১০ হাজার মে. টন মসুর ডাল কিনবে টিসিবি
Published: 13th, January 2025 GMT
ভর্তুকি দামে বিক্রির জন্য ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে। এতে কেজি প্রতি মসুর ডালের দাম বাজার দরের তুলনায় ১৭ টাকা ৯ পয়সা কম পড়বে।
আগামী বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা পরিষদ প্রস্তাবটি অনুমোদন দিলে কারওয়ানবাজারের শবনাম ভেজিটেবল অয়েল থেকে এই মসুর ডাল পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে আগামী মার্চ মাসে গ্রহণ করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে টিসিবি’র বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় ২ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯২ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার চুক্তি করা হয়েছে। নতুন করে আরও ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ জন্য গত ৯ ডিসেম্বর উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ২৩ ডিসেম্বর।
নির্ধারিত সময়ে শবনাম ভেজিটেবল অয়েল, নাবিল নাবা ফুডস লিমিটেড এবং ইজি জেনারেল ট্রেডিং দরপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে ইজি জেনারেল ট্রেডিং ৫ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডালের জন্য দরপত্র জাম দেয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ৯৯ টাকা ৪৮ পয়সা করে প্রস্তাব দেয়।
অপর দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নাবিল নাবা ফুডস প্রডাক্টস ১০ হাজার মেট্রিক টনের জন্য দরপত্র জমা দেয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম প্রস্তাব করে ৯৮ টাকা ৭৫ পয়সা। অন্যদিকে শবনাম ভেজিটেবল অয়েল প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ৯৭ টাকা ৯১ পয়সা করে প্রস্তাব দেয়।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে শবনাম ভেজিটেল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে ৫০ কেজির বস্তায় ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার সুপরিশ করেছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৯৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
টিসিবি’র বাজার তথ্য অনুযায়ী ২৪ ডিসেম্বর স্থানীয় বাজারে মাঝারি দানার মসুর ডালের প্রতি কেজির গড় খুচরা মূল্য ১১৫ টাকা। এ হিসাবে স্থানীয় খুচরা বাজরের তুলনায় প্রতি কেজিতে ১৭ টাকা ৯ পয়সা কমে মসুর ডাল কিনতে পারবে সরকার।
সূত্র জানিয়েছে, এর আগে ৯ ডিসেম্বর স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৯৪ টাকা ৯৫ পয়সা কেজি দরে মসুর ডাল কেনা হয়। তবে আগের তুলনায় এখনকার প্রস্তাবিত দাম বেশি হলেও দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য এবং স্থানীয় বাজারের মূল্যের চেয়ে কম এবং সংগতিপূর্ণ বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কারণ বর্তমানে মসুর ডালের বাজার মূল্য ঊর্ধ্বমুখী।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, সর্বশেষ ১৭ ডিসেম্বর উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে প্রস্তাবিত দর ছিল প্রতি কেজি ৯৭ টাকা ৫০ পয়সা। তবে মূল্যায়ন কমিটি সেই ডাল কেনার সুপরিশ করেনি। এখন যে ডাল কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে আগামী মার্চ মাসে গ্রহণ করা হবে। সে সময়ের মজুদ বিবেচনায় মসুর ডাল কেনা প্রয়োজন বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ দিকে মসুর ডাল কেনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রত্যয়ন করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিবের প্রত্যয় হলো, এই ক্রয়প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণে ক্রয় সংক্রান্ত প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয়েছে এবং বিবেচ্য প্রস্তাবটি সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-বিধানের পরিপন্থি নয়। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম-নীতির কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। সুপরিশ করা দরদাতার প্রস্তাবের সঙ্গে উন্মুক্ত দরপত্রের ডকুমেন্টের সম্পূর্ণ সামঞ্জস্য রয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আগামী রমজান মাসে টিসিবি’র কার্ডধারীদের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দরপত্রের মাধ্যমে যে দর পাওয়া গেছে তা বাজার দর এবং দাপ্তরিক দরের তুলনায় বেশ কম। তাছাড়া অন্তর্জাতিক উৎসের তুলনায় স্থানীয় বাজার থেকে কম দামে মসুর ডাল পাওয়া যাচ্ছে। এখন সরকরি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদন দিলে ১০ লাখ টন মসুর ডাল কেনা হবে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘গত ১ ডিসেম্বরের প্রাক্কলিত মূল্য অনুযায়ী ভারতীয় উৎসের মসুর ডালের বাজর দর সিপিটি স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রতি কেজি ১১৯ টাকা ৫৩ পয়সা। যা সব খরচ মিলিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ১২৫ টাকা ১৮ পয়সা কেজি। সুতরাং অন্তর্জাতিক উৎসের থেকে স্থানীয় পর্যায় থেকে অনেক কম দামে মসুর ডাল কেনা সম্ভব হচ্ছে। এ কারণেই কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’’
হাসনাত//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।