Prothomalo:
2025-09-19@04:14:31 GMT

সংরক্ষণে দরকার আলাদা জরিপ

Published: 19th, September 2025 GMT

বৈশ্বিকভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় অবস্থানে। গরমের কারণে দেশে শারীরিক ও মানসিক যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তার পরিমাণ প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। তাপপ্রবাহ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের গবেষণার এই ফলাফল নিশ্চিত করেই আমাদের নীতিনির্ধারকদের জন্য বড় একটি সতর্কবার্তা। শুধু কথার ফুলঝুরি নয়, পরিবেশ সুরক্ষায় দরকার জোরালো অঙ্গীকার। অথচ আমরা দেখছি, ভূমি মন্ত্রণালয়ের জরিপের ভুলের কারণে চট্টগ্রাম নগর এবং হাটহাজারী ও সীতাকুণ্ডের প্রায় দেড় শ পাহাড় বিলীনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর চেয়ে উদ্বেগজনক ও আত্মঘাতী বিষয় আর কী হতে পারে।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশ সার্ভে বা বিএস জরিপে পাহাড় ও টিলাকে ভুলভাবে শণখোলা, নাল, খিলা ও বাড়ি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করার কারণে কীভাবে সেগুলো ধ্বংস হচ্ছে। অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পাহাড়–টিলা কাটা নিষিদ্ধ। শুধু জাতীয় স্বার্থে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় কাটা যেতে পারে। পাহাড়–টিলার সুরক্ষায় এমন সুস্পষ্ট আইন থাকার পরও তা কাটা হচ্ছে এবং প্লট আকারে বিক্রি ও স্থাপনা নির্মাণও হচ্ছে।

পরিবেশের সুরক্ষা দিতে না পারার ক্ষেত্রে সমস্যাটা আইনের নয়, বরং প্রয়োগের। ব্যক্তিস্বার্থে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে সমষ্টির ক্ষতি ডেকে আনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ভূমিকা এমনিতেই ঠুঁটো জগন্নাথের মতো। এরপর আবার জরিপের ভুলের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে পাহাড়–টিলা কাটা হলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত মামলা হলেও আদালতে সেটা প্রমাণ করা ও প্রতিকার পাওয়া কঠিন। একই কারণে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পাহাড়-টিলায় কোনো ধরনের ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে পাহাড়–টিলা অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। ফলে পাহাড়–টিলা কেটে সাবাড় করা মানে প্রাকৃতিক এই ইকোসিস্টেমের অঙ্গহানি ঘটানো। এর ফলে সাম্প্রতিক সময়ে অবধারিতভাবেই ভূমিধস, বন্যা ও জলাবদ্ধতার মতো সমস্যাগুলো স্থায়ী রূপ নিতে দেখা যাচ্ছে। কেননা পাহাড় কাটা হলে জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যায়, খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট হয়। সবুজের আচ্ছাদন কমে যায়, খাল-নালা ভরাট হয় এবং গরম বেড়ে যাওয়ার মতো সংকট তৈরি করে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক এস এম সিরাজুল হকের একটি গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রাম নগরে ১৯৭৬ সালে মোট পাহাড় ছিল যেখানে ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার, ২০০৮ সালে তা কমে ১৪ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটারে নেমে আসে। গত ১৭ বছরে এর পরিমাণ যে কতটা কমেছে, সেটা বলা বাহুল্য।

প্রশ্ন হচ্ছে, ১৯৭০ সালের বিএস জরিপের ভুল কেন ৫৫ বছরেও সংশোধন করা হয়নি? পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো পাহাড়–টিলা কাটা বন্ধে কতটা আন্তরিক? পরিবেশ সুরক্ষা কথার কথা হিসেবে থেকে যাওয়ার চরম মাশুল এরই মধ্যে আমাদের দিতে হচ্ছে। তাপপ্রবাহ, অতিবৃষ্টি, বন্যা, অনাবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে ঘন ঘন।

রাষ্ট্রীয় হোক, ব্যক্তিমালিকানাধীন হোক, সব ধরনের পাহাড় ও টিলা কাটা বন্ধ করতে হবে। পাহাড়–টিলা সংরক্ষণে আলাদা জরিপ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স রক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

সুখী দম্পতিরা কেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি কম পোস্ট করেন

ছবি: কবির হোসেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ