গাজায় আবারও হামলা জোরদার ইসরায়েলের
Published: 19th, October 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় আবারও হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। রোববার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা লড়াই বন্ধে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর ফলে উপত্যকাটিতে স্থায়ী শান্তির আশা দেখা দিয়েছিল। তবে এ ঘটনার পর সে আশা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে এসেছে। ইসরায়েল ও হামাস এ হামলার দায় একে অপরের ওপর চাপাচ্ছে।
একজন ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজার একাধিক স্থানে ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে হামাস হামলা চালিয়েছে। হামলায় রকেট, গ্রেনেড ও স্নাইপার ব্যবহার করেছে তারা। এটি যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন। জবাবে ইসরায়েল রাফায় বিমান হামলা চালিয়েছে।
তবে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ইজ্জাত আল রিশেক বলেন, তাঁরা যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু ইসরায়েল বারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে বলে তাঁর অভিযোগ।
আল রিশেক বা ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা কেউই গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে গাজার গণমাধ্যম দপ্তর গতকাল শনিবার জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর ইসরায়েল ৪৭ বার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। এ সময় তাদের হামলায় ৫১ জন নিহত ও অন্তত দেড় শ জন আহত হয়েছেন।
হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডস গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলছে। তাদের কাছে রাফায় সংঘর্ষের কোনো খবর নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা চুক্তিতে থাকা সব বিষয় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গাজা উপত্যকার সব এলাকায় যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা। আমাদের কাছে রাফায় সংঘর্ষের কোনো খবর নেই। কারণ, এগুলো দখলদার বাহিনীর (ইসরায়েল) নিয়ন্ত্রণাধীন রেড জোন। গত মার্চ মাস থেকে সেখানে আমাদের অবশিষ্ট গ্রুপগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য হামাসকে অভিযুক্ত করেছেন।
এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, হামাসের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। তিনি গাজা উপত্যকায় সশস্ত্র গোষ্ঠীদের স্থাপনা লক্ষ্য করে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত মিসরের সঙ্গে রাফা সীমান্ত ক্রসিংসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। ফলে দুর্ভিক্ষপীড়িত গাজা উপত্যকায় বড় পরিসরে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
গতকাল শনিবার নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাফা সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ থাকবে। সোমবার থেকে মিসরে ফিলিস্তিনের দূতাবাস আবারও চালু হচ্ছে—এমন ঘোষণা আসার পরপরই ইসরায়েল এ কথা জানিয়ে দেয়।
তবে হামাস বলেছে, রাফা ক্রসিং বন্ধ থাকায় তাদের কাছে থাকা জিম্মিদের মরদেহ হস্তান্তর করতে অনেক দেরি হতে পারে। সংগঠনটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাফা ক্রসিং বন্ধ হলে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া নিখোঁজদের খুঁজে বের করতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের প্রবেশ বন্ধ থাকবে। এর ফলে মরদেহ শনাক্তে ফরেনসিক টিমের প্রবেশ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল আকস্মিক হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে। এর জেরে ওই দিন থেকেই গাজায় নৃশংস হামলা চালায় ইসরায়েল। তাদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন বলে গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে সম্প্রতি দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ অবসানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর আগে কয়েক ধাপে জিম্মিদের মুক্তি দেয় হামাস।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, হামাসের কাছে থাকা অবশিষ্ট জীবিত ও মৃত জিম্মিদের ইসরায়েলের কাছে ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়। বিনিময়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া হবে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। এখনো হামাসের কাছে ৪৮ জিম্মি রয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র কর মকর ত ইসর য র ইসর
এছাড়াও পড়ুন:
আদেশে কী থাকবে, ভিত্তি কী হবে, ঠিক করছে কমিশন
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ আদেশের ভিত্তি কী হবে, এই আদেশে কী থাকবে—এসব নির্ধারণে কাজ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এটি নিয়ে রোববার অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন।
তবে ওই আদেশে কী থাকবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করে আদেশের একটি খসড়া শিগগির কমিশনের কাছে উপস্থাপন করবেন বলে ঐকমত্য কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
গত শুক্রবার জুলাই জাতীয় সনদে সই হলেও এখন পর্যন্ত সনদ বাস্তবায়নের উপায় ঠিক হয়নি। সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত। কিন্তু গণভোটের ভিত্তি কী হবে, গণভোটের সময় ও গণভোটের প্রশ্ন কী হবে—এসব বিষয়ে মতপার্থক্য আছে। বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারিত না হওয়ায় সনদে সই করেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ ছাড়া বামধারার চারটি দলও এখনো সনদে সই করেনি। বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে এই মাসের মধ্যে সরকারকে সুপারিশ দেবে ঐকমত্য কমিশন।
ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, একটি বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট এবং আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ করার পথে এগোচ্ছে কমিশন। এটিকে ভিত্তি ধরে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তৈরির কাজ চলছে। কমিশন মনে করে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য শুরুতে একটি বিশেষ আদেশ লাগবে। এই আদেশে কী কী থাকবে এবং আদেশের ভিত্তি কী হবে, তা সুনির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন। না হলে রাজনৈতিক দলগুলো সন্তুষ্ট হবে না।
এই বিষয়ে রোববারের বৈঠকে আলোচনা হয়। বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকভাবে মনে করছেন, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মূলত এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। সে হিসেবে বিশেষ পরিস্থিতিতে গণ-অভ্যুত্থান বা জনগণের অভিপ্রায়ের মূলে অন্তর্বর্তী সরকার এই বিশেষ আদেশ জারি করতে পারে। সেটা আদেশের পটভূমিতে উল্লেখ করা যেতে পারে। আদেশের মধ্যে কী কী বিষয় থাকবে, তার আইনি ভাষা (টেক্সট) কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। এগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আরও কাজ করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই আদেশ হবে গণভোটের ভিত্তি। আদেশে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া উল্লেখ থাকবে। কিন্তু গণভোট পরিচালনার জন্য আলাদা একটি আইন বা অধ্যাদেশ প্রয়োজন হবে কি না, তা নিয়েও পর্যালোচনা চলছে। সনদ বাস্তবায়নে যে আদেশ জারি করা হবে তার নাম কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে এটি হতে পারে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ।
এনসিপি দাবি করে আসছে, জনগণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে, তা সুসংহত করতে প্রধান উপদেষ্টা এই আদেশ জারি করবেন এবং বাস্তবায়ন করবেন।
ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে কিছু আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত হয়নি। আদেশের আধেয় এবং গণভোটের প্রশ্ন ঠিক করার পর আদেশটি কে জারি করবেন, তা নির্ধারণ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সনদ বাস্তবায়নের আদেশে গণভোটের প্রশ্ন থাকবে। গণভোটের প্রশ্ন নিয়ে কমিশনের দুটি চিন্তা আছে। একটি হলো পুরো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চান কি না, এই প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেওয়া। আরেকটি হলো যেসব প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে, শুধু সেগুলোর বাস্তবায়ন চান কি না, এই প্রশ্নে গণভোট দেওয়া। কারণ, যেসব প্রস্তাবে মতভিন্নতা নেই, সেগুলো বাস্তবায়নে তেমন সমস্যা হবে না। জটিলতা তৈরি হবে যেসব প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে, সেগুলো বাস্তবায়নে।
এখন যেসব প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে, সেগুলো যদি গণভোটে দেওয়া হয় আর কমিশন যেভাবে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে সেটার পক্ষে মানুষ রায় দেয়; তাহলে এগুলো বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক হবে। যদিও গণভোটের প্রশ্ন কী হবে, তা নিয়ে দলগুলোর মতবিরোধ আছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, কমিশন একটি পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ সরকারকে দিতে চায়। সেখানে সবকিছু সুনির্দিষ্ট ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে থাকবে। এটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশনের আলোচনা চলছে।
বৈঠক শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কিত সুপারিশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবারও আলোচনা করেছে কমিশন। জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরিফ ভূঁইয়া, ইমরান সিদ্দিক ও তানিম হোসেইন শাওন। এ ছাড়া আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ভার্চ্যুয়ালি সভায় অংশ নেন।
সভায় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও উপস্থিত ছিলেন।