কুমিল্লার হোমনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিমূলক একটি পোস্ট করার জেরে চারটি মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় জড়িত ও উসকানিদাতাদের কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য, জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে হোমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তাপস কুমার সরকার বাদী হয়ে থানায় মামলাটি করেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হলেও তাঁদের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম আজ শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুনমাইকে ঘোষণা দিয়ে কুমিল্লার ৪ মাজারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ২০ ঘণ্টা আগে

গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে উপজেলার আসাদপুর গ্রামে পৃথক চারটি মাজারে এসব হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার শিকার চারটি মাজার হচ্ছে আসাদপুর গ্রামের আলেক শাহের বাড়িতে অবস্থিত তাঁর বাবা কফিল উদ্দিন শাহের মাজার, একই গ্রামের আবদু শাহের মাজার, কালাই (কানু) শাহের মাজার এবং হাওয়ালি শাহের মাজার। হাওয়া বেগম নামের এক নারী ‘হাওয়ালি শাহ’ মাজার পরিচালনা করেন। তবে সেখানে কোনো ব্যক্তি সমাহিত নেই। ওই বাড়িতে মাজার সদৃশ স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, কফিল উদ্দিনের নাতি মহসিনের বিরুদ্ধে গত বুধবার সকালে নিজের ফেসবুক আইডিতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.

)-কে নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট করার অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় ওই দিনই তাঁকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল সকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। গতকাল সকালে প্রথমে মহসিনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে কফিল উদ্দিন শাহের মাজার ভাঙচুর করা হয়। পরে তাঁদের একটি টিনশেড ও দুটি টিনের বসতঘরে ভাঙচুর শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ঘরটিতে থাকা সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরে অন্য তিনটি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটে।

এসব হামলার পর আসাদপুর গ্রামে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আজ দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। প্রতিটি মাজারের সামনে ও ভেতরে দায়িত্ব পালন করছেন তাঁরা। মাজারগুলোতে ভক্তরা গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবি করেছেন।

কফিল উদ্দিন শাহ মাজারের ভক্ত জয়নাল আবেদিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে মহসিন আমাদের নবীকে নিয়ে কটূক্তি করেছে, আমরা তাঁর ফাঁসি চাই, বিচার চাই। কিন্তু তাঁর অপরাধে কেন মাজারে হামলা হবে? এই ঘটনার পর থেকে আমরা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।’

আরও পড়ুনএমন ঘটনা আগে দেখেননি, বিস্মিত–আতঙ্কিত আসাদপুরের বাসিন্দারা৭ ঘণ্টা আগে

চারটি মাজারে হামলার পরও ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা কেন মামলা করেননি, তা জানতে চাইলে কুমিল্লার সহকারী পুলিশ সুপার (হোমনা-মেঘনা সার্কেল) আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন। ঘটনার পর আমরা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছি। কিন্তু মাজারগুলোর পক্ষ থেকে কেউ মামলা করতে আসেনি। পরে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে কাজ করছে পুলিশ।’

মামলায় আসামিদের সংখ্যা কেন উল্লেখ করা হয়নি, তা জানতে চাইলে হোমনা থানার ওসি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক শ মানুষ মিলে কাছাকাছি সময়ে চারটি মাজারে হামলা চালিয়েছেন। ঘটনার সময় আমরা কেউই ছিলাম না। এ জন্য আসামিদের সংখ্যাও আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। যার কারণে মামলায় আসামিদের সংখ্যা অসংখ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

মহসিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল কুমিল্লার আদালতের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, গতকাল রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়নি। আগামী রোববার বা সোমবার শুনানি হতে পারে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আস ম দ র ম হ ম মদ মহস ন ঘটন য় গতক ল র ঘটন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

অসুস্থ ব্যক্তির সেবা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল

প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেন, “হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে সেবা করোনি।” বান্দা বলবে, “হে প্রভু! আপনি তো সব সৃষ্টির প্রতিপালক, আমি কীভাবে আপনার সেবা করব?” তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, “আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, তুমি তার সেবা করোনি। তুমি যদি তার সেবা করতে, তাহলে আমার সেবা করা হতো!”’ (মুসলিম)

নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, ‘এক মুমিনের ওপর অপর মুমিনের ছয়টি হক রয়েছে। এর অন্যতম হলো কোনো মুসলমান অসুস্থ হলে তার সেবা করা।’ তিরমিজি ও নাসায়ি)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো বান্দা তার অসুস্থ মুসলিম ভাইকে দেখতে যায় অথবা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যায়, তখন একজন ফেরেশতা আকাশ থেকে উচ্চস্বরে বলেন, “তুমি ভালো থাকো, তোমার কর্ম ভালো হলো, তুমি জান্নাতে স্থান করে নিয়েছ।”’ (তিরমিজি)

রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন, তখন তার শিয়রে বসতেন। এরপর তিনি সাতবার বলতেন, ‘আসআলুল্লাহাল আজিম, রাব্বাল আরশিল আজিম, আন্ ইয়াশফিয়াক।’ (অর্থ আরশে আজিমের মালিক মহান আল্লাহর কাছে তোমার সুস্থতার জন্য দোয়া করছি।)

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যদি তার মৃত্যু নির্ধারিত না হয়ে থাকে, তবে সে অবশ্যই সুস্থ হয়ে যাবে।’ (তিরমিজি: ২০৮৩, আবু দাউদ: ৩১০৬)

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘আমাদের কারও অসুখ (কষ্ট) হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর ডান হাত রোগীর গায়ে বুলিয়ে দিয়ে বলতেন, “আজহিবিল-বা’স, রব্বান-নাস, ওয়াশফি, আনতাশ-শাফি, লা শিফা’আ ইল্লা শিফাউক, শিফাউঁ লা ইউগাদিরু সাকামা।”’ (অর্থ: হে মানুষের রব! এই ব্যক্তির কষ্ট দূর করে দিন। তাকে সুস্থ করে দিন। নিরাময়ের মালিক কেবল আপনিই। আপনার নিরাময় ছাড়া আর কোনো নিরাময় নেই। এমন নিরাময় দিন, যা কোনো রোগকে অবশিষ্ট রাখে না।)

(বুখারি: ৫৭৫০, মুসলিম: ২১৯১, ইবনে মাজাহ: ৩৫২০, মুসনাদে আহমাদ: ২৪৭৭৬, নাসায়ি: ৭৪৬৬)

নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন রোগীকে দেখতে গেল, যার শেষ সময় এখনো আসেনি, সে যেন তার সামনে উপরিউক্ত দোয়াটি সাতবার পড়ে; তাহলে তাকে নিশ্চয়ই রোগমুক্তি দান করা হবে।’ (আবু দাউদ: ৩১০৬)

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালবেলায় কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়, ৭০ হাজার ফেরেশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। আর বিকেলে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন।’ (তিরমিজি: ৯৬৭)

আরও বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থ ব্যক্তি বা কোনো মুসলমান ভাইকে দেখতে যায়, তখন একজন ঘোষক তার জন্য ঘোষণা করতে থাকেন—হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আনন্দিত হও, তোমার পদক্ষেপ বরকতময় হোক, জান্নাতে তুমি একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থান লাভ করবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে তাকে সালাম দেবেন, তার শারীরিক অবস্থা ও বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে অহেতুক দীর্ঘক্ষণ সেখানে অবস্থান করবেন না। (বায়হাকি)

অসুস্থ ব্যক্তি যেন হতাশ ও নিরাশ হয়ে না যায়, এ জন্য তাকে অনুপ্রাণিত করতে হবে, অভয় ও সাহস দিয়ে বলতে হবে, ‘লা বা’সা তুহুরুন, ইনশা আল্লাহ।’ (অর্থ: ভয় নেই, ইনশা আল্লাহ ভালো হয়ে যাবে।) (বুখারি: ৩৬১৬, তিরমিজি)

সম্ভব হলে অসুস্থ ব্যক্তি ও তার পরিবারের জন্য উপহার হিসেবে কিছু হাদিয়া নিয়ে যাওয়া উচিত। প্রয়োজনবোধে তাকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম ব্যক্তি সে-ই, যে মানুষের উপকার করে।’

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অসুস্থ ব্যক্তির সেবা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল