ট্রাম্প যেন নোবেল কমিটির নজরে না পড়েন। এটি তাঁর জন্যই ভালো হবে। কারণ, নোবেল কমিটি যদি আমেরিকার ভেতরে কী চলছে তা ঠিকমতো খতিয়ে দেখে, তাহলে ট্রাম্পের শান্তিরক্ষকের ভাবমূর্তি চুরমার হয়ে যাবে। ট্রাম্প বিদেশে গিয়ে নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে দেখান—যেন তিনি যুদ্ধ থামান, সমঝোতা করান। কিন্তু নিজের দেশে তিনি এর উল্টো কাজ করছেন। তিনি আদতে আমেরিকানদের মধ্যেই ঝগড়া-সংঘাত-বিভাজন বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি নিজেই দেশে একধরনের গৃহযুদ্ধ উসকে দিচ্ছেন।

বাইরে শান্তির বার্তাবাহীরূপে আচরণ করা ট্রাম্পের এই দিকটা দেখা দরকার। এই সপ্তাহই এক উদাহরণ। শুরুটা হয়েছিল ট্রাম্পের ইসরায়েল সফর থেকে। সেখানে তাঁকে একধরনের ‘আধুনিক সাইরাস’ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছিল। তাঁকে এমন এক শক্তিশালী শাসক হিসেবে চিত্রিত করা হলো, যাঁকে সবাই দীর্ঘকাল স্মরণ করবে। ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, একমাত্র তিনিই গাজায় ‘চিরস্থায়ী’ শান্তি আনতে পেরেছেন।

হয়তো ট্রাম্প কিছুটা কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন। তিনি হামাস ও ইসরায়েলকে এক সাময়িক অস্ত্রবিরতি এবং বন্দী মুক্তির বিষয়ে রাজি করিয়েছেন। কিন্তু সেটা ভেবে নেওয়া ভুল যে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের জটিল সমস্যার মূল গেরো খুলে দিয়েছেন। আসলে এটা কেবল একটি ভঙ্গুর, অস্থায়ী সমঝোতা। এ সমস্যার মূলে থাকা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতকে না মিটিয়ে কোনো সমাধানই দেওয়া হয়নি। ট্রাম্প এটাকে ঝালাই করে এক বড় অর্জন হিসেবে দেখিয়েছেন আর বলছেন, তিনি এখনো অসংখ্য যুদ্ধ সমাধান করেছেন। এমন দম্ভবাজি তিনি করেই চলেছেন।

সহজ করে বলা যায়, এই সাম্প্রতিক সাফল্যে ভর করে ট্রাম্প এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর চেষ্টায় আবার নামলেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি জানালেন, তিনি আবার পুতিনের সঙ্গে দেখা করবেন। এবার দেখা হবে বুদাপেস্টে। আর বৈঠক আয়োজন করছেন ভিক্তর ওরবান। এই বৈঠককে একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে খোঁচা দেওয়ারও একটা কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু ট্রাম্পের এই ‘শান্তির ব্যবসা’কে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা যায় না। তার সবচেয়ে বড় কারণ হলো, এই একই মানুষ নিজের দেশে যুদ্ধ উসকে দিচ্ছেন। এটা শুধু রূপক হিসেবে বলা হচ্ছে না। এখন অনেক বিশ্লেষক (যাঁরা অবাস্তব উল্লাসে মেতে ওঠেন না) বলতে শুরু করেছেন, ট্রাম্প দ্বিতীয় কোনো গৃহযুদ্ধ উসকে দিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। এর প্রমাণ ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে।

সবচেয়ে পরিষ্কার প্রমাণ হলো, ট্রাম্পের আমলেই আমেরিকার শহরের রাস্তায় সেনা মোতায়েন। তিনি বলছেন, তিনিই সেই জাতীয় গার্ড পাঠিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেস, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, পোর্টল্যান্ড ও মেমফিসে। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, সেখানে অপরাধ বেড়ে গেছে এবং স্থানীয় পুলিশকে সাহায্য করার জন্য সেনাবাহিনীর দরকার ছিল। কিন্তু তথ্য–উপাত্ত বলছে, ট্রাম্প যে শহরগুলোতে সেনা পাঠিয়েছেন, সেগুলোতে সাধারণভাবে সহিংস অপরাধের হার ঐতিহাসিকভাবে অন্য বড় শহরগুলোর তুলনায় বেশি নয়।

এই মাসের শুরুতে তিনি পোর্টল্যান্ডকে ‘জ্বলন্ত গর্ত’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বলেছেন, সেখানে আগুন জ্বলছে, লড়াই চলছে। অথচ পোর্টল্যান্ডের সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে সাইকেল চালাচ্ছেন, বাচ্চাদের পার্কে নিয়ে যাচ্ছেন আর ট্রাম্পের এসব কথা অবাক হয়ে শুনছেন। মনে হয়েছে, ট্রাম্প ফক্স নিউজের সেই পুরোনো ২০২০ সালের বিক্ষোভের ফুটেজ দেখে আজকের ঘটনাগুলোর সঙ্গে মিশিয়ে ফেলেছেন।

এটা কোনো ভুল বা ভুল–বোঝাবুঝি নয়। শিকাগো, এলএ বা পোর্টল্যান্ড—এই শহরগুলোর মিল হলো এগুলো ডেমোক্র্যাটদের হাতে পরিচালিত শহর ও রাজ্য। তাই ট্রাম্প সেগুলোকে নিশানা করছেন। এটা একেবারেই রাজনৈতিক পদক্ষেপ। ট্রাম্প আসলে বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটিগুলোকে ভয় দেখাতে চাইছেন।

অনেকে মনে করেন, সরকার ইচ্ছা করেই এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়, যাতে কোনো সংঘর্ষ বা হামলা ঘটে, তারপর সেই ঘটনাকে ‘বামদের সন্ত্রাস’ বলে চালিয়ে দিয়ে কঠোর দমন–পীড়ন বৈধ করা যায়। যেমন জরুরি আইন চালু করা বা নাগরিকদের স্বাধীনতা খর্ব করা। আরেকটি ব্যাখ্যা হলো, আগামী মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগেই রাস্তায় সেনা রাখাকে স্বাভাবিক বানানো হচ্ছে। কারণ, যদি ওই নির্বাচনে রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ হারান, তাহলে কংগ্রেস ট্রাম্পকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তাই অনেকেই মনে করছেন, সেনা মোতায়েন রাখার লক্ষ্য দুটি হতে পারে:

এক.

ভোটের আগে বিরোধী পক্ষের ভোটারদের ভয় দেখানো, যাতে তাঁরা ভোটকেন্দ্রে না যান।

দুই. ভোটের পর যদি ফল ট্রাম্পের পছন্দমতো না আসে, তাহলে সেই সেনার জোরে ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করা বা গোলযোগের মধ্যে ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যবস্থা করা।

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির দাঙ্গার মতো ঘটনা আবারও ঘটতে পারে। তবে এবার পার্থক্য হতে পারে এই যে তখন ছিল বেসামরিক দাঙ্গাবাজ; এবার হয়তো সেনাবাহিনীও সেই দৃশ্যে জড়িয়ে যেতে পারে। স্বাভাবিক প্রশ্ন উঠতে পার, আমেরিকার সেনাবাহিনী কি ব্যবহৃত হতে রাজি হবে? তারা কি কখনোই একপক্ষীয় রাজনৈতিক হাতিয়ার হওয়ার কথা মানবে? কিন্তু এখানে ট্রাম্প ও পিট হেগসেথ (যে এখন ‘যুদ্ধমন্ত্রী’ নামে পরিচিত) মিলে যে চাপটা তৈরি করছেন, তা সম্পর্কে বোঝা প্রয়োজন।

গত মাসে সারা বিশ্ব থেকে শতাধিক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাকে ডেকে ভার্জিনিয়ায় একটি সভায় ট্রাম্প স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, তাঁরা এখন ‘ভেতরের শত্রুর’ সঙ্গে লড়াই করবেন; তাঁদের কাজ হচ্ছে ‘নাগরিক বিশৃঙ্খলা’ সামলানো এবং বিপজ্জনক শহরগুলোকে প্রশিক্ষণক্ষেত্র হিসেবে দেখা। হেগসেথ এমন কড়া কথাও বলেছেন, কেউ যদি এই নতুন ধারণার বিরুদ্ধে যান, তাহলে তাঁকে ‘সম্মানের সঙ্গে পদত্যাগ’ করতে হবে।

ট্রাম্প এখন প্রকাশ্যেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজের সমালোচকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি তাঁরই সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোলটনের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছেন। ট্রাম্পের প্রধান উপদেষ্টা ডেমোক্রেটিক পার্টিকে আগেই ‘দেশের ভেতরের সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে ঘোষণা করেছেন।

সরকার মুখোশ পরা বিশেষ এজেন্ট পাঠিয়ে রাস্তায় অবৈধ অভিবাসী বলে লোকজনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের হাত থেকে মার্কিন নাগরিকও বাদ যাচ্ছেন না। আবার সরকার ‘শাটডাউন’ ঘোষণা করে এমন সব স্বাধীন সংস্থা বন্ধ করে দিচ্ছে, যেগুলোকে তারা ‘ডেমোক্র্যাট এজেন্সি’ বলে অভিহিত করে থাকে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক ব্রডকাস্টিংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেট ছেঁটে দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা জোরালোভাবে কথা বলতে না পারে।

ট্রাম্প যখন বিদেশে শান্তির কথা বলেন, সেটা শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু দেশে এসে তিনি ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকানের লড়াইকে সাধারণ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে দেখেন না। তিনি ডেমোক্র্যাটদের আসল শত্রু মনে করেন। তিনি তাঁদের এমন শত্রু মনে করেন, যাঁদের বিরুদ্ধে যেকোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

এটা শুধু কথার কথা নয়। ট্রাম্প সেই ভাবনা বাস্তবে প্রয়োগও করতে চাইছেন।

জনাথন ফ্রিডল্যান্ড দ্য গার্ডিয়ান–এর কলাম লেখক

দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শহরগ ল বল ছ ন আম র ক করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘শান্তির প্রেসিডেন্ট’ নিজের দেশে গৃহযুদ্ধের উসকানি দিচ্ছেন

ট্রাম্প যেন নোবেল কমিটির নজরে না পড়েন। এটি তাঁর জন্যই ভালো হবে। কারণ, নোবেল কমিটি যদি আমেরিকার ভেতরে কী চলছে তা ঠিকমতো খতিয়ে দেখে, তাহলে ট্রাম্পের শান্তিরক্ষকের ভাবমূর্তি চুরমার হয়ে যাবে। ট্রাম্প বিদেশে গিয়ে নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে দেখান—যেন তিনি যুদ্ধ থামান, সমঝোতা করান। কিন্তু নিজের দেশে তিনি এর উল্টো কাজ করছেন। তিনি আদতে আমেরিকানদের মধ্যেই ঝগড়া-সংঘাত-বিভাজন বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি নিজেই দেশে একধরনের গৃহযুদ্ধ উসকে দিচ্ছেন।

বাইরে শান্তির বার্তাবাহীরূপে আচরণ করা ট্রাম্পের এই দিকটা দেখা দরকার। এই সপ্তাহই এক উদাহরণ। শুরুটা হয়েছিল ট্রাম্পের ইসরায়েল সফর থেকে। সেখানে তাঁকে একধরনের ‘আধুনিক সাইরাস’ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছিল। তাঁকে এমন এক শক্তিশালী শাসক হিসেবে চিত্রিত করা হলো, যাঁকে সবাই দীর্ঘকাল স্মরণ করবে। ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, একমাত্র তিনিই গাজায় ‘চিরস্থায়ী’ শান্তি আনতে পেরেছেন।

হয়তো ট্রাম্প কিছুটা কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন। তিনি হামাস ও ইসরায়েলকে এক সাময়িক অস্ত্রবিরতি এবং বন্দী মুক্তির বিষয়ে রাজি করিয়েছেন। কিন্তু সেটা ভেবে নেওয়া ভুল যে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের জটিল সমস্যার মূল গেরো খুলে দিয়েছেন। আসলে এটা কেবল একটি ভঙ্গুর, অস্থায়ী সমঝোতা। এ সমস্যার মূলে থাকা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতকে না মিটিয়ে কোনো সমাধানই দেওয়া হয়নি। ট্রাম্প এটাকে ঝালাই করে এক বড় অর্জন হিসেবে দেখিয়েছেন আর বলছেন, তিনি এখনো অসংখ্য যুদ্ধ সমাধান করেছেন। এমন দম্ভবাজি তিনি করেই চলেছেন।

সহজ করে বলা যায়, এই সাম্প্রতিক সাফল্যে ভর করে ট্রাম্প এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর চেষ্টায় আবার নামলেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি জানালেন, তিনি আবার পুতিনের সঙ্গে দেখা করবেন। এবার দেখা হবে বুদাপেস্টে। আর বৈঠক আয়োজন করছেন ভিক্তর ওরবান। এই বৈঠককে একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে খোঁচা দেওয়ারও একটা কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু ট্রাম্পের এই ‘শান্তির ব্যবসা’কে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা যায় না। তার সবচেয়ে বড় কারণ হলো, এই একই মানুষ নিজের দেশে যুদ্ধ উসকে দিচ্ছেন। এটা শুধু রূপক হিসেবে বলা হচ্ছে না। এখন অনেক বিশ্লেষক (যাঁরা অবাস্তব উল্লাসে মেতে ওঠেন না) বলতে শুরু করেছেন, ট্রাম্প দ্বিতীয় কোনো গৃহযুদ্ধ উসকে দিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। এর প্রমাণ ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে।

সবচেয়ে পরিষ্কার প্রমাণ হলো, ট্রাম্পের আমলেই আমেরিকার শহরের রাস্তায় সেনা মোতায়েন। তিনি বলছেন, তিনিই সেই জাতীয় গার্ড পাঠিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেস, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, পোর্টল্যান্ড ও মেমফিসে। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, সেখানে অপরাধ বেড়ে গেছে এবং স্থানীয় পুলিশকে সাহায্য করার জন্য সেনাবাহিনীর দরকার ছিল। কিন্তু তথ্য–উপাত্ত বলছে, ট্রাম্প যে শহরগুলোতে সেনা পাঠিয়েছেন, সেগুলোতে সাধারণভাবে সহিংস অপরাধের হার ঐতিহাসিকভাবে অন্য বড় শহরগুলোর তুলনায় বেশি নয়।

এই মাসের শুরুতে তিনি পোর্টল্যান্ডকে ‘জ্বলন্ত গর্ত’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বলেছেন, সেখানে আগুন জ্বলছে, লড়াই চলছে। অথচ পোর্টল্যান্ডের সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে সাইকেল চালাচ্ছেন, বাচ্চাদের পার্কে নিয়ে যাচ্ছেন আর ট্রাম্পের এসব কথা অবাক হয়ে শুনছেন। মনে হয়েছে, ট্রাম্প ফক্স নিউজের সেই পুরোনো ২০২০ সালের বিক্ষোভের ফুটেজ দেখে আজকের ঘটনাগুলোর সঙ্গে মিশিয়ে ফেলেছেন।

এটা কোনো ভুল বা ভুল–বোঝাবুঝি নয়। শিকাগো, এলএ বা পোর্টল্যান্ড—এই শহরগুলোর মিল হলো এগুলো ডেমোক্র্যাটদের হাতে পরিচালিত শহর ও রাজ্য। তাই ট্রাম্প সেগুলোকে নিশানা করছেন। এটা একেবারেই রাজনৈতিক পদক্ষেপ। ট্রাম্প আসলে বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটিগুলোকে ভয় দেখাতে চাইছেন।

অনেকে মনে করেন, সরকার ইচ্ছা করেই এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়, যাতে কোনো সংঘর্ষ বা হামলা ঘটে, তারপর সেই ঘটনাকে ‘বামদের সন্ত্রাস’ বলে চালিয়ে দিয়ে কঠোর দমন–পীড়ন বৈধ করা যায়। যেমন জরুরি আইন চালু করা বা নাগরিকদের স্বাধীনতা খর্ব করা। আরেকটি ব্যাখ্যা হলো, আগামী মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগেই রাস্তায় সেনা রাখাকে স্বাভাবিক বানানো হচ্ছে। কারণ, যদি ওই নির্বাচনে রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ হারান, তাহলে কংগ্রেস ট্রাম্পকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তাই অনেকেই মনে করছেন, সেনা মোতায়েন রাখার লক্ষ্য দুটি হতে পারে:

এক. ভোটের আগে বিরোধী পক্ষের ভোটারদের ভয় দেখানো, যাতে তাঁরা ভোটকেন্দ্রে না যান।

দুই. ভোটের পর যদি ফল ট্রাম্পের পছন্দমতো না আসে, তাহলে সেই সেনার জোরে ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টা করা বা গোলযোগের মধ্যে ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যবস্থা করা।

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির দাঙ্গার মতো ঘটনা আবারও ঘটতে পারে। তবে এবার পার্থক্য হতে পারে এই যে তখন ছিল বেসামরিক দাঙ্গাবাজ; এবার হয়তো সেনাবাহিনীও সেই দৃশ্যে জড়িয়ে যেতে পারে। স্বাভাবিক প্রশ্ন উঠতে পার, আমেরিকার সেনাবাহিনী কি ব্যবহৃত হতে রাজি হবে? তারা কি কখনোই একপক্ষীয় রাজনৈতিক হাতিয়ার হওয়ার কথা মানবে? কিন্তু এখানে ট্রাম্প ও পিট হেগসেথ (যে এখন ‘যুদ্ধমন্ত্রী’ নামে পরিচিত) মিলে যে চাপটা তৈরি করছেন, তা সম্পর্কে বোঝা প্রয়োজন।

গত মাসে সারা বিশ্ব থেকে শতাধিক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাকে ডেকে ভার্জিনিয়ায় একটি সভায় ট্রাম্প স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, তাঁরা এখন ‘ভেতরের শত্রুর’ সঙ্গে লড়াই করবেন; তাঁদের কাজ হচ্ছে ‘নাগরিক বিশৃঙ্খলা’ সামলানো এবং বিপজ্জনক শহরগুলোকে প্রশিক্ষণক্ষেত্র হিসেবে দেখা। হেগসেথ এমন কড়া কথাও বলেছেন, কেউ যদি এই নতুন ধারণার বিরুদ্ধে যান, তাহলে তাঁকে ‘সম্মানের সঙ্গে পদত্যাগ’ করতে হবে।

ট্রাম্প এখন প্রকাশ্যেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজের সমালোচকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি তাঁরই সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোলটনের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছেন। ট্রাম্পের প্রধান উপদেষ্টা ডেমোক্রেটিক পার্টিকে আগেই ‘দেশের ভেতরের সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে ঘোষণা করেছেন।

সরকার মুখোশ পরা বিশেষ এজেন্ট পাঠিয়ে রাস্তায় অবৈধ অভিবাসী বলে লোকজনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের হাত থেকে মার্কিন নাগরিকও বাদ যাচ্ছেন না। আবার সরকার ‘শাটডাউন’ ঘোষণা করে এমন সব স্বাধীন সংস্থা বন্ধ করে দিচ্ছে, যেগুলোকে তারা ‘ডেমোক্র্যাট এজেন্সি’ বলে অভিহিত করে থাকে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক ব্রডকাস্টিংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেট ছেঁটে দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা জোরালোভাবে কথা বলতে না পারে।

ট্রাম্প যখন বিদেশে শান্তির কথা বলেন, সেটা শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু দেশে এসে তিনি ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকানের লড়াইকে সাধারণ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে দেখেন না। তিনি ডেমোক্র্যাটদের আসল শত্রু মনে করেন। তিনি তাঁদের এমন শত্রু মনে করেন, যাঁদের বিরুদ্ধে যেকোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

এটা শুধু কথার কথা নয়। ট্রাম্প সেই ভাবনা বাস্তবে প্রয়োগও করতে চাইছেন।

জনাথন ফ্রিডল্যান্ড দ্য গার্ডিয়ান–এর কলাম লেখক

দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ