চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের নিয়োগের পরীক্ষায় অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলেছেন পরীক্ষা দেওয়া তিন প্রার্থী। তাঁরা এ নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে পরীক্ষার বোর্ড সদস্যদের প্রত্যাহারের দাবি করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবনের তৃতীয় তলায় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। অভিযোগ করা এই তিন প্রার্থী হলেন  বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল নেছা, মহিমা আকতার এবং ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো.

আকিব।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে মো. আকিব বলেন, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় আবেদন করেছিলেন ৪৩ জন। তবে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ২৯ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন ১৩ জন। তবে তাঁদের কাউকে পাস করানো হয়নি। নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের স্বজনপ্রীতির কারণে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমনটি করা হয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন।

সংবাদ  সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, নিয়োগ বোর্ডে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের কোনো শিক্ষককে রাখা হয়নি। বরং অন্য বিভাগ ও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে নিয়োগ পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া লিখিত পরীক্ষার পরে পরীক্ষকদের খাতা পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা শিক্ষক তাঁর পছন্দের প্রার্থীর খাতা ঘুরে দেখেন এবং প্রশ্ন বুঝিয়ে দেন।  সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করলে বিষয়টি প্রমাণ করা সম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীরা বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি ও খাতা মূল্যায়ন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষক। ফলে তাঁর নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই উত্তীর্ণ হয়েছেন, আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ প্রহসনমূলক। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এর ন্যায়বিচার ও যথাযথ সুরাহা চাই।’

আরও পড়ুনচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে দলীয়করণ হচ্ছে, অভিযোগ বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের২৫ জুলাই ২০২৫

এর আগে গত ১৯ এপ্রিল ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে দুই পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের আইন অনুযায়ী এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আগে বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে এ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এমনকি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার বোর্ডেও বিভাগের কোনো শিক্ষক রাখা হয়নি। এসব বিতর্কের মধ্যে দিয়েই গত মঙ্গলবার এ নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছে।

তিন প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে  নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন কাদেরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির কোনো বিষয় আমার চোখে পড়েনি। এ অভিযোগগুলো কতটা বাস্তব, তা জানা নেই। যাঁরা আজ সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাঁরা হয়তো লিখিত পরীক্ষায় বাদ পড়েছেন। নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো শিক্ষকের স্বজনপ্রীতি দেখানোর সুযোগ নেই। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

আরও পড়ুননিয়োগপ্রার্থীর প্রোফাইল লাল করার স্ক্রিনশট ফেসবুকে দিলেন সহ-উপাচার্য১৬ আগস্ট ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ স বজনপ র ত পর ক ষ য় গ পর ক ষ পর ক ষ র

এছাড়াও পড়ুন:

নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে

লোহার ফটক ভাঙার শব্দে চারপাশ কেঁপে উঠল। বিক্ষুব্ধ লোকজন তখন দৌড়ে ঢুকে পড়লেন ভবনের ভেতরে। কয়েক ঘণ্টা আগেও যেসব প্রতিবন্ধক ছিল ক্ষমতার প্রতীক, মুহূর্তেই সেগুলো গুঁড়িয়ে দিল জনতার ঢল।

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের করিডর ভরে গেল কাদামাখা পায়ে হাঁটার শব্দে। কেউ জানালার কাচ ভাঙলেন, কেউ আবার দামি চাদর আর জুতা নিয়ে গেলেন।

নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা যে বাড়ি এত দিন ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, সেদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য তাঁরাই তা দখলে নিলেন।

এ দৃশ্য নেপালের গত সপ্তাহের। আবার এটি শ্রীলঙ্কার ২০২২ সালের কিংবা বাংলাদেশের ২০২৪ সালেরও চিত্র।

এসব আন্দোলনের আসল শক্তি হলো তরুণদের স্বপ্ন দেখা—একটা ভালো রাজনীতি আর ভালো অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কল্পনা করার ক্ষমতা। কিন্তু সেই কল্পনার সঙ্গে বাস্তব জীবনের বড় পার্থক্য তাঁরা বুঝতে পারছেন। স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবের এ ফারাকই তাঁদের ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে।পল স্ট্যানিল্যান্ড, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক

৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) মানুষের দেশ নেপাল, ভারত ও চীনের মাঝখানে অবস্থিত। সেখানকার সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ প্রথাগত নির্বাচনী গণতন্ত্রের চেনা ধারা ভেঙে দিয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশগুলোয় একের পর এক সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ প্রজন্ম বিশ্বকে নতুন এক প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন—দক্ষিণ এশিয়াই কি জেন–জি (জেনারেশন জেড) প্রজন্মের বিপ্লবের কেন্দ্রস্থল?

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পল স্ট্যানিল্যান্ড আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এটা সত্যিই চোখে পড়ার মতো। এখানে একধরনের নতুন অস্থির রাজনীতির জন্ম হচ্ছে।’

গত বৃহস্পতিবার প্রায় ১০ হাজার নেপালি তরুণ–তরুণী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন। এ তরুণ–তরুণীদের অনেকে প্রবাসী। তবে কোনো নির্বাচনী ব্যালটে নয়, বার্তা আদান–প্রদানের মাধ্যম ডিসকর্ডে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বাছাই করেছেন। এর আগে তিন দিনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিবিরোধী বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয় এবং সেনাসদস্য ও পুলিশের দমন–পীড়নে ৭০ জনের বেশি নিহত হন। এখন নেপাল সরকার ঘোষণা করেছে, আগামী মার্চে নতুন নির্বাচন হবে।

প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির জেন–জি প্রজন্মকে উপহাস করার কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর পদত্যাগ দেখিয়ে দিয়েছে—দক্ষিণ এশিয়ার তরুণেরা বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আস্থাহীন হলে নিজেরাই ক্ষমতা হাতে তুলে নিচ্ছেন এবং নিজেদের নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী প্রশাসন কে হবে, তা–ও নির্ধারণ করছেন।

শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলনের পেছনে প্রতিটির নিজস্ব ইতিহাস ও অনন্য প্রেক্ষাপট আছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে মিলও আছে—নতুন প্রজন্ম আর ভাঙা প্রতিশ্রুতি মেনে নিচ্ছে না।

স্ট্যানিল্যান্ড বলেন, এটি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নাটকীয় পরিবর্তন। এ অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক আন্দোলনের সাক্ষী, তবে সরকার পতনের ঘটনা বিরল।

‘এ ধরনের আন্দোলন বিভিন্ন দেশে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থান থেকে আলাদা। দক্ষিণ এশিয়ার সংকট বরাবরই অন্যভাবে সমাধান হয়েছে, এবার সেটা ভিন্নপথে যাচ্ছে’, বলেন স্ট্যানিল্যান্ড।

শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলনের পেছনে প্রতিটির নিজস্ব ইতিহাস ও অনন্য প্রেক্ষাপট আছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে মিলও আছে—নতুন প্রজন্ম আর ভাঙা প্রতিশ্রুতি মেনে নিচ্ছে না।

এ ছাড়া দেশগুলোর আন্দোলন একে অন্যের কাছ থেকেও শিক্ষা নিচ্ছে।

তিন দেশের আন্দোলনের মূল কারণ এক—বৈষম্য আর দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণি। এ শ্রেণি তরুণ প্রজন্মের বাস্তব চাওয়া-পাওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।মীনাক্ষী গাঙ্গুলি, এইচআরডব্লিউর দক্ষিণ এশিয়ার উপপরিচালক কলম্বো থেকে ঢাকা হয়ে কাঠমান্ডু: আন্দোলনের পটভূমি

নেপালে সাম্প্রতিক জেন–জি আন্দোলনের সূত্রপাত সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে। সরকার বলেছিল, প্ল্যাটফর্মগুলোর অপব্যবহার হচ্ছে এবং নিয়ম মেনে নিবন্ধন করছে না। তবে ক্ষোভের প্রকৃত কারণ অন্য—বৈষম্য, দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি; তা–ও এমন একটি দেশে, যেখানে প্রবাসী নেপালিদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির এক–তৃতীয়াংশ অবদান রাখছে।

হাজার হাজার কিশোর–কিশোরী স্কুলের ইউনিফর্ম পরেই রাস্তায় নেমে আসে। ৭০ জনের বেশি নিহত হয়, আহত হয় শত শত।

শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে প্রেসিডেনশিয়াল সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীদের যাওয়া ঠেকাতে সড়ক অবরোধ করে পুলিশের বিশেষ টাস্কফোর্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে