ছবি: প্রথম আলো

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে রাকসু, রাত পোহালেই ভোট

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রচারণা শেষ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাত ১২টায়। প্রায় ২০ দিনের প্রচারণা শেষে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ।

এর মাধ্যমে দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পূরণ হতে যাচ্ছে রাবি শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। আর প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে ৩৫ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা রাকসু।

আরো পড়ুন:

কাল ভোট, চলছে রাকসু ভবন প্রস্তুতের কাজ

রাকসু নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে ১০ সদস্যের কমিটি

এদিকে, ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ  করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন চলাকালে নিরাপত্তার জন্য ২ হাজার পুলিশ, ছয় প্লাটুন বিজিবি ও ১২ প্লাটুন র‍্যাব মোতায়ন করেছে প্রশাসন। ক্যাম্পাসের গেটগুলোতে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। ভোটগ্রহণের দিন, তার আগের ও পরেরদিন বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

৪৩ পদে লড়ছেন ৯১৮ জন প্রার্থী

নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন। রাকসুর ২৩টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৭ জন, যার মধ্যে নারী ২৬ জন। এছাড়া সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের পাঁচটি পদে ৫৮ জন এবং হল সংসদ নির্বাচনের ১৫টি পদে মোট ১৭টি হলে ৫৯৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, যা রাকসুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ১১ হাজার ৩০৫ জন এবং ছাত্র ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন। নয়টি ভবনে ১৭ কেন্দ্রের ৯৯০টি বুথে প্রত্যেক ভোটারের রাকসু ও হল সংসদের মোট ৪৩টি পদে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকছে।

যেখানে ভোট দেবেন শিক্ষার্থীরা

এবারই প্রথম আবাসিক হলের বাইরে রাকসু ও সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধি ও হল সংসদের ভোটগ্রহণ হচ্ছে। ক্যাম্পাসের নির্ধারিত নয়টি ভবনে (৯৯০টি বুথ) শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন।

সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী একাডেমিক ভবনে ভোট দেবেন জুলাই-৩৬ ও রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা (৪ হাজার ৬৬৫ ভোট)। মমতাজ উদ্দিন কলা ভবন নির্ধারণ করা হয়েছে মন্নুজান হলের জন্য (২ হাজার ৩৭৮ ভোট)। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের তিনটি কেন্দ্রে ভোট দেবেন তাপসী রাবেয়া, বেগম খালেদা জিয়া, রহমতুন্নেসা হলের শিক্ষার্থীরা (৪ হাজার ২৮২ ভোট)।

এছাড়া, জাবির ইবনে হাইয়ান বিজ্ঞান ভবনে দুটি কেন্দ্রে ভোট দেবেন শহীদ হবিবুর রহমান ও শামসুজ্জোহা হলের ভোটাররা (৪ হাজার ২৫৫ ভোট)। জামাল নজরুল বিজ্ঞান ভবনের দুটি কক্ষে ভোট দেবেন বিজয়-২৪ ও নবাব আবদুল লতিফ হলের ভোটাররা (২ হাজার ৬৪৭ ভোট)।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু অ্যাকাডেমিক ভবনে ভোট দেবেন ফজলুল হক ও মতিহার হলের ভোটাররা (২ হাজার ৮৬৪ ভোট)। জগদীশ চন্দ্র ভবনে ভোট দেবেন মাদার বখশ ও সোহরাওয়ার্দী হলের ভোটাররা (৩ হাজার ৭৫৫ ভোট)। 

অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে সৈয়দ আমীর আলী ও শাহ মখদুম হলের শিক্ষার্থীদের (৩ হাজার ৪২ ভোট) ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ভোটারদের মানতে হবে যেসব নিয়ম

নির্বাচন কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীদের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক ভোটারকে শিক্ষার্থী পরিচয়পত্র সঙ্গে আনতে হবে। এক কেন্দ্রের ভোটার অন্য কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পূর্বে ভোটার তালিকায় নাম, ভোটকেন্দ্র ও টেবিল নম্বর যাচাই করে নিতে হবে। ভোট প্রদানের পূর্বে আঙ্গুলে অমোচনীয় কালি দেওয়া হবে।

এছাড়া তিনটি করণীয় ও চারটি বর্জনীয় বিষয় ভোটারদের মেনে চলতে বলা হয়েছে। এগুলো হলো- শান্তিপূর্ণভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে হবে; আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি ও নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে; পছন্দের প্রার্থীর নামের পার্শ্বের চারকোনা ঘরে সরবরাহকৃত সাইনপেন দিয়ে ক্রস (×) চিহ্ন দিতে হবে: ভোট প্রদান শেষে ভোটকেন্দ্রের ৫০ মিটারের মধ্যে অবস্থান করা যাবে না; ভোটকেন্দ্রে প্রচার-প্রচারণা করা যাবে না; ভোটকেন্দ্রে বিশৃংখলা বা ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না; ভোটকেন্দ্রে মোবাইল, ক্যামেরা বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস সঙ্গে আনা যাবে না।

সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ৭ ঘণ্টা চলবে এই ব্যালট যুদ্ধ। তবে ৪টার মধ্যে যারা ভোটকেন্দ্রের আঙিনায় প্রবেশ করবেন, যত সময়ই লাগুক না কেন তারা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। সব কেন্দ্রে একজন ভোটার গড়ে ১০ মিনিট সময়ের মধ্যে কোনো রকম বিঘ্ন ছাড়াই ভোট দিতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছে নির্বাচন কমিশন।

ভোট গণনা হবে ছয়টি অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) মেশিনে। বিশ্ববিদয়্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জায়গায় এলইডি স্ক্রিনে ফল গণনা প্রদর্শিত হবে। সবশেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে সব কেন্দ্রের মোট ফল ঘোষিত হবে।

ভোটগ্রহণ শেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ভোট গণনার পর ফলাফল ঘোষণা করা হবে। ভোট গণনার পুরো প্রক্রিয়া সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকবে।

শীর্ষপদে এগিয়ে যারা

এবারের রাকসু ভোটে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে অন্তত ১১টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। এর বাইরে স্বতন্ত্র হিসাবে লড়ছেন প্রার্থীদের আরেকটি অংশ। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং স্বতন্ত্র কয়েকজন প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন বলে জরিপ ও শিক্ষার্থীদের আলোচনায় উঠে এসেছে। এর বাইরে রাকসুর একমাত্র নারী ভিপি প্রার্থী তাসিন খান, আধিপত্যবাদ বিরোধী ঐক্য, ছাত্র-অধিকার পরিষদ ও বামজোট সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরাও আলোচনায় রয়েছেন।

জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক মানবাধিকার গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি সংস্থা, সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ এক সংবাদ সম্মেলনে রাকসু নিয়ে একটি জরিপের ফল প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে, শীর্ষ তিন পদে সবকটিতেই এগিয়ে রয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল। জরিপে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্হানে অবস্থান করছে যথাক্রমে স্বতন্ত্র ও ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের প্রার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ২৮৪ আবাসিক ও অনাবাসিক সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে জরিপ পরিচালনা করেছে সোচ্চার। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৯.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী রাকসুতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ছাত্রীদের মধ্যে এর হার ৬৯.৪ শতাংশ, ছাত্রদের মধ্যে ৮৬.৫ শতাংশ।

৮৫.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। ৫৫.৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন রাকসু নির্বাচনে ডাকসু ও জাকসু ফলাফলের প্রভাব পড়বে।

জরিপ অনুযায়ী, ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ ভিপি পদে ৩৬.৫ শতাংশ, জিএস ৩১.৭ এবং এজিএস ৩৩.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ ভিপি পদে ২.৩ শতাংশ,  জিএস পদে ২.৬ শতাংশ এবং এজিএস পদে ৬.১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এছাড়া ভিপি পদে ১০.৩ শতাংশ, জিএস পদে ২০.১ শতাংশ এবং এজিএস পদে ১২.৩ শতাংশ শিক্ষার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দেবেন বলে মতামত জানিয়েছেন।

হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস

ভোটকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা গেছে উৎসবের আমেজ। এবারের রাকসু ভোটে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে অন্তত ১১টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। এর বাইরে স্বতন্ত্র হিসাবে লড়ছেন প্রার্থীদের আরেকটি অংশ। নির্বাচনে এবার অনেকটা ভিন্ন পরিস্থিতি। কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না শীর্ষ তিন পদে কে জয়ী হবেন। তবে ধারণা করা হচ্ছে রাকসুর শীর্ষ তিন পদসহ অধিকাংশ পদে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ।

তবে সবার নজর ভিপি ও জিএস পদের দিকে। সহ সভাপতি (ভিপি) পদে ছাত্রশিবির মনোনীত মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ও ছাত্রদল সমর্থিত শেখ নূর উদ্দীন আবীরের মধ্যে মূল লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ছাত্র অধিকারের মেহেদী মারুফও আছেন আলোচনায়।

আর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রশিবির মনোনীত ফাহিম রেজার সঙ্গে মূল লাড়াই হতে পারে সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দীন আম্মারের। তবে ছাত্রদলের নাফিউল ইসলাম জীবনও আলোচনায় রয়েছেন। সে ক্ষেত্রে এ পদে হতে পারে ত্রিমুখী লড়াই। এজিএস পদে ছাত্রদলের জাহীন বিশ্বাস এষার সঙ্গে শিবিরের সালমান সাব্বির তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সরেজমিন ক্যাম্পাস ঘুরে রাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সর্বোচ্চ ১৫ ঘণ্টার ভেতরে ফলাফল

রাকসুর নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এরপর সব কেন্দ্রের ব্যালট পেপার নিয়ে আসা হবে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে। ভিন্ন ভিন্ন বাক্সের ব্যালট বের করে ১০০টি করে আলাদা বান্ডেল করা হবে। প্রতিটি বান্ডেল ওএমআর মেশিনে দিয়ে গণনা করা হবে। এছাড়া বিশেষজ্ঞ প্যানেল আধুনিক এ ফলাফল পর্যবেক্ষণ করবেন। 

সর্বমোট তিনটি ধাপে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি হবে। এভাবে একটি হলের ফলাফল তৈরি হলে অন্য হলেরটা শুরু হবে। ১৭টি সব ফলাফলের কাজ সম্পন্ন হতে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা লাগতে পারে।

ভোটকেন্দ্রে থাকবে সিসিটিভি, সরাসরি ফলাফল প্রদর্শন ও কেন্দ্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, ১৭টি হলের জন্য ১৭টি কেন্দ্রে ৯৯০টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রের ৪০০ গজের একটি বলয় করে চৌহদ্দি নির্মাণ করা হবে। এর ভেতর কোনো প্রার্থী প্রবেশ করতে এবং প্রচার চালাতে পারবেন না। প্রতিটি কেন্দ্র থাকবে সম্পূর্ণ সিসিটিভির আওতায়।

তিনি জানান, প্রার্থীরা ভোটারদের যে প্রার্থী তালিকা দেবেন, সেটা নির্বাচনী প্রচার শেষ হওয়ার পরে না দেওয়ায় নিরুৎসাহিত করা হলো। ভোটগ্রহণ শেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ভোট গণনা করা হবে। এখানে সাংবাদিকরা তাদের নিজস্ব সংবাদ মাধ্যমে সম্প্রচার করতে পারবেন। এছাড়া ভোট গণনার সব প্রক্রিয়া মিলনায়তনের সামনে বড় স্ক্রিনে দেখানো হবে।

তিন স্তরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জাল

রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন সামনে রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। ভোটের দিন ২ হাজার পুলিশ, ১২ প্লাটুন র‍্যাব, ছয় প্লাটুন বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থা, বিএনসিসি ও স্কাউট সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন বলে জানিয়েছেন আরএমপি কমিশনার আবু সুফিয়ান।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান তিনটি প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টরা পরিচয়পত্র প্রদর্শনের পর তারা প্রবেশ করতে পারবেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, “আমরা চাই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এজন্য তিন বাহিনীর সঙ্গে আমাদের নিয়মিত সমন্বয় হচ্ছে। হলগুলোতে যাতে কোনো বহিরাগত না থাকে বা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।”

ইতিহাসের পাতায় রাকসু

১৯৫৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৩ বছর পর প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৫৬-৫৭ মেয়াদে। তখন এই সংসদের নাম ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (রাকসু)। ১৯৬২ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ রাকসু নামে যাত্রা শুরু করে। এরপর নির্বাচনের হয়েছে মাত্র ১৪ বার।

সর্বশেষ ১৯৯০ সালে রাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন রুহুল কবির রিজভী। তিনি রাবি ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র। 

১৯৬২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সময়ে ২৮বার নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়েছে মাত্র ১৪ বার।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) হিসেবে নির্বাচিত হন হায়দার আলী, নূরুল ইসলাম ঠান্ডু, ফজলুর রহমান পটল, ফজলে হোসেন বাদশা, রাগিব আহসান মুন্না। ৯০-এর পর থেকে রাকসু যেন অমাবস্যার চাঁদ হয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন সময় ছোটখাটো আন্দোলন, সর্বশেষ ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনের পর কিছু দাবি উঠলেও রাকসু আর শেষমেশ বাস্তবায়িত হয়নি।

এবার রাকসুতে ছাত্রদল ও শিবির সমর্থিতসহ মোট ১১টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনে ২৩টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৭ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ভিপি পদে ১৮, জিএস পদে ১৩ এবং এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৬ জন। এছাড়া বাকি ২০টি পদে ২০০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এছাড়া সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের পাঁচটি পদে ৫৮ জন প্রার্থী এবং হল সংসদ নির্বাচনের ১৫টি পদের বিপরীতে ১৭টি হলে মোট ৫৯৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রাকসু ও সিনেট নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ এবং পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন।

পুনর্বিন্যস্ত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৬ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গণনা শেষে সেদিনই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, “আমরা খুবই আশাবাদী এবং নির্বাচনী পরিবেশও অত্যন্ত সুন্দর। ভালো লাগছে এটা দেখে যে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই প্রচার চালাচ্ছে। টুকটাক যে দুই একটা ব্যত্যয় ঘটছে না তা-না। তবে বড় কোনো ঘটনা এখনো ঘটেনি।”

তিনি বলেন, “সিন্ডিকেট থেকে যে নির্বাচন কমিশন করে দেওয়া হয়েছে, সেটা অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা এখনো পর্যন্ত ধৈর্য রেখে কাজ করছেন। এটা যারা উপলব্ধি করতে পারছেন না, তারা শীঘ্রই বুঝতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন নানারকম অপপ্রচার, খারাপ কথা হজম করেছেন শুধু শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে।”

তিনি আরো বলেন, “আচরণবিধির বিষয়টা সবার খেয়াল রাখা উচিৎ। এখানে সবাই সচেতন নাগরিক, সুতরাং বারবার এই কথাটা বলতেও খারাপ লাগে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে রাকসু প্রয়োজন কোথায় সেটা আমদের বুঝতে হবে। আগে শিক্ষার্থীদের নেতাদের গুণে চলতে হত। কিন্তু রাকসু হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের আর নেতাদের গুণে চলতে হবে না।”

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ