Prothomalo:
2025-10-15@14:48:45 GMT

সওদাগরের টিয়া

Published: 15th, October 2025 GMT

টিয়া পাখিটা নেই। না, উড়ে যায়নি। মাটিতে নিথর পড়ে আছে তার তুলতুলে দেহটি।

পাশে বসা উশার সওদাগর। টিয়াটির মনিব।

টিয়ার জন্য বুক চাপড়ে কাঁদছেন তিনি।

কেন?

তার ওপর ভীষণ রেগেছিলেন সওদাগর। তাই হুঁকোর নলচে দিয়ে আঘাত করেছিলেন টিয়ার মাথায়। ওমনি তার মৃত্যু হয়।

টিয়াটি ছিল অতি উপকারী। তার কারণেই বিত্তশালী হয়েছেন এই সাঁওতাল সওদাগর। অথচ তার হাতেই প্রাণ গেল উপকারী টিয়াটির।

ঘুরেফিরে সেসব কথাই বারবার মনে পড়ে সওদাগরের।

সওদাগরের বাড়ি দরিয়ার ওপাড়ে। সাঁওতাল অঞ্চলের একমাত্র মহাজন তিনি। তার ছিল শত শত শূকর। শূকর পালন করা এবং তা দিয়ে চাষবাস করাই ছিল তার কাজ। সওদাগরের ছিল একটি টিয়া পাখি। মোক্তার হিসেবে কাজ করত ওই পাখি। সওদাগরও খুব ভালোবাসত তাকে।

ভীষণ রেগেছিলেন সওদাগর। তাই হুঁকোর নলচে দিয়ে আঘাত করেছিলেন টিয়ার মাথায়। ওমনি তার মৃত্যু হয়। টিয়াটি ছিল অতি উপকারী। তার কারণেই বিত্তশালী হয়েছেন এই সাঁওতাল সওদাগর। অথচ তার হাতেই প্রাণ গেল উপকারী টিয়াটির। ঘুরেফিরে সেসব কথাই বারবার মনে পড়ে সওদাগরের।

যখন রাত নামত, তখন স্বর্গপুরীতে বসত দেবতাদের আসর। সে আসরে দেবতারা শলাপরামর্শ করত পৃথিবীর নানা বিষয় নিয়ে।

সওদাগর সে সময় টিয়াটিকে পাঠিয়ে দিতেন স্বর্গপুরীতে। দেবতারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন চাষাবাদ বিষয়ে। পৃথিবীতে কখন কোন দিক থেকে বৃষ্টি করা হবে, তা–ও তখন স্থির করা হতো। টিয়াটি স্বর্গপুরী থেকে সে সিদ্ধান্তগুলো জেনে আসত চুপিচুপি। পৃথিবীতে নেমেই সে তা বলে দিত সওদাগরকে।

সওদাগরও তখন সেদিকেই ছুটতেন শূকরগুলো নিয়ে। বৃষ্টির কারণে সেখানে তখন চাষাবাদ করা খুব সহজ হতো। আর ফসলও ফলত অনেক।

কোনো কোনো বছর দেবতারা বৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিতেন পাহাড় অঞ্চলে। স্বর্গপুরী থেকে টিয়া সে কথা শুনে এসে জানিয়ে দিত সওদাগরকে। শূকরগুলো নিয়ে সওদাগরও তখন ছুটত পাহাড়ি অঞ্চলের দিকে। চাষবাস করে সেখানে অনেক ফসল ফলাত।

এভাবে কোন বছর কোন দিকে বৃষ্টি হবে, টিয়ার মাধ্যমে সওদাগর তা আগেই জেনে যেতেন। ফলে চাষবাস করতে করতে দিনে দিনে সওদাগর খুব ধনী হয়ে গেলেন।

একবার এক রাতে টিয়া মোক্তার গেল স্বর্গপুরীতে। সওদাগর তখন শূকরগুলো নিয়ে চাষাবাদ করতে গিয়েছেন অনেক দূরে।

রাতে স্বর্গপুরীতে বসে দেবতাদের বিচার সভা। সেখানে দেবতারা অন্য রকম এক সিদ্ধান্ত নেয়।

কী সেই সিদ্ধান্ত?

‘এ বছর যেসব চাষি আখের চাষ করছে, তারা যদি সেই আখ কেটে তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়, তবে সেই ধোঁয়া খেতে স্বর্গপুরী থেকে নেমে আসবে শত শত শারোখ পাখি। সেই পাখিগুলো যে মলত্যাগ করবে, তা ডিরমিতে জমিয়ে ভরে রাখলে একসময় তা সোনা হয়ে যাবে।’

কোন বছর কোন দিকে বৃষ্টি হবে, টিয়ার মাধ্যমে সওদাগর তা আগেই জেনে যেতেন। ফলে চাষবাস করতে করতে দিনে দিনে সওদাগর খুব ধনী হয়ে গেলেন। একবার এক রাতে টিয়া মোক্তার গেল স্বর্গপুরীতে। সওদাগর তখন শূকরগুলো নিয়ে চাষাবাদ করতে গিয়েছেন অনেক দূরে।

দেবতাদের এমন সিদ্ধান্ত শুনে টিয়া ফিরে আসে পৃথিবীতে। কিন্তু তখনো দূর দেশ থেকে ফিরে আসেননি সওদাগর। মনিবের দেরি দেখে টিয়া নিজেই কাজে লেগে যায়।

সওদাগরের বিস্তীর্ণ খেতে আখের চাষ ছিল। সে বছর ফসলও হয়েছিল খুব বেশি।

টিয়া মোক্তার কিষান ও বাগালদের ডেকে এনে বলল, ‘যাও, তোমরা খামার তৈরি করো। কাল থেকে সব আখ কাটতে হবে।’

কিষান ও বাগালরা তার কথামতো খামার তৈরি করল।

পরদিন টিয়া কিষানদের জিজ্ঞেস করল, ‘কি হে, তোমাদের খামার তৈরি হয়ে গেছে তো?

তারা বলল, ‘হ্যাঁ, তোমার কথামতো সব হয়েছে।’

টিয়া বলল, ‘তাহলে যাও, আখ কাটা শুরু করো। কেটে সব আখ খামারে নিয়ে এসো।’

কাটা আখ সব খামারে আনা হলো।

টিয়া তখন বলল, ‘এবার সব আখে আগুন লাগিয়ে দাও।’

টিয়ার নির্দেশ শুনে কিষানদের চোখ কপালে ওঠে! কিন্তু তার কথা অমান্য করার সাধ্যি কার! টিয়ার নির্দেশমতো তারা কাটা আখে আগুন লাগিয়ে দিল।

বিশ দিন, বিশ রাত ধরে খামারে সেই আখ পুড়তে লাগল। সে সময় আখের ধোঁয়া খেতে স্বর্গপুরী থেকে নেমে এল শত শত শারোখ পাখি। মনের আনন্দে তারা খামারে থাকল কয়েক দিন। ফলে পাখিগুলো অনেক মলত্যাগও করল।

টিয়া তখন কিষান ও বাগালদের আদেশ করল মলগুলোকে এক জায়গায় জড়ো করে তা একটি ডিরমিতে ভরে রাখতে। তারা তা–ই করল।

কয়েক দিন পর বাড়ি ফিরল সওদাগর। তিনি কিষান ও বাগালদের ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আখ কি সব কাটা হয়ে গেছে?’

তারা বলল, ‘তোমার টিয়া মোক্তার সব আখ কাটিয়েছে। কাটা আখ সব খামারে আনা হলে টিয়া তাতে আগুন লাগিয়ে দিতে বলে। আমরাও তা–ই করি। কাটা আখ বিশ দিন, বিশ রাত আগুনে পুড়েছে। পোড়া আখের ধোঁয়া খেতে স্বর্গপুরী থেকে নেমে এসেছিল অনেক শারোখ পাখি। সেই পাখিগুলো যে মল ত্যাগ করেছিল, টিয়ার আদেশে আমরা তা জড়ো করে ভরে রেখেছি একটি ডিরমিতে। ওই যে, ওখানে ওই ঘরে রাখা আছে ওই ডিরমি।’

হুঁকো টানতে টানতে সওদাগর সব কথা শুনছিলেন। কৃষানদের কথায় তিনি টিয়ার ওপর ভীষণ রেগে গেলেন। ডাকা হলো টিয়া মোক্তারকে। সে স্বর্গপুরীর সিদ্ধান্তের কথা বলতে চাইল। কিন্তু সওদাগর তার কোনো কথাই শুনলেন না। বরং ক্ষিপ্ত হয়ে হুঁকোর নলচে দিয়ে আঘাত করলেন টিয়ার মাথায়। আর এভাবেই সওদাগরের হাতে মৃত্যু হলো উপকারী টিয়ার।

তার মৃত্যুর পরই সওদাগর গেলেন ডিরমিটি দেখতে। সেটি রাখা ছিল একটি ঘরের মধ্যে। তিনি গিয়ে ডিরমির ঢাকনাটা খুলতেই অবাক হয়ে গেলেন। দেখলেন পাখির মলগুলো সব সোনা হয়ে জ্বলজ্বল করছে। সোনার আলোয় আলোকিত হয়ে যায় গোটা ঘর।

সওদাগর তখন নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। উপকারী টিয়ার জন্য তিনি বুক চাপড়ে কাঁদতে থাকলেন। কিষান ও বাগালরা ছুটে গেল টিয়ার কাছে। পানি খাইয়ে তাকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকল। কিন্তু না, টিয়া আর মুখ তুলল না।

সত্যটা না জেনেই সাঁওতাল সওদাগর উপকারী টিয়াকে ভুল বুঝেছিলেন। তাই হারিয়েছেন টিয়ার মতো উপকারী বন্ধুকে। তার শোকে কাঁদতে কাঁদতে দূর দেশে চলে গেলেন উশার সওদাগর।

উপকারী টিয়ার এই আখ্যান শুনে শুনে সাঁওতাল সমাজের শিশুরা এখনো পাখিটিকে নিয়ে মনের পটে নানা ছবি আঁকে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আগ ন ল গ য় শ করগ ল উপক র

এছাড়াও পড়ুন:

সোনারগাঁয়ে দৈনিক খবরের কাগজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

দৈনিক খবরের কাগজের পত্রিকার ৩য় বছরে পদার্পন উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করা হয়েছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সোনারগাঁও রিপোর্টার ক্লাবে আনুষ্ঠানিক ভাবে কেক কাটার মধ্য দিয়ে এ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করা হয়।

দৈনিক খবরের কাগজের পত্রিকার সোনারগাঁ উপজেলা প্রতিনিধি ইমরান হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁ রিপোটার্স ক্লাবের সভাপতি আব্দুস সাত্তার প্রধান। 

এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের অসিত কুমার দাস, যুগান্তর পত্রিকার সাংবাদিক আল-আমিন তুষার, নয়া দিগন্ত পত্রিকার সাংবাদিক হাসান মাহমুদ রিপন, দৈনিক মানবজমিনের আবু বকর সিদ্দিক, সমকাল পত্রিকার সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন রতন, দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার রবিউল হোসেন, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম, দৈনিক আমাদের সময়ের পত্রিকার মিজান রহমান, দৈনিক যায়যায়দিনের কামরুজ্জামান রানা, কালবেলা পত্রিকার সাংবাদিক রুবেল মিয়া, বাংলা টিভির সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম। 

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, সাংবাদিক মনির হোসেন, শাহিন সাকি, আকাশ মিয়া, কবির হোসেন, ডালিম হোসাইন, আরাফাত হোসেন সিফাত, তৌরভ হোসেন, রাশেদুল হাসান রাসেল, হিরুসহ স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা দৈনিক খবরের কাগজের পত্রিকায় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনসহ আগামীর জন্য উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ