সুন্দরবনে ফাঁদে আটকে ছটফট করছিল প্রাণীটি
Published: 19th, October 2025 GMT
ফাঁদে আটকে ছটফট করছিল প্রাণীটি। তাতে আরও শক্ত হয় পায়ে আটকে যাওয়া রশির বাঁধন। কেটে রক্ত পড়ছিল বাঁ পা দিয়ে। প্রাণীটির আর্তনাদে নীরবতা ভাঙে সুন্দরবনে। সেই চিৎকার ভেসে আসে বনকর্মীদের কানে। কাছে গিয়ে তাঁরা দেখতে পান, হরিণ শিকারের জন্য চোরাশিকারিদের পাতা ফাঁদে আটকে পড়েছে একটি ছোট বানর। পরে বনকর্মীরা বানরটি ফাঁদ থেকে উদ্ধার করে শুশ্রূষা দিয়ে বনে অবমুক্ত করেন।
ঘটনাটি শনিবার সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ঘাগমারী এলাকার। রোববার নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে হরিণ শিকারের সিটকা ফাঁদে আটকে গাছে ঝুলে থাকা ওই বানর এবং সেখান থেকে প্রাণীটি উদ্ধারের ছবি প্রকাশ করেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী।
বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম ফেসবুকে লেখেন, ‘আসলে গোটা সুন্দরবনে শিকারিরা হরিণ ধরতে গিয়ে শুধু হরিণই মারে না, মারে অন্য প্রাণীও। গত পাঁচ মাসে আমার কর্মকালে (সুন্দরবন পূর্ব) সহকর্মীরা যে পরিমাণ ফাঁদ অপসারণ করেছে, তা না করতে পারলে কত শত হরিণ এবং অন্যান্য প্রাণী যে শিকার হতো তার সীমা নেই! এটাই বাস্তব সত্য। আপনারা এসব প্রাণী হত্যাকারীকে সহায়তা না দিয়ে বা তাদের নিকট থেকে মাংস না কিনে বরং আমাদের কাছে তাদের সোপর্দ করুন দয়া করে। আপনার একটু সহযোগিতায় আমার আপনার প্রাণের সুন্দরবন বাঁচবে ইনশা আল্লাহ।’
আটকে পড়া বানরটির বিষয়ে ডিএফও রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সহকর্মীরা প্যারালাল লাইন সার্চিং পদ্ধতিতে ফুট প্যাট্রল করে হরিণ শিকারের জন্য পাতা ফাঁদে আটকে পড়া একটি বানর উদ্ধার করে চিকিৎসা দিয়ে বনে ছেড়ে দিয়েছে। আমরা প্রাণ বাঁচানোর কাজ করছি। তাই অনুরোধ করব, এসব প্রাণী হন্তারকদের সহায়তা করবেন না। যাঁরা হরিণের মাংস কেনেন বা শিকারিদের আশ্রয় দেন, তাঁরাও পরোক্ষভাবে এই অপরাধে জড়িত। আমরা সবাই সচেতন হলে রক্ষা পাবে এই অরণ্যের প্রাণ, রক্ষা পাবে আমাদের বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দরবন
এছাড়াও পড়ুন:
সমুদ্র থেকে ভেসে আসা প্লাস্টিকে দূষিত সুন্দরবন
বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবন এখন সমুদ্র থেকে ভেসে আসা প্লাস্টিক বর্জ্যে বিপর্যস্ত। বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ে ভেসে আসা বোতল, পলিথিন, প্যাকেট ও প্লাস্টিক সামগ্রী জমে থাকছে বনের বিভিন্ন খাল, চর ও তীরবর্তী এলাকায়। ফলে শুধু বনাঞ্চলের সৌন্দর্যই নষ্ট হচ্ছে না, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাণী ও পুরো বনের বাস্তুতন্ত্র।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সুন্দরবনকে প্লাস্টিকমুক্ত রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। ইতোমধ্যে তারা পূর্ব সুন্দরবনের ডিমের চর ও কচিখালী এলাকায় শুরু করেছে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম।
আরো পড়ুন:
সুন্দরবনে দস্যুদের আস্তানা থেকে ৪ জেলে উদ্ধার
সুন্দরবনে কুমিরের আক্রমণে জেলে নিহত
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “বনের বিভিন্ন স্থানে পরিদর্শনে গিয়ে দেখি, সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য জমে আছে। এগুলো পরিবেশ এবং বনের প্রাণীদের জন্য ভয়াবহ হুমকি।”
তিনি বলেন, “ডিমের চর ও কচিখালীর সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় বনকর্মীরা চলতি মাসের শুরুতে প্লাস্টিক অপসারণ করেছেন। প্রতি মাসের প্রথম তিন দিনের যেকোনো একদিন বন বিভাগের কর্মীরা বনের অন্য এলাকাগুলোতেও প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণের কাজ করবেন। এসব সংগ্রহ করা বর্জ্য খুলনায় নিয়ে রিসাইকেল করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে একদিকে বন পরিচ্ছন্ন থাকবে, অন্যদিকে পরিবেশও কিছুটা সুরক্ষিত থাকবে।”
বঙ্গোপসাগরে চলাচলকারী জাহাজ, ট্রলার ও পর্যটকবাহী নৌযান থেকে ফেলা বর্জ্যই মূলত সমুদ্রপথে ভেসে সুন্দরবনে ঢুকছে। জোয়ারের পানিতে এসব বর্জ্য মাইলের পর মাইল ছড়িয়ে পড়ে।
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করা সংগঠন সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন-এর চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, “সমুদ্রগামী জাহাজগুলো থেকে বিপুল পরিমাণে বর্জ্য ফেলার কারণে তা সমুদ্রের পানিতে ভেসে সুন্দরবনসহ উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করছে। এই বর্জ্য মানবদেহের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি এটি সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতিকেও মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করছে। মাছের শরীরে এই বর্জ্য প্রবেশ করে তা মানবদেহে পৌঁছে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।”
তিনি মনে করেন, “সমুদ্রগামী জাহাজগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন। পাশাপাশি পর্যটকবাহী নৌযানগুলোতে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা জরুরি।”
বন বিভাগ জানিয়েছে, সুন্দরবনকে প্লাস্টিকমুক্ত রাখার এই উদ্যোগে স্থানীয় জনগণ, পরিবেশবাদী সংগঠন ও পর্যটকদের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতা বৃদ্ধি ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এই বিশাল জীববৈচিত্র্যমণ্ডিত বনকে দূষণমুক্ত রাখার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
ঢাকা/শহিদুল/মাসুদ