শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশে জুলাই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি জবানবন্দিতে তুলে ধরেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, যেহেতু শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান ছিলেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আসাদুজ্জামান খান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান ছিলেন, সেহেতু তাঁদের নির্দেশেই হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তাঁরা ক্ষমতা পাকাপোক্ত ও নিরঙ্কুশ করতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো জবানবন্দি দেন নাহিদ ইসলাম।

বিচারপতি মো.

গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ নাহিদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এ সময় ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১ নম্বর সমন্বয়ক ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ২০২৪ সালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়।

ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাইয়ে সংঘটিত ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংসতা বন্ধে সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্ট প্রধানেরা (বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) কোনো ব্যবস্থা নেননি। এই ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, নৃশংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন তিনি।

নাহিদের জবানবন্দি গতকাল শেষ হওয়ার পর তাঁকে জেরা করেন আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। এই জেরা আগামী রোববারও চলবে।

শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলার অপর দুই আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে এই মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি

জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, গত বছরের ৪ আগস্ট তাঁরা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল ৬ আগস্ট (২০২৪ সাল)। পরে তাঁরা জানতে পারেন, ৬ আগস্টের কর্মসূচি ব্যর্থ করার উদ্দেশ্যে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়াসহ সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। তাঁদের হত্যা বা গুমও করা হতে পারে। তাই তাঁরা মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি সফল করার উদ্দেশ্যে সমন্বয়কদের পক্ষে মাহফুজ আলম (এখন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা) অন্যান্য ছাত্রসংগঠন এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে লিয়াজোঁ করেছিলেন।

নতুন সরকার গঠনে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা

জবানবন্দির একপর্যায়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে তাঁরা নতুন সরকার গঠনের জন্য ড. ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেন। তাঁকে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব দেন।

জবানবন্দির বিরতিতে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে নাহিদকে প্রশ্ন করেন, ‘জনাব নাহিদ ইসলাম, ৫ আগস্ট সরকার পতন ঘটে। কিন্তু ৪ আগস্ট কি আপনারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে যোগাযোগ করেছেন?’

এর জবাবে নাহিদ বলেন, ‘আমরা যেহেতু ৩ আগস্ট এই সরকার (আওয়ামী লীগ সরকার) পতনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এক দফা, ফলে এই সরকারকে আমরা আর মেনে নিচ্ছি না। আমাদের একটি নতুন সরকারের জন্য তখন থেকেই পরিকল্পনা হচ্ছিল। সেই প্রেক্ষাপটেই আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রাথমিকভাবে ভেবে নিয়েছিলাম, অন্য আরও অনেকের সাথে পরামর্শ করে।…যদি আন্দোলন সফল হয়, যদি সরকারকে আমরা উৎখাত করতে পারি, তাহলে নতুন সরকারের প্রধান হিসেবে হয়তো আপনাকে (অধ্যাপক ইউনূস) দায়িত্ব নিতে হতে পারে। আমরা সেই প্রস্তাব আপনাকে (মুহাম্মদ ইউনূস) দিয়ে রাখছি।’

গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। অন্যদিকে গত বছরের ৮ আগস্ট ফ্রান্স থেকে দেশে ফেরেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সেদিনই তাঁর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

‘সেনাবাহিনী রাস্তা ছাড়লে শাহবাগে অবস্থান নেন’

৫ আগস্ট সারা দেশের মানুষ ঢাকায় আসতে থাকে উল্লেখ করে জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা শাহবাগে অবস্থান গ্রহণের চেষ্টা করেন। শহীদ মিনার ও চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। সেনাবাহিনী একপর্যায়ে রাস্তা ছেড়ে দিলে তাঁরা শাহবাগে অবস্থান গ্রহণ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে শাহবাগ জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

নাহিদ বলেন, তাঁরা শুনতে পান ঢাকার প্রবেশমুখগুলো যেমন যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে লাখ লাখ মানুষ প্রবেশ করছেন। শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে তাঁরা গণভবনের উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে সংবাদ পান, গণবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে পালিয়ে গেছেন। আরও শুনতে পান, ছাত্র–জনতা গণভবনে প্রবেশ করেছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, সেদিন (গত বছরের ৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠন এবং সব রাজবন্দীর মুক্তির দাবি জানান। তাঁরা কোনো ধরনের সেনাশাসন বা সেনাসমর্থিত শাসন মেনে নেবেন না বলেও ঘোষণা দেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম ব হত য ক ণ ড গত বছর র ৫ আগস ট প রস ত শ হব গ

এছাড়াও পড়ুন:

মতবিনিময় সভা: নির্বিঘ্নে দুর্গাপূজা উদ্‌যাপনে সবার সহযোগিতা আহ্বান

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্‌যাপনে সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা সেনানিবাসের ১০ সিগন্যাল ব্যাটেলিয়ন। দুষ্কৃতিকারীর বিষয়ে বা কোনো অঘটনের আশঙ্কা থাকলে, সে বিষয়ে প্রশাসনকে জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের ১০ সিগন্যাল ব্যাটেলিয়নে ভাষানটেক আর্মি ক্যাম্প আয়োজিত শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। এ সভায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ১০ সিগন্যাল ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হামিদ বলেন, দুর্গাপূজার সময় কিছু দুষ্কৃতিকারী পরিস্থিতি নস্যাৎ করার চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা কাউকে সেই সুযোগ দেবো না।

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু প্রতিমা ভাঙচুর নয়, পূজায় আসা ব্যক্তিদের হয়রানি বা অসম্মান করা অপরাধ। কেউ এমন ঘটনায় জড়িত থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী—আর্মি, পুলিশ, বিজিবি—সবাই মিলে কাজ করছে।’

আরও পড়ুনদুর্গাপূজায় নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থায় থাকবে পুলিশ: আইজিপি১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সভায় ভাষানটেক থানা জামায়াতে ইসলামীর নেতারা জানান, গত বছরের মতো এবারও দুর্গাপূজায় এলাকাবাসীর জন্য মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করবে সংগঠনটি। নেতারা জানান, চার-পাঁচ দিন পূজামণ্ডপ এলাকায় ভিড় থাকে। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই আমরা চিকিৎসক ও ওষুধসহ মেডিকেল ক্যাম্পের ব্যবস্থা করব।

এ প্রসঙ্গে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হামিদ বলেন, যে কোনো উদ্যোগ পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে নিতে হবে। কারণ, এটি তাঁদের আয়োজন, তাঁদেরই জানাতে হবে যে, তাঁরা কোন ধরনের সহায়তা চান।

আরও পড়ুনসবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে: ডিএমপি কমিশনার৯ ঘণ্টা আগে

লেফটেন্যান্ট কর্নেল হামিদ আরও বলেন, ‘আমরা ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত আছি। কোনো সমস্যা হলে জানাবেন। সবাই মিলে যেন সুন্দরভাবে এ আয়োজন শেষ করতে পারি।’

মতবিনিময় সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগ ও ভাষানটেক থানার কর্মকর্তা, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুনপূজামণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থানীয় নেতা–কর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ