স্টারমারের জন্য নতুন দুঃস্বপ্ন: টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে মিথ্যা বলার অভিযোগ
Published: 18th, September 2025 GMT
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির প্রভাবশালী এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব থাকার বিষয়টি নিয়ে যৌথ অনুসন্ধান করেছে প্রথম আলো ও ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টাইমস। এই যৌথ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে আরেক ব্রিটিশ দৈনিক এক্সপ্রেস।
গাইলস শেলড্রিক লিখিত প্রতিবেদনের শিরোনামে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘স্টারমারের জন্য নতুন দুঃস্বপ্ন: টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে মিথ্যা বলার অভিযোগ’। তবে এক্সপ্রেস মূলত প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিবেদনটি লিখেছে।
এদিকে দ্য টাইমস প্রথম আলোর সঙ্গে যৌথভাবে প্রতিবেদনটি তাদের ছাপা ও অনলাইন সংস্করণে প্রকাশ করেছে। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সময়ে এই প্রতিবেদনে ২৪৫টি মন্তব্য প্রকাশ করেছে দ্য টাইমস।
এক্সপ্রেসে প্রকাশিত প্রতিবেদন এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো:
লেবার পার্টি আবারও নতুন এক সংকটে পড়েছে। কারণ, নতুন কিছু তথ্য পাওয়া গেছে যা টিউলিপ সিদ্দিকের বক্তব্যের সঙ্গে মেলে না। তিনি বলেছিলেন, তাঁকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট দেওয়া হয়নি। কিন্তু ঢাকার কর্মকর্তারা যে নথি পেয়েছেন, তা ভিন্ন চিত্র দেখাচ্ছে।
ঢাকার কর্মকর্তারা খুঁজে পেয়েছেন, লন্ডনে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে টিউলিপ সিদ্দিকের নামে একটি পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছিল, তখন তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর। এ ছাড়া ২০১১ সালের জানুয়ারিতে তাঁর নামে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রও দেওয়া হয়েছিল।
এই নথিগুলোর কপি দ্য টাইমস ও বাংলাদেশের খ্যাতনামা সংবাদপত্র প্রথম আলো হাতে পেয়েছে। ৪৩ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিক এ বছরের জানুয়ারিতে লেবার নেতা স্যার কিয়ার স্টারমারের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তিনি বলেন, তিনি বাধা হয়ে দাঁড়াতে চান না।
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে ঢাকায় তাঁর খালা শেখ হাসিনা-যিনি ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী-অবৈধভাবে তাঁকে জমি দিয়েছেন। দেশের দুর্নীতি দমন কমিশন একে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ বলেছে।
পাসপোর্ট বিভাগের ডেটাবেজে দেখা গেছে, ২০১১ সালের জানুয়ারিতে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে তিনি নিজের পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন। নির্বাচন কমিশনের ডেটাবেজেও তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নম্বর পাওয়া গেছে এবং তাঁর ভোটার নম্বরও সেখানে আছে।
উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ঢাকার সেই বাড়ির, যা তাঁর খালা শেখ হাসিনার নামে ছিল। গত বছর আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের কারণে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন।
টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবীরা বলছেন, পুরো বিষয়টাই ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তৈরি মানহানিকর প্রচারণা। নতুন পাওয়া নথি ও ডেটাবেজের তথ্যগুলো আগে দেওয়া টিউলিপ সিদ্দিকের বক্তব্যের সঙ্গে মেলে না। গত মাসে তিনি প্রসিকিউটরদের দেওয়া অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। প্রসিকিউটররা বলেছিলেন, তাঁকে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে।
ল ফার্ম স্টিফেনসন হ্যারউডের একজন মুখপাত্র ১২ আগস্ট ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন: ‘টিউলিপের কোনো বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি নেই। শিশু অবস্থার পর থেকে তিনি কখনো পাসপোর্টও রাখেননি।’
যখন তাঁকে নথির কপি দেখানো হলো, সিদ্দিকের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে এগুলো ‘জাল’ এবং বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের করা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মানহানিকর প্রচারণা’।
তিনি আরও বলেন, এটি ইচ্ছাকৃত ও মরিয়া চেষ্টা, যার মাধ্যমে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা ও সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র কেবল বাংলাদেশি নাগরিকদের দেওয়া হয়। যারা দেশে জন্মেছে অথবা যাদের বাবা-মা বাংলাদেশি-তাদের নাগরিকত্বের অধিকার থাকে।
টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যে জন্মালেও তাঁর বাবা-মা দুজনই বাংলাদেশি। তাই তিনি দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য।
তবে তিনি আগে একাধিকবার বাংলাদেশি পরিচয় অস্বীকার করেছেন। ২০১৭ সালে একবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল-একজন ব্রিটিশ আইনজীবীকে যিনি বাংলাদেশে বন্দী, তাঁর বিষয়ে তিনি কোনো হস্তক্ষেপ করবেন কি না। তখন তিনি বলেন, ‘আপনি কি আমাকে বাংলাদেশি বলছেন? আমি ব্রিটিশ। খুব সাবধানে কথা বলুন, কারণ আমি ব্রিটিশ এমপি। আমি বাংলাদেশি নই।’
বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের আদালতে অনুপস্থিত অবস্থায় বিচারাধীন। অভিযোগ আছে, তিনি তাঁর খালাকে প্রভাবিত করে তাঁর মা, ভাই ও বোনের জন্য জমি বরাদ্দ করিয়েছেন। তিনি এসব অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করে বলছেন, ‘এটি নিপীড়ন ও এক প্রহসন।’
আরও পড়ুনটিউলিপ এখনো বাংলাদেশের ভোটার, আছে পাসপোর্ট–এনআইডিও৮ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট উল প স দ দ ক র ব দ য ট ইমস ক র কর র জন য প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।
তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।
জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।
‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’
সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’
রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে