চলতি মাসে সপ্তমবারের মতো সোনার দাম বেড়েছে। এ দফায় ভরিতে দাম বেড়েছে ১ হাজার ৫০ টাকা। তাতে ভালো মানের এক ভরি সোনার সর্বোচ্চ দাম বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকা। দেশের বাজারে এটিই এখন পর্যন্ত সোনার সর্বোচ্চ দাম।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) আজ রোববার রাতে সোনার দাম সমন্বয়ের ঘোষণা দিয়েছে। নতুন দর আগামীকাল সোমবার থেকে কার্যকর হবে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জুয়েলার্স সমিতি বলেছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (খাঁটি সোনা) মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। এ কারণে দাম সমন্বয় করা হয়েছে।

চলতি মাসে এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে সাতবার সোনার দাম সমন্বয় করেছে জুয়েলার্স সমিতি। প্রতিবারই দাম বেড়েছে। তার মধ্যে ৭ অক্টোবর সোনার দাম ভরিতে দুই লাখ টাকার মাইলফলকে পৌঁছায়। অথচ ২৬ মাস আগে দেশে সোনার দাম ছিল ১ লাখ টাকা ভরি।

জুয়েলার্স সমিতির নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকাল সোমবার থেকে হলমার্ক করা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনা ২ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ টাকায় বিক্রি হবে। এ ছাড়া প্রতি ভরি ২১ ক্যারেট ২ লাখ ৭ হাজার ৫০৩ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৫৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনা বিক্রি হবে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৫ টাকায়। আজ রোববার পর্যন্ত ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ লাখ ৬ হাজার ৪৯৯ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৭৭ হাজার ১ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির সোনা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৫১ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সেই হিসাবে কাল থেকে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনায় ১ হাজার ৫০ টাকা, ২১ ক্যারেটে ১ হাজার ৪ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটে ৮৫২ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির সোনায় ভরিতে ৭২৪ টাকা দাম বাড়বে।

এ দফায় রুপার দাম বাড়েনি। বর্তমানে এক ভরি রুপার দাম ৬ হাজার ২০৫ টাকা।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আদেশে কী থাকবে, ভিত্তি কী হবে, ঠিক করছে কমিশন

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ আদেশের ভিত্তি কী হবে, এই আদেশে কী থাকবে—এসব নির্ধারণে কাজ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এটি নিয়ে রোববার অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন।

তবে ওই আদেশে কী থাকবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করে আদেশের একটি খসড়া শিগগির কমিশনের কাছে উপস্থাপন করবেন বলে ঐকমত্য কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

গত শুক্রবার জুলাই জাতীয় সনদে সই হলেও এখন পর্যন্ত সনদ বাস্তবায়নের উপায় ঠিক হয়নি। সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত। কিন্তু গণভোটের ভিত্তি কী হবে, গণভোটের সময় ও গণভোটের প্রশ্ন কী হবে—এসব বিষয়ে মতপার্থক্য আছে। বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারিত না হওয়ায় সনদে সই করেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ ছাড়া বামধারার চারটি দলও এখনো সনদে সই করেনি। বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে এই মাসের মধ্যে সরকারকে সুপারিশ দেবে ঐকমত্য কমিশন।

ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, একটি বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট এবং আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ করার পথে এগোচ্ছে কমিশন। এটিকে ভিত্তি ধরে একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তৈরির কাজ চলছে। কমিশন মনে করে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য শুরুতে একটি বিশেষ আদেশ লাগবে। এই আদেশে কী কী থাকবে এবং আদেশের ভিত্তি কী হবে, তা সুনির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন। না হলে রাজনৈতিক দলগুলো সন্তুষ্ট হবে না।

এই বিষয়ে রোববারের বৈঠকে আলোচনা হয়। বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকভাবে মনে করছেন, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মূলত এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। সে হিসেবে বিশেষ পরিস্থিতিতে গণ-অভ্যুত্থান বা জনগণের অভিপ্রায়ের মূলে অন্তর্বর্তী সরকার এই বিশেষ আদেশ জারি করতে পারে। সেটা আদেশের পটভূমিতে উল্লেখ করা যেতে পারে। আদেশের মধ্যে কী কী বিষয় থাকবে, তার আইনি ভাষা (টেক্সট) কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। এগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আরও কাজ করবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই আদেশ হবে গণভোটের ভিত্তি। আদেশে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া উল্লেখ থাকবে। কিন্তু গণভোট পরিচালনার জন্য আলাদা একটি আইন বা অধ্যাদেশ প্রয়োজন হবে কি না, তা নিয়েও পর্যালোচনা চলছে। সনদ বাস্তবায়নে যে আদেশ জারি করা হবে তার নাম কী হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে এটি হতে পারে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ।

এনসিপি দাবি করে আসছে, জনগণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে, তা সুসংহত করতে প্রধান উপদেষ্টা এই আদেশ জারি করবেন এবং বাস্তবায়ন করবেন।

ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে কিছু আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত হয়নি। আদেশের আধেয় এবং গণভোটের প্রশ্ন ঠিক করার পর আদেশটি কে জারি করবেন, তা নির্ধারণ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সনদ বাস্তবায়নের আদেশে গণভোটের প্রশ্ন থাকবে। গণভোটের প্রশ্ন নিয়ে কমিশনের দুটি চিন্তা আছে। একটি হলো পুরো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চান কি না, এই প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেওয়া। আরেকটি হলো যেসব প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে, শুধু সেগুলোর বাস্তবায়ন চান কি না, এই প্রশ্নে গণভোট দেওয়া। কারণ, যেসব প্রস্তাবে মতভিন্নতা নেই, সেগুলো বাস্তবায়নে তেমন সমস্যা হবে না। জটিলতা তৈরি হবে যেসব প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে, সেগুলো বাস্তবায়নে।

এখন যেসব প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে, সেগুলো যদি গণভোটে দেওয়া হয় আর কমিশন যেভাবে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে সেটার পক্ষে মানুষ রায় দেয়; তাহলে এগুলো বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক হবে। যদিও গণভোটের প্রশ্ন কী হবে, তা নিয়ে দলগুলোর মতবিরোধ আছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, কমিশন একটি পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ সরকারকে দিতে চায়। সেখানে সবকিছু সুনির্দিষ্ট ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে থাকবে। এটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশনের আলোচনা চলছে।

বৈঠক শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কিত সুপারিশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবারও আলোচনা করেছে কমিশন। জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরিফ ভূঁইয়া, ইমরান সিদ্দিক ও তানিম হোসেইন শাওন। এ ছাড়া আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ভার্চ্যুয়ালি সভায় অংশ নেন।

সভায় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ