স্বস্তি এসেছে, ভবিষ্যতের ঝুঁকিও কাটাতে হবে
Published: 2nd, August 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্কহার আগের ৩৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে কমিয়ে আনতে পারার বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই চুক্তিকে ঐতিহাসিক ও সুস্পষ্ট কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে অভিহিত করেছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে মন্তব্য করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এটাকে দেখেছেন বড় ধরনের অনিশ্চয়তার অবসান হিসেবে।
অন্যদিকে বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেছেন, পাল্টা শুল্ক নিয়ে তিন মাস ধরে আমরা একধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলাম। অনিশ্চয়তার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য করা কঠিন। মার্কিন ক্রেতারাও পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। শেষ পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক ৩৫ থেকে কমে ২০ শতাংশ হওয়াটা আমাদের জন্য স্বস্তির।
উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে অধিকাংশ দেশে পাল্টা শুল্ক জারি করেন। যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে কম পণ্য কেনে, সেসব দেশে শুল্কের হার তুলনামূলক বেশি ধার্য করা হয়। বাংলাদেশের জন্য হার ছিল ৩৭ শতাংশ। প্রথম দফা আলোচনার পর মাত্র ২ শতাংশ কমানোয় ব্যবসায়ী মহল গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল।
দ্বিতীয় দফা আলোচনার আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পণ্য আমদানির তাগিদ দেয় ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িংসহ বেশ কিছু পণ্য কেনার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয় ঢাকা। নানামুখী প্রয়াসের পর দ্বিতীয় দফা আলোচনায় আরও ১৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে।
বাংলাদেশে ২০ শতাংশ শুল্কের বিপরীতে ভারতে ২৫ শতাংশ ও পাকিস্তানে ১৯ শতাংশ, ভিয়েতনামে ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশটি। চীনের বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি না হলেও ৩০ শতাংশ শুল্ক চলমান আছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিযোগীদের মধ্যে ভারত ও চীন থেকে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। বর্তমানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়, চীনের পরই। তৃতীয় অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্রাসের সিদ্ধান্ত আশা–জাগানিয়া খবর। একই সঙ্গে প্রশ্নও উঠছে, বাংলাদেশ কিসের বিনিময়ে এই সুবিধা পেল? শক্তিধর দেশটি বাংলাদেশের ওপর অন্যায্য কিছু চাপিয়ে দিয়েছে কি না, যা আমাদের জাতীয় ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থের প্রতিকূল। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সব দেশের সঙ্গেই অবাধে ব্যবসা করার অধিকার আছে। সে ক্ষেত্রে কোনো দেশ বলতে পারে না তোমরা এই পণ্য অমুক দেশ থেকে কিনতে পারবে না। গোপনীয় সমঝোতা স্মারকে যেসব বিষয় যুক্তরাষ্ট্র উপস্থাপন করে, তার সবটা আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়।
অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান বলেছেন, নতুন শুল্কের হার কমানো আশাব্যঞ্জক হলেও আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য প্রধানত তৈরি পোশাকশিল্পনির্ভর। ভবিষ্যতের বিপদ বা ঝুঁকি এড়াতে আমাদের রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে, বাড়াতে হবে সক্ষমতাও।
সবশেষে যে কথাটি বলা প্রয়োজন, দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ক্ষেত্রে আলোচনার সময় অনেক কিছু গোপন রাখতে হয় তৃতীয় পক্ষের কথা ভেবে। কিন্তু চুক্তি হওয়ার পর সেটা জনগণের সামনে প্রকাশ করা উচিত সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির স্বার্থেই। আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিটির আদ্যোপান্ত প্রকাশ করতে দ্বিধা করবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র উপদ ষ ট আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে গাছপালা নিধনের জন্য বন বিভাগ কম দায়ী নয়: উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা
পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বনভূমি উজাড় ও গাছপালা কমে যাওয়ার জন্য বন বিভাগের দায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাঙামাটি শহরের জিমনেশিয়াম মাঠে সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তিনি।
সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে যদি বলা হয় যে আর কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই, তাহলে খুব বেশি ভুল হবে না। ৮০ সাল পর্যন্ত এখানে বন ছিল, গাছপালা ছিল, ঝোপঝাড় ছিল। এই অঞ্চলে বা দেশে গাছপালা নিধনের জন্য বন বিভাগ কোনো অংশ কম দায়ী নয়।
সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের চেয়ে বড় আকারের বনভূমি এখন মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী কিংবা সিলেটে দেখা যায়। পার্বত্য অঞ্চলে এই অবস্থা কেন সৃষ্টি হলো সবার ভাবতে হবে।
পার্বত্য উপদেষ্টা আরও বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে সাধারণত ভাদ্র মাসের প্রথম দিকে শীতের অনুভূতি পাওয়া যেত। এখন কার্তিক মাসেও শীতের অনুভূতি পাওয়া যায় না। যারা আদিকাল থেকে এই অঞ্চলে বসবাস করে আসছে, তারা প্রকৃতি সচেতন ছিল। তাই তাদের ওপর খুব বেশি ভূমি ধস হয়েছে শোনা যায় না। তাদের বাড়িঘরেও হয়নি। প্রকৃতিকে যারা চেনে না, তাদের ওপর ভূমিধস হয়।
বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ। এ ছাড়া বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব এ কে এম আকমল হোসেন আজাদ, রাঙামাটি সার্কেলের বন সংরক্ষক মো. আবদুল আওয়াল সরকার, জেলা পুলিশ সুপার এস এম ফরহাদ হোসেন, সিভিল সার্জন নূয়েন খীসা, দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এসম সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ। এর আগে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করা হয়। ৮ আগস্ট পর্যন্ত এই মেলা চলবে। বৃক্ষমেলায় ২১টি স্টল অংশগ্রহণ করেছে।