ব্যতিক্রম এক মিলনমেলা হয়ে গেল যশোরে। আওয়ামী লীগ শাসন আমলে মামলা, জেল-জুলুম ও হামলায় রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে এই মিলনমেলার আয়োজন করা হয়।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) জেস গার্ডেন পিকনিক স্পটে যশোর সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মিলনমেলায় নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীরা তাদের স্বজনদের নিয়ে অংশ নেন। পাশাপাশি চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, ছাত্র প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মিলনমেলায় উপস্থিতি ছিলেন। দীর্ঘদিন পর রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের একসঙ্গে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হন নেতাকর্মীরা। নেতাদের দাবি, এ উদ্যোগ রাজনৈতিক সহকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে সহায়ক হবে।
আরো পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় জামায়াত-বিএনপির সংঘর্ষে আহত ৩০
মুকসুদপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ২ পক্ষের মামলা, সংবাদ সম্মেলন
মিলনমেলায় নির্যাতনের শিকার অনেকেই স্মৃতিচারণ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাদের একজন যশোর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক ইউনুচ আলী তারা বাবু।
তিনি বলেন, “২০১৪ সালের ২৭ মার্চ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারী পুলিশ। ডিবি অফিসে নিয়ে পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে পুলিশ। ওইদিনই অপারেশন করে আমার পা কেটে ফেলতে হয়। মিথ্যা অস্ত্র ও নাশকতার মামলায় আমাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। ক্র্যাচে ভর করেই এখন চলতে হচ্ছে। আমার নামে পেন্ডিংসহ ১৬টি মামলা দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পর আজকের মিলনমেলায় আমন্ত্রণ পাওয়ায় খুশি হয়েছি।”
যশোর সদরের লেবুতলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হায়দার আলী বলেন, “২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট নিয়ে সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলাম। পরে পুলিশ স্থানীয় বাজার থেকে তুলে এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও নাশকতা মামলার আসামি করে কারাগারে পাঠায়। দীর্ঘ দুই বছর তিন মাস কারাভোগের পর বাড়ি ফিরলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতনে জর্জারিত ছিলাম। নির্যাতিত নেতাকর্মীদের নিয়ে এই মিলনমেলার আয়োজন করায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, “ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যশোর সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপির অনেক নেতাকর্মী রাজপথে ছিলেন। অনেকে মিথ্যা মামলায় জেলে গেছেন। আবার অনেকে শহিদ হয়েছেন। পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অনেকেই। যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের সম্মান জানানোর জন্য এই মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “বিএনপি মনে করে, ফ্যাসিবাদের পতনের শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমরা বারবারই সমমনা রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আহ্বান জানিয়েছি। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সবাই অংশ নিয়েছেন। তাই শুধু দলীয় নেতাকর্মী নয়, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, ছাত্রপ্রতিনিধি, নারী নেত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্মান জানানোর জন্য আজকের মিলনমেলায় আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তাদের আত্মত্যাগকেও আমরা সম্মান জানাচ্ছি। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ না থাকলে কাঙ্খিত পরিবর্তন সম্ভব হবে না। এই আয়োজনের মাধ্যমে সেই বার্তা দিতে চাই।”
ঢাকা/রিটন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ মূলত আইনজীবীদের পেশাজীবনের অনুসরণীয় বিধিমালা। এ আইন থেকে আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় দুটি প্রশ্ন আসবে। উত্তর দিতে হবে একটি। নম্বর থাকবে ১০।
প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আইনটি কেমন হতে পারে। মূলত বার কাউন্সিলের গঠন, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা এবং একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজের প্রতি, মক্কেলের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা এ আইনে বলা হয়েছে। বাস্তবধর্মী ও পেশাজীবনে অতি চর্চিত একটি আইন হলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২। এ আইন থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।
যেমন বার কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হয়, বার কাউন্সিলের কার্যবালি কী, সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হন, কতগুলো কমিটি রয়েছে, কমিটির কাজ কী কী—এগুলো পড়তে হবে। অনেকেই আছে বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোশিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। এটি ভালো করে রপ্ত করতে হবে। এমন প্রশ্ন হরহামেশা পরীক্ষায় আসে।
এ ছাড়া বার ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যাবলি, আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের জন্য কী কী ধরনের শাস্তি রয়েছে, বার কাউন্সিল কি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে—বিষয়গুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। অনুচ্ছেদ ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩২ এবং বিধি ৪১, ৪১ক ও ৫০–এ এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। সেগুলো ভালো করে পড়তে হবে। অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা, একজন আইনজীবী হিসেবে আরেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে।
পেশাগত বিধি অংশে রচনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন পেশাগত বিধি এবং নীতিমালার আলোকে আদালতের প্রতি, মক্কেলের প্রতিসহ আইনজীবীদের প্রতি ও জনসাধারণের প্রতি একজন আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পর্যালোচনা করতে বলা হয়। বর্তমান ঢাকা বারসহ বেশ কয়েকটি বার অ্যাসোশিয়েশনে এডহক কমিটি রয়েছে। এডহক বার কাউন্সিলের গঠন ও ফাংশনস সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। এগুলো ভালো করে পড়তে হবে।
অনেক সময়ে আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরসংক্রান্ত মুসাবিদা করতে দেওয়া হয়। তাই এই মুসাবিদা নিয়মিত অনুশীলন করবেন। মনে রাখবেন, মামলার মুসাবিদা ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মুসাবিদার ধরন কিন্তু এক নয়। তাই যেকোনো ভালো একটি বই থেকে ফরমেটটি দেখে নেবেন এবং অনুশীলন করবেন। একই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করবেন। এ আইন থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন রিপিটও হয়।
একটি বিষয় মনে রাখবেন, আইনটি সহজ বলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ, কৃতকার্য হওয়ার জন্য এই ১০ নম্বর অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।