শেকৃবি উপাচার্যসহ ২ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে গবেষণাপত্র চুরির অভিযোগ
Published: 19th, October 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশারের একটি মৌলিক গবেষণাপত্র হুবহু নকল করে নিজেদের নামে প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে দুটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় দুই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্তরা হলেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপাচার্য ও কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড.
আরো পড়ুন:
শেকৃবির আবাসিক হলে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য, অসহায় শিক্ষার্থীরা
শেকৃবিতে ভেটেরিনারি অনুষদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত
রবিবার (১৯ অক্টোবর) একাডেমিক সম্পদ চুরির প্রতিকার চেয়ে ড. কবিরুল বাশার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. তানভীর আহমেদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, নিপসম এবং প্রোগ্রেসিভ এগ্রিকালচার জার্নালের সম্পাদক বরাবর আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, ড. কবিরুল বাশারের ২০১৪ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ মস্কুইটো রিসার্চ’-এ প্রকাশিত ‘Surveillance of mosquitoes in some selected parks and gardens of Dhaka city, Bangladesh’ শীর্ষক গবেষণাপত্রটি প্রায় সম্পূর্ণ নকল করে ২০১৭ সালে ‘প্রগ্রেসিভ এগ্রিকালচার’ জার্নালে প্রকাশ করা হয়। ‘Diversities of mosquito species of different locations in Dhaka city’ শিরোনামে প্রকাশিত এই নকল প্রবন্ধে লেখক হিসেবে ওই দুই অধ্যাপকের নাম রয়েছে।
ড. কবিরুল বাশার জানিয়েছেন, দুটি গবেষণাপত্র পাশাপাশি তুলনা করলে দেখা যায় যে, তার লেখার ভূমিকা, গবেষণার পদ্ধতি, ফলাফল, টেবিল, চিত্র, মানচিত্র এবং তথ্যসূত্রসহ প্রতিটি অংশ হুবহু নকল করা হয়েছে। ‘আইথেন্টিকেট’ সফটওয়্যারে যাচাই করে গবেষণাপত্র দুটির মধ্যে ৯৮ শতাংশ মিল পাওয়া গেছে, যা স্পষ্টতই চৌর্যবৃত্তি প্রমাণ করে।
অন্যদিকে অভিযুক্ত ড. মো. গোলাম শরওয়ার তার প্রবন্ধে নিজেকে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ বিভাগের শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করেন। ড. বাশারের অভিযোগের ভিত্তিতে এনএসইউ কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে জানায়, ড. শরওয়ার কখনোই তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী বা খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন না।
এ ঘটনায় এনএসইউ কর্তৃপক্ষ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক বরাবর চিঠি দিয়ে ড. সারোয়ারের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে।
আইনি নোটিশে যে তিনটি দাবি জানানো হয়েছে, সেগুলো হলো- অবিলম্বে ‘প্রগ্রেসিভ এগ্রিকালচার’ জার্নাল থেকে অভিযুক্তদের প্রবন্ধটি প্রত্যাহার করতে হবে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে উপযুক্ত একাডেমিক এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং নির্ধারিত দুই সপ্তাহের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব প্রদান করতে হবে।
নোটিশে আরো বলা হয়েছে, উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া গেলে, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ড. কবিরুল বাশার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “অভিযুক্ত ড. মো. গোলাম শরওয়ার তার পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন অধ্যাপক ড. মো. আবদুল লতিফের তত্ত্বাবধানে। ধারণা করছি, এই নকল গবেষণাপত্রটি তার পিএইচডি থিসিসের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে অথবা এর মাধ্যমে তিনি একাডেমিক পদোন্নতিসহ অন্যান্য সুবিধা নিয়েছেন।”
তিনি বলেন, “যদি এই চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে কোনো একাডেমিক ডিগ্রি বা সুবিধা অর্জিত হয়ে থাকে, তবে তা বাতিল করা উচিত।”
অধ্যাপক বাশার আরো বলেন, “এই ধরনের চৌর্যবৃত্তি যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া থেকে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে একাডেমিক অনৈতিকতা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক গবেষণার মান আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ বব দ য এক ড ম ক প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
১ লাখ কোটি টাকার পারিবারিক ব্যবসাও সামলান এই তারকা-পত্নী
দক্ষিণী সিনেমার মেগাস্টার রাম চরণ। ২০১২ সালে ১৪ জুন উপাসনার সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন তিনি। বিয়ের ১০ বছর পর প্রথম সন্তানের বাবা-মা হন এই দম্পতি। আবারো জমজ সন্তানের বাবা-মা হতে যাচ্ছেন তারা। কয়েক দিন আগে আইআইটি হায়দরাবাদে ডিম্বাণু সংরক্ষণ নিয়ে মন্তব্য করার পর কটাক্ষের শিকার হন উপাসনা, তৈরি হয় বিতর্ক। সময়ের সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। এ পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে নিজের অবস্থান পরিস্কার করেন উপাসনা। তারপর থেকে আলোচনায় রয়েছেন এই তারকা-পত্নী।
রাম চরণের স্ত্রী উপাসনার আরেক পরিচয় তেলুগু চলচ্চিত্রের মেগাস্টার চিরঞ্জীবীর পুত্রবধূ। রাম চরণ রুপালি পর্দার ‘রাজা’ হলে ব্যবসার ‘রানি’ উপাসনা। তারকা-পত্নী হওয়ার পাশাপাশি তার নিজস্ব একটি পরিচয়ও রয়েছে। বেসরকারি অ্যাপোলো হাসপাতালের করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির ভাইস চেয়ারপার্সন উপাসনা। পাশাপাশি সমাজসেবার সঙ্গেও যুক্ত। নারী ও শিশুদের জন্য নানা উন্নয়নমূলক কাজ করেন তিনি।
আরো পড়ুন:
বিজয়ের সঙ্গে বিয়ে নিয়ে যা বললেন রাশমিকা
ধানুশ-কৃতির সিনেমার আয় ১৩৬ কোটি টাকা
পারিবারিকভাবে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে উপাসনার যোগসূত্র। ভারতের অন্যতম বৃহৎ হাসপাতাল ও চিকিৎসা পরিষেবা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান প্রতাপচন্দ্র রেড্ডির নাতনি। ৭৭ হাজার কোটি রুপির (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৪ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকার বেশি) ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী উপাসনা। তার মা শোবনা কামিনেনি হলেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী ভাইস চেয়ারপার্সন। প্রতিষ্ঠানটির তৃতীয় প্রজন্মের উদ্যোক্তা হলেন উপাসনা।
হায়দরাবাদে স্কুল জীবনের পাঠ শেষ করেন উপাসনা। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান। লন্ডনের রিজেন্টস ইউনিভার্সিটি থেকে আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিপণন ও ব্যবস্থাপনায় বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করে তিনি। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে পুরস্কারও পেয়েছিলেন এই মেধাবী ছাত্রী। তারপর দেশে ফিরে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন উপাসনা। পারিবারিক ব্যবসার বৃত্ত ছেড়ে উপাসনার প্রভাব গণমাধ্যমে বিস্তৃত। একটি ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক উপাসনা। নারীদের স্বাস্থ্য-সুস্থতা নিয়ে মাঝেমধ্যেই কলম ধরেন।
উপাসনার কর্মযজ্ঞ এখানেই শেষ নয়। একটি বীমা সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালকও তিনি। উপাসনার বাবা অনিল কামিনেনির সংস্থারও দায়িত্ব তার কাঁধে রয়েছে। এমনকি, তার শাশুড়ি, রাম চরণের মা সুরেখা কোনিদেলার খাবারের ব্যবসার পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন উপাসনা। অর্থাৎ হেঁশেল থেকে স্বাস্থ্য, সমস্ত ক্ষেত্রেই অবাধ বিচরণ উপাসনার।
একটি বিশেষ উদ্যোগের সঙ্গে উপাসনার নাম জড়িয়ে আছে। এই পরিষেবার মাধ্যমে ভারতজুড়ে ১৫০টিরও বেশি বৃদ্ধাশ্রম দত্তক নিয়েছেন ব্যবসায়ী পরিবারের এই কন্যা। শুধু দত্তক নেওয়াই নয়, এসব বৃদ্ধাশ্রমের সদস্যরা যাতে সঠিক আদর-যত্ন পান সেদিকেও খেয়াল রাখেন উপাসনা। জীবন সায়াহ্নের এই মানুষগুলো যাতে শারীরিক-মানসিকভাবে ভালো থাকেন সেটাই টার্গেট বলে জানিয়েছেন উপাসনা।
উপাসনার নানু ডা. প্রতাপচন্দ্র রেড্ডি একজন ধনকুবের। ১৯৮৩ সালে অ্যাপোলো হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয় ৫০ বছর বয়েসি প্রতাপচন্দ্রের হাত ধরে। ভারতের প্রথম ৫০ জন শিল্পপতির তালিকায় নাম লেখান প্রতাপচন্দ্র। হাসপাতাল ছাড়াও ২১টি ভিন্ন সংস্থা রয়েছে তার প্রতিষ্ঠানের ছাতার নিচে। পাঁচ হাজার ওষুধের দোকান থেকে শুরু করে ২৯১টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র, ডিজিটাল হেলথ পোর্টালও রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের।
বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার আগে প্রতাপচন্দ্র পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি। নিজের কন্যাদেরও ব্যবসার কাজ বুঝিয়েছেন প্রতাপচন্দ্র। তা চার কন্যাই প্রতিষ্ঠানটির উঁচু পদে রয়েছেন। প্রতাপচন্দ্রের এক কন্যা শোবনার মেয়ে উপাসনা এই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
কলেজ জীবন থেকেই একে অপরকে চিনতেন রাম চরণ ও উপাসনা। বন্ধু মহলে তারা ছিলেন আলোচিত। অম্ল-মধুর সম্পর্কে সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন। এরপর এক সময় রাম চরণ দেশের বাইরে যান। তখন পরস্পরের সঙ্গ মিস করতেন তারা। সবাই ধরেই নিয়েছিল প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন দু’জন। কিন্তু তখনও পরস্পরকে বন্ধুই ভাবতেন তারা। রাম চরণের ‘মাগাধীরা’ সিনেমাটি মুক্তির পরই মূলত উপাসনার সঙ্গে এই অভিনেতার প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়। দু’জনের পরিবারের মধ্যে বেশ মধুর সম্পর্ক ছিল, এজন্য বিয়ে নিয়েও কোনো ঝামেলা হয়নি।
২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর হায়দরাবাদের টেম্পল ট্রি ফার্মসে রাম চরণ ও উপাসনার বাগদান হয়। জাঁকজমকপূর্ণ এই আয়োজনে ছিলেন দুই পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনরা। তাদের বাগদান নিয়ে ভক্তদের মধ্যে বেশ উন্মাদনা ছিল। তাকে নিয়ে মিডিয়ার মাতামাতিতে বেশ বিব্রত ছিলেন উপাসনা। তবে সবকিছু বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছেন রাম চরণ। ২০১২ সালের ১৪ জুন পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের উপস্থিতিতে এই জুটির বিয়ে ও বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ের পর যৌথ সিদ্ধান্তে ডিম্বাণু সংরক্ষণ করেন রাম চরণ-উপাসনা। এই ডিম্বাণু থেকেই তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। এ নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন উপাসনা।
উপাসনার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১৩০ কোটি রুপি। রাম চরণের মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৩৭০ কোটি রুপি। রাম চরণ-উপাসনার সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ আড়াই হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়েছে। এই দম্পতির হায়দরাবাদের জুবিলি হিলসে একটি বাংলো রয়েছে, যার দাম ৩০ কোটি রুপি। বিলাসবহুল বাংলোতে রয়েছে—সুইমিং পুল, একটি টেনিস কোর্ট, একটি বিশাল মন্দির, একটি জিমনেশিয়াম। তাছাড়া মুম্বাইয়ের একটি পেন্টহাউজের মালিকানাও রয়েছে রাম চরণ-উপাসনার।
ঢাকা/শান্ত