গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের মধ্যে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তের দাবি
Published: 19th, September 2025 GMT
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নিহতদের মধ্যে যাঁদের বেওয়ারিশ হিসেবে রায়েরবাজার কবরস্থানে গণকবর দেওয়া হয়েছে তাঁদের মরদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে ‘জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মিলে এই সংগঠন গড়ে তুলেছেন।
আজ শুক্রবার দুপুরে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে জুলাই শহীদদের গণকবরের পাশে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এ দাবি জানান। এ সময় শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে তাঁরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের গণকবর জিয়ারত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটির চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের গণকবরে থাকা শহীদদের পরিচয় শনাক্তের দাবি জানিয়ে আসছি। প্রতিটি মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করে তাঁদের পরিবারের কাছে মর্যাদার সঙ্গে হস্তান্তর করতে হবে। কিন্তু অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। আমাদের সন্তানের রক্তের ওপর গঠিত সরকারই যদি এভাবে শহীদদের অবহেলা করে, তাহলে ভবিষ্যতে কী হবে, সেটি নিয়ে আমরা আশঙ্কায় আছি।’
জুলাই ২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি সাধারণ সম্পাদক রবিউল আওয়াল বলেন, ‘এক বছর ধরে ১১৪টি পরিবার এখনো তাদের স্বজনদের কবর শনাক্ত করতে পারেনি। প্রতিনিয়ত তারা স্বজনদের শেষ চিহ্নটুকু খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সরকার তাদের সহযোগিতা করছে না। উচ্চ আদালত থেকে কবর শনাক্ত করে পরিবারকে বুঝিয়ে দিতে রায় দিলেও সরকার গড়িমসি করছে। আমরা অবিলম্বে এসব মরদেহ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। আমরা আর কোনো টালবাহানা দেখতে চাই না।’
মোহাম্মদপুরে আন্দোলনে অংশ নিয়ে নিখোঁজ হন গাড়িচালক মাহিন মিয়া। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় ধরে মাহিন মিয়ার মরদেহ খুঁজে পাননি স্ত্রী জেসমিন আক্তার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গত বছরের ১৮ জুলাই আমার স্বামী মোহাম্মদপুরে আন্দোলনে অংশ নেন। কিন্তু তাঁকে আর খুঁজে পাইনি। তাঁর লাশটাও দেখতে পাইনি। পরে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, অনেকগুলো লাশ নাকি রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। কিন্তু এখানে তাঁর কবর কোনটা, সেটি আজও জানতে পারিনি। আমার সন্তানকে তাঁর বাবার কবরটা পর্যন্ত দেখাতে পারিনি।’
যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনে অংশ নিয়ে মারা যান পোশাক ব্যবসায়ী সোহেল রানা। কিন্তু আজও তাঁর মরদেহ খুঁজে পায়নি পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে সোহেল রানার মা রাশেদা বেগম বলেন, ‘এক বছর ধরে আমার ছেলের লাশের সন্ধান পাইনি। কবরটা কোথায় দেওয়া হয়েছে, সেটিও জানতে পারিনি। আমাদের আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে?’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র য় রব জ র কবরস থ ন পর ব র র এক বছর দ র পর মরদ হ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদপুরে জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা, হাসপাতাল বন্ধ
চাঁদপুর পৌর কবরস্থানে নবজাতক দাফনের সময় নড়ে ওঠা এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় শহরের তালতলা দি ইউনাইটেড হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় ফারুক হোসেন গাজী (৪৫)। এই ঘটনায় আগামী দুই দিনের মধ্যে রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন হাসপাতালটিতে নানা অবৈধ কার্যক্রম চলে আসছে। ওই নবজাতকের জন্মও হয় এই হাসপতালে। জীবন্ত নবজাতক দাফনের চেষ্টা করার ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নবজাতককে কবরস্থানে নিয়ে আসা ওয়ার্ড বয় ফারুক গাজীকে গ্রেপ্তার করে।
এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন পৌর কবর স্থানের কেয়ারটেকার মো. শাহজাহান মিয়াজী।
এদিকে দি ইউনাইটেড হাসপাতালে এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি বলেন, “হাসপাতালে এসে ব্যবস্থাপনায় জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া মিলেনি। চিকিৎসক নেই, হাসপাতালের প্যাথলজি ও ওটির সঠিক পরিবেশ নেই। একই সাথে পোস্ট অপারেটিভ রোগীর জন্য কোন সুব্যবস্থা নেই এবং হাসপাতালের কাগজপত্রও নবায়ন নেই।”
তিনি আরো বলেন, “প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং ওটি, প্যাথলজি ও সংশ্লিষ্ট কক্ষ সীলগালা করা হয়েছে। একই সাথে রোগীদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্য স্থানে সেবার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের অভিযানে পরিচালিত কার্যক্রম সিভিল সার্জন বরাবর প্রদান করা হবে। সিভিল সার্জন হাসপাতালের নিবন্ধন বাতিলসহ পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।”
এ ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল হাসান ফয়সাল, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান। অভিযানে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ সহযোগিতা করেন।
অপরদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত শেষে হাসপাতালের ড্রাগ সনদসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরীক্ষা করে দেখেন জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান।
ঢাকা/অমরেশ/এস