চলতি মাসেই কমিটি, বিপাকে গাড়ি কেলেঙ্কারিতে জড়িতরা
Published: 16th, January 2025 GMT
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নতুন কমিটি চলতি মাসেই ঘোষণা হবে। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পর নেতৃত্বে ফিরতে মরিয়া আবু সুফিয়ান, এনামুল হক এনাম ও এস এম মামুন মিয়া।
২০১৯ সালের অক্টোবরে গঠিত কমিটিতে সুফিয়ান আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন এনাম। আর কর্ণফুলী বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন মামুন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর নগরীর কালুরঘাটের একটি ওয়্যার হাউস থেকে এস আলম গ্রুপের ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি বের করার ভিডিও ভাইরাল হয়। সুফিয়ান, এনাম ও মামুনের তদারকিতে গাড়িগুলো পার করার অভিযোগ এলে গত ১ সেপ্টেম্বর ৬৫ সদস্যের কমিটি ভেঙে দিয়ে তিনজনকে বহিষ্কার করে বিএনপি।
সূত্রের খবর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত। নতুন কমিটি সামনে রেখে নতুন মেরূকরণ হচ্ছে। শীর্ষস্থানীয় পদ পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন বিভক্ত গ্রুপের সিনিয়র নেতারা। তারা হাইকমান্ডের কাছে সুফিয়ান, এনাম ও মামুনের অপকর্ম তুলে ধরছেন। এতে তিন নেতা ও তাদের বলয়ের নেতাকর্মী বিপাকে পড়েছেন। বিভক্তি আরও বাড়ছে। কমিটি ঘোষণার পর পদবঞ্চিতরা বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় একাধিক নেতা জানান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনে কয়েকটি প্রস্তাবনা বিবেচনা করছে হাইকমান্ড। এর মধ্যে দলের সাবেক সহসভাপতি ইদ্রিছ মিয়াকে আহ্বায়ক, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাসকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিনকে সদস্য সচিব করে সম্প্রতি একটি কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হলে পদপ্রত্যাশী অন্যরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। ফলে কমিটি ঘোষণা আটকে যায়।
গত ২৫ ডিসেম্বর বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার পর অনুসারীদের নিয়ে পুরোদমে মাঠে নেমেছেন এনাম। বড় একটি অংশ তাঁকে নতুন কমিটির আহ্বায়ক দেখতে চান। এনাম বলেন, ‘দলের দুঃসময়ে মাঠে ছিলাম। বিষয়টি দলের হাইকমান্ড ভালোই জানে। আশা করছি, আমাকে মূল্যায়ন করা হবে। যদিও একটি পক্ষ আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের চেষ্টা করছে।’
জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরীকেও একই পদে চাইছেন পৃথক দুটি গ্রুপ। কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মামুন মিয়াও পদটি পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। দীর্ঘদিন পর সক্রিয় হয়েছেন পটিয়ার সাবেক এমপি গাজী শাহাজান জুয়েল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরাসরি কমিটির বিষয় তদারকি করছেন। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে কমিটি ঘোষণা করা হবে।
চট্টগ্রাম-৮ আসনে ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পান আবু সুফিয়ান। পরে উপনির্বাচনেও অংশ নেন তিনি। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পর তিনিও মাঠে আছেন। অনুসারীদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন সুফিয়ান। এ আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহী চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহও। আবু সুফিয়ান বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক থাকাকালে আমাকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমি চেষ্টা করেছি, দল পুনর্গঠনে। এখন আমি দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নই। তবে দল চাইলে ভিন্ন কথা।’
বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘দ্রুত দক্ষিণ জেলা বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। ত্যাগী, পরীক্ষিত ও যোগ্য নেতাকর্মীকে কমিটিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত ও নিপীড়ন বন্ধের দাবি সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের
গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষা, ন্যায্য মজুরি, অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত ও শ্রমিক নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে সমাবেশ ও মিছিল করেছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট। একই সঙ্গে তারা বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তারকৃত শ্রমিকনেতাদের মুক্তির দাবিও জানায়।
মে দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জুলফিকার আলী, আইনবিষয়ক সম্পাদক বিমল চন্দ্র সাহা, নির্বাহী সদস্য আফজাল হোসেন, নির্বাহী সদস্য ও বোম্বে সুইটস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রতন মিয়া প্রমুখ।
সমাবেশে নেতারা বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন করার চেষ্টার অপরাধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দিয়ে গার্মেন্টস উইংয়ের সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, রবিনটেক্স শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সীমা আক্তারসহ ৭ জনকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে এবং রিকশা শ্রমিকদের রুটি–রুজির আন্দোলনে সংহতি জানানোর অপরাধে চট্টগ্রামে রিকশা সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি আল কাদেরি জয়, মিরাজ উদ্দিন ও রোকন উদ্দিনকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। অথচ সরকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তারা শ্রমক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রমমান বাস্তবায়ন করবে।
এ সময় নেতারা শ্রম সম্পর্ক উন্নয়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হচ্ছে কি না, তা জানতে চান। তাঁরা বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার অধিকার চর্চায় বাধা দেওয়া বন্ধ না হলে, শ্রমিকের ওপর নিপীড়ন বন্ধ না হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র পরিচালনা বা বৈষম্য নিরসনের প্রতিশ্রুতি শ্রমজীবী মানুষের কাছে প্রতারণা হিসেবে পরিগণিত হবে।
মে দিবসের ইতিহাস তুলে ধরে নেতারা আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও দেশের শ্রমজীবী মানুষের ৮৫ শতাংশ শ্রম আইনের সুরক্ষার বাইরে। শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শ্রম খাতের দুর্দশার যে ভয়ানক চিত্র ফুটে উঠেছে, তা প্রমাণ করে স্বাধীনতা–পরবতী প্রতিটি সরকার শ্রম শোষণকে তীব্র থেকে তীব্রতর করার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
এ সময় গ্রেপ্তার সব শ্রমিকের মুক্তি, শ্রমিক নিপীড়ন বন্ধ এবং মে দিবসের প্রকৃত চেতনায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের নেতারা।