এআই নিয়ে নতুন পরিকল্পনা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর
Published: 13th, January 2025 GMT
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ৫০ দফার পরিকল্পনা প্রকাশ করতে যাচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ‘বৈশ্বিক নেতা’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। স্টারমারের এই পরিকল্পনা ‘দেশ গড়ার দশক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পরিকল্পনাটির নাম ‘এআই অপরচুনিটিস অ্যাকশন প্ল্যান’। স্থানীয় সময় আজ সোমবার এই পরিকল্পনা উন্মোচন করে ভাষণ দেওয়ার কথা স্টারমারের।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এবং দেশটির বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিবিষয়ক বিভাগ গতকাল রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এআই প্রবৃদ্ধি অঞ্চল (গ্রোথ জোন) গড়ে তোলা হবে। এসব অঞ্চল মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, প্রথম এআই প্রবৃদ্ধি অঞ্চলটি গড়ে তোলা হবে অক্সফোর্ডশায়ারের কুলহামে। এসব প্রবৃদ্ধি অঞ্চলে তথ্যকেন্দ্রগুলোর জন্য দ্রুত পরিকল্পনা অনুমোদন এবং জ্বালানি গ্রিডে আরও ভালো প্রবেশাধিকারের সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।
পুঁজিবাদী ম্যাট ক্লিফোর্ডের নেতৃত্বে গত বছর যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সরকার কমিশন গঠন করেছিল। ওই কমিশনের প্রতিবেদনের ৫০টি সুপারিশের সব কটি গ্রহণ করেছেন কিয়ার স্টারমার। পরিকল্পনায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এআই কম্পিউটিং সক্ষমতা ২০ গুণ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে একটি জাতীয় তথ্য পাঠাগার (ডেটা লাইব্রেরি) এবং একটি নিবেদিতপ্রাণ এআই শক্তি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার কথাও বলা আছে।
কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘আমাদের দেশের অভূতপূর্ব পরিবর্তনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এই শিল্পের জন্য এমন একটি সরকার প্রয়োজন, যারা তাদের পাশে থাকবে, কিছু না করে বসে থাকবে না এবং সুযোগগুলো হাতছাড়া করতে দেবে না। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে আমরা চুপ করে থাকতে পারি না।’
যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শুন্য শতাংশে আটকে ছিল। বছরখানেকের মধ্যে আবারও মন্দার কবলে পড়বে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি—এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
এই পরিস্থিতিতে সংকট উত্তরণের পথ হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিল্প থেকে এক দশকের বেশি সময়ে প্রতি বছর ৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের অর্থনৈতিক অর্জনের পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এটা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, প্রযুক্তির উৎকর্ষে প্রতিবছর ১ দশমিক ৫ শতাংশ হারে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে পারবে যুক্তরাজ্য।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত দক্ষতায় বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাজ্য। শুরুতে চীনের অবস্থান। এর পরেই আছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বখ্যাত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ২০২৩ সালের ‘গ্লোবাল এআই ভাইব্রেন্সি র্যাঙ্কিং’-এ এটা বলা হয়েছে।
নতুন পরিকল্পনার বিষয়ে কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা হলো যুক্তরাজ্যকে বিশ্বের বুকে নেতৃত্বের আসনে নিয়ে যাওয়া।’ তাঁর মতে, এই পরিকল্পনা দেশটিতে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বাড়াবে। মানুষের পকেটে আরও বেশি অর্থ ভরবে। সরকারি কাজের ধরন বদলে দেবে। আর পরিবর্তনগুলো এই সরকার আনছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।