্বাচন যাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুত সময়ে না হয়, তার জন্য পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা সৃষ্টির পেছনে প্রধানত দুটি শক্তিকে দায়ী করা হচ্ছে—একটি হচ্ছে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পলাতক নেতৃত্বের সাংগঠনিক উদ্যোগ; অপরটি হচ্ছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) সুবাদে সমাজে প্রভাব বিস্তারে দক্ষতা অর্জনকারী কিছু প্রভাবক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী। এসব প্ল্যাটফর্ম বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
আপনি যদি কাউকে অপদস্থ বা হেয় করতে চান, তাহলে তার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান সম্ভবত সোশ্যাল মিডিয়ার কোনো একটি প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশে এটি ফেসবুক ও ইউটিউব। বৈশ্বিক পরিসরে অবশ্য এক্স (সাবেক টুইটার) এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে।
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে গণহত্যার শিকার সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোয় এই সোশ্যাল মিডিয়া কী ভূমিকা রেখেছে, তা জাতিসংঘ তদন্তকারীদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার বিরুদ্ধে ২০২১ সালে এ বিষয়ে একটি মামলাও হয়েছে।
বাংলাদেশে এখন ঘৃণা চাষের উর্বর ভূমি হিসেবে এসব মাধ্যমে সুপরিচিত রাজনীতিক থেকে শুরু করে শিল্প-সংস্কৃতি-গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব—সবাই এখন এ ধরনের গণহেনস্তার ঝুঁকির মুখে। সুস্থ আলোচনা, শালীন বিতর্ক, পাল্টাপাল্টি যুক্তির চেয়ে এখন সবচেয়ে বেশি যে চর্চা দেখা যাচ্ছে, তা হলো বিতর্কিত কোনো একটি তকমা লাগানো, অশালীন ভাষার আমদানি, অর্ধসত্য বা খণ্ডিত তথ্যের অপপ্রয়োগ, তথ্যবিকৃতি ইত্যাদির মাধ্যমে ভিন্নমতের প্রবক্তা বা অনুসারীকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা।
এ ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য থাকে প্রতিপক্ষ যেন গণধিক্কারের মতো (মব লিঞ্চিং বা গণপিটুনির সমতুল্য) নিগ্রহের শিকার হন। কোনো কোনো ঘটনার ক্ষেত্রে এ রকম আচরণ যে উসকানির রূপ নিয়ে সহিংসতার জন্ম দিয়েছে, তার অনেক নজির আমাদের সামনে আছে।
রাজনৈতিক বিভাজন তীব্রতর করা, আদর্শিক মতভিন্নতার কারণে প্রতিপক্ষকে ফ্যাসিস্টের দোসর কিংবা রাজাকার তকমা দেওয়া, বিদ্বেষ ছড়িয়ে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের প্রতিশোধ গ্রহণ এবং গোষ্ঠীগত বা ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক তৈরির মাধ্যমে সমাজে উত্তেজনা ছড়িয়ে অস্থিরতা তৈরির প্রবণতা আস্তে আস্তে সবাই রপ্ত করা শুরু করেছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে এমন অনেক কিছুই করা হচ্ছে, যা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। বিশেষত সহিংসতার উসকানি এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।সামাজিকভাবে লজ্জা দেওয়ার বিষয়টি একেবারে নতুন নয়। কিন্তু আমরা কালোবাজারি, ভেজাল খাদ্য বিক্রেতা, টাকা পাচারকারী, ঋণের নামে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারী, ঘুষখোরদের সোশ্যাল বা পাবলিক শেমিং খুব কমই দেখি।
মূলধারার সংবাদমাধ্যমে যখন ‘তিনি গুনে গুনে ঘুষ নেন’ ভিডিও প্রকাশ প্রায়, তখন তা ভাইরাল হয় ঠিকই, কিন্তু তা বছরে এক-দুবারের বেশি ঘটে না। কিন্তু কারও রাজনৈতিক অবস্থান পছন্দ না হওয়ায় তাকে যেমন একসময় খুব সহজেই ‘রাজাকার’ তকমা দেওয়া হয়েছে, এখন এর উল্টোটা ঘটছে। বিএনপি নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে, তাঁরা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চাইছেন। কারও কারও বিরুদ্ধে ভারতের এজেন্ট বলেও তকমা দেওয়া হয়েছে।
গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকার সমালোচনা করায় গত ১৫ বছরে জেলখাটা বুদ্ধিজীবীদের কয়েকজনকেও সোশ্যাল মিডিয়ায় হেনস্তা করার সংঘবদ্ধ চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। অদ্ভুতভাবে ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচারে ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের সমাবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরাও এখন মানবাধিকার ও নারীদের সম–অধিকারের পক্ষে কথা বলায় কিছু বুদ্ধিজীবীকে ‘শাহবাগি’ অভিহিত করছেন।
‘গোপালগঞ্জের সহিংসতার আশঙ্কা অপ্রত্যাশিত ছিল না, কিন্তু প্রস্তুতিও যতটা থাকা দরকার, তা ছিল না।’.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক ত র জন সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।