জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশারের একটি মৌলিক গবেষণাপত্র হুবহু নকল করে নিজেদের নামে প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে দুটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় দুই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্তরা হলেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপাচার্য ও কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড.

মো. আবদুল লতিফ এবং জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মো. গোলাম শরওয়ার।

আরো পড়ুন:

শেকৃবির আবাসিক হলে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য, অসহায় শিক্ষার্থীরা

শেকৃবিতে ভেটেরিনারি অনুষদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত

রবিবার (১৯ অক্টোবর) একাডেমিক সম্পদ চুরির প্রতিকার চেয়ে ড. কবিরুল বাশার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. তানভীর আহমেদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, নিপসম এবং প্রোগ্রেসিভ এগ্রিকালচার জার্নালের সম্পাদক বরাবর আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, ড. কবিরুল বাশারের ২০১৪ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ মস্কুইটো রিসার্চ’-এ প্রকাশিত ‘Surveillance of mosquitoes in some selected parks and gardens of Dhaka city, Bangladesh’ শীর্ষক গবেষণাপত্রটি প্রায় সম্পূর্ণ নকল করে ২০১৭ সালে ‘প্রগ্রেসিভ এগ্রিকালচার’ জার্নালে প্রকাশ করা হয়। ‘Diversities of mosquito species of different locations in Dhaka city’ শিরোনামে প্রকাশিত এই নকল প্রবন্ধে লেখক হিসেবে ওই দুই অধ্যাপকের নাম রয়েছে।

ড. কবিরুল বাশার জানিয়েছেন, দুটি গবেষণাপত্র পাশাপাশি তুলনা করলে দেখা যায় যে, তার লেখার ভূমিকা, গবেষণার পদ্ধতি, ফলাফল, টেবিল, চিত্র, মানচিত্র এবং তথ্যসূত্রসহ প্রতিটি অংশ হুবহু নকল করা হয়েছে। ‘আইথেন্টিকেট’ সফটওয়্যারে যাচাই করে গবেষণাপত্র দুটির মধ্যে ৯৮ শতাংশ মিল পাওয়া গেছে, যা স্পষ্টতই চৌর্যবৃত্তি প্রমাণ করে।

অন্যদিকে অভিযুক্ত ড. মো. গোলাম শরওয়ার তার প্রবন্ধে নিজেকে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ বিভাগের শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করেন। ড. বাশারের অভিযোগের ভিত্তিতে এনএসইউ কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে জানায়, ড. শরওয়ার কখনোই তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী বা খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন না।

এ ঘটনায় এনএসইউ কর্তৃপক্ষ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক বরাবর চিঠি দিয়ে ড. সারোয়ারের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে।

আইনি নোটিশে যে তিনটি দাবি জানানো হয়েছে, সেগুলো হলো- অবিলম্বে ‘প্রগ্রেসিভ এগ্রিকালচার’ জার্নাল থেকে অভিযুক্তদের প্রবন্ধটি প্রত্যাহার করতে হবে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে উপযুক্ত একাডেমিক এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং নির্ধারিত দুই সপ্তাহের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব প্রদান করতে হবে।

নোটিশে আরো বলা হয়েছে, উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া গেলে, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ড. কবিরুল বাশার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “অভিযুক্ত ড. মো. গোলাম শরওয়ার তার পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন অধ্যাপক ড. মো. আবদুল লতিফের তত্ত্বাবধানে। ধারণা করছি, এই নকল গবেষণাপত্রটি তার পিএইচডি থিসিসের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে অথবা এর মাধ্যমে তিনি একাডেমিক পদোন্নতিসহ অন্যান্য সুবিধা নিয়েছেন।”

তিনি বলেন, “যদি এই চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে কোনো একাডেমিক ডিগ্রি বা সুবিধা অর্জিত হয়ে থাকে, তবে তা বাতিল করা উচিত।”

অধ্যাপক বাশার আরো বলেন, “এই ধরনের চৌর্যবৃত্তি যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া থেকে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে একাডেমিক অনৈতিকতা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক গবেষণার মান আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ বব দ য এক ড ম ক প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

শেকৃবি উপাচার্যসহ ২ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে গবেষণাপত্র চুরির অভিযোগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশারের একটি মৌলিক গবেষণাপত্র হুবহু নকল করে নিজেদের নামে প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে দুটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় দুই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্তরা হলেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপাচার্য ও কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল লতিফ এবং জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মো. গোলাম শরওয়ার।

আরো পড়ুন:

শেকৃবির আবাসিক হলে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য, অসহায় শিক্ষার্থীরা

শেকৃবিতে ভেটেরিনারি অনুষদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত

রবিবার (১৯ অক্টোবর) একাডেমিক সম্পদ চুরির প্রতিকার চেয়ে ড. কবিরুল বাশার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. তানভীর আহমেদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, নিপসম এবং প্রোগ্রেসিভ এগ্রিকালচার জার্নালের সম্পাদক বরাবর আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, ড. কবিরুল বাশারের ২০১৪ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ মস্কুইটো রিসার্চ’-এ প্রকাশিত ‘Surveillance of mosquitoes in some selected parks and gardens of Dhaka city, Bangladesh’ শীর্ষক গবেষণাপত্রটি প্রায় সম্পূর্ণ নকল করে ২০১৭ সালে ‘প্রগ্রেসিভ এগ্রিকালচার’ জার্নালে প্রকাশ করা হয়। ‘Diversities of mosquito species of different locations in Dhaka city’ শিরোনামে প্রকাশিত এই নকল প্রবন্ধে লেখক হিসেবে ওই দুই অধ্যাপকের নাম রয়েছে।

ড. কবিরুল বাশার জানিয়েছেন, দুটি গবেষণাপত্র পাশাপাশি তুলনা করলে দেখা যায় যে, তার লেখার ভূমিকা, গবেষণার পদ্ধতি, ফলাফল, টেবিল, চিত্র, মানচিত্র এবং তথ্যসূত্রসহ প্রতিটি অংশ হুবহু নকল করা হয়েছে। ‘আইথেন্টিকেট’ সফটওয়্যারে যাচাই করে গবেষণাপত্র দুটির মধ্যে ৯৮ শতাংশ মিল পাওয়া গেছে, যা স্পষ্টতই চৌর্যবৃত্তি প্রমাণ করে।

অন্যদিকে অভিযুক্ত ড. মো. গোলাম শরওয়ার তার প্রবন্ধে নিজেকে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ বিভাগের শিক্ষক হিসেবে উল্লেখ করেন। ড. বাশারের অভিযোগের ভিত্তিতে এনএসইউ কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে জানায়, ড. শরওয়ার কখনোই তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী বা খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন না।

এ ঘটনায় এনএসইউ কর্তৃপক্ষ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক বরাবর চিঠি দিয়ে ড. সারোয়ারের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে।

আইনি নোটিশে যে তিনটি দাবি জানানো হয়েছে, সেগুলো হলো- অবিলম্বে ‘প্রগ্রেসিভ এগ্রিকালচার’ জার্নাল থেকে অভিযুক্তদের প্রবন্ধটি প্রত্যাহার করতে হবে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে উপযুক্ত একাডেমিক এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং নির্ধারিত দুই সপ্তাহের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব প্রদান করতে হবে।

নোটিশে আরো বলা হয়েছে, উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া গেলে, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ড. কবিরুল বাশার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “অভিযুক্ত ড. মো. গোলাম শরওয়ার তার পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন অধ্যাপক ড. মো. আবদুল লতিফের তত্ত্বাবধানে। ধারণা করছি, এই নকল গবেষণাপত্রটি তার পিএইচডি থিসিসের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে অথবা এর মাধ্যমে তিনি একাডেমিক পদোন্নতিসহ অন্যান্য সুবিধা নিয়েছেন।”

তিনি বলেন, “যদি এই চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে কোনো একাডেমিক ডিগ্রি বা সুবিধা অর্জিত হয়ে থাকে, তবে তা বাতিল করা উচিত।”

অধ্যাপক বাশার আরো বলেন, “এই ধরনের চৌর্যবৃত্তি যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া থেকে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে একাডেমিক অনৈতিকতা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক গবেষণার মান আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ