প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকা। পরে ইংল‌্যান্ড। এবার শ্রীলঙ্কা। জয়ের নাগালে গিয়েও জয় পাওয়া হচ্ছে না বাংলাদেশের। 

ওয়ানডে বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ নারী দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আট মাস দূরে ছিলেন। তবুও মাঠে নেমে নিজেদের শতভাগ উজার করে দিচ্ছেন টাইগ্রেসরা। কিন্তু জয়ের সীমানা অতিক্রম করতে পারছেন না। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল‌্যান্ডকে হারানোর খুব কাছে গিয়ে হৃদয় ভেঙেছিল নিগার সুলতানা জ‌্যোতির দল। 

গতকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলায় যা ঘটল তা যেকোনো চিত্রনাট‌্যকেও হার মানায়। এমন ক্লাইমেক্স যা কেউ কল্পনাতেও আনতে পারে না। অবিশ্বাস্য ব্যাটিং–ধসে বিশ্বকাপের স্বপ্ন চুরমার।  ৬ উইকেট হাতে রেখে ১২ বলে ১২ রানের সমীকরণটা মেলাতে পারেনি দল। শেষের ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ৭ রানে পরাজয়ের তেতো স্বাদ পেয়ে সেমিফাইনালের আশা শেষ বাংলাদেশের। 

এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিল কেবল দেখেছেন জ‌্যোতি। ১০৩ বলে ৬৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ঠাঁই দাঁড়িয়ে। বিমর্ষ, বিহ্বল, কিংকর্তব্যবিমূঢ়।

এমন হারের কোনো ব‌্যাখ‌্যা কি হতে পারে? জয়ের খুব কাছে গিয়েও বারবার হৃদয়ক্ষরণ, আশাভঙ্গ, যন্ত্রণার বাতাবরণ। পরাজয়ের গ্লানি মাথায় নিয়ে ডাগআউনে জ‌্যোতির বসে থাকা নিশ্চিতভাবেই সমর্থকদের কষ্ট দিয়ে। মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুম। ড্রেসিংরুম থেকে সংবাদ সম্মেলন কক্ষ…নিজের কষ্ট লুকাতে পারেননি টাইগ্রেস অধিনায়ক। 

‘‘এটা (পরাজয়) সত্যিই হৃদয়বিদারক। কারণ আমরা এখানেও জয়ের কাছাকাছি গিয়েছিলাম। এই ধরণের ম্যাচ, আমার মনে হয় আমরা ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং এখন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিনটি ম্যাচ খেলেছি। আমাদের এটা নিয়ে ভাবা উচিত এবং আমাদের অনেক কিছু শিখতে হবে। এই ধরণের পরিস্থিতি, কীভাবে আমাদের স্নায়ু শান্ত করতে হবে এবং কীভাবে আমাদের রান করা উচিত। আর অবশ্যই, তরুণ খেলোয়াড়রা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এসেছিল। তাদেরও শিখতে হবে এই পরিস্থিতিতে কিভাবে খেলতে হবে।’’

ম‌্যাচ শেষ ওভার পর্যন্ত আসা উচিত ছিল না মনে করছেন জ‌্যোতি, ‘‘দেখুন, আমরা যেভাবে ব্যাট করেছি, সেই খেলাটি শেষ ওভার পর্যন্ত যাওয়া উচিত ছিল না কারণ শেষ ওভারের আগের ওভারে আমাদের খেলা শেষ করা উচিত ছিল। কিন্তু আমরা সেখানে কোনও রান করতে পারিনি, এবং আমরা সেখানে উইকেট হারাতে থাকি। আর একটা কথা, আমি এবং সুপ্তা সেখানে খুব ভালো ব্যাটিং করছিলাম। আমরা বেশ স্থির ছিলাম। এবং তারপর সুপ্তা উঠে গেল কারণ ক্র্যাম্পিং ছিল। যা আমাদের ছন্দ নষ্ট করেছে। পরবর্তীতে আমাদের পার্টনারশিপ গড়ে তুলতে কিছুটা সময় নিতে হয়েছিল। এবং এক পর্যায়ে আমি মনে করি আমরা কোনও বাউন্ডারিও খুঁজে পাইনি। যার কারণে আমাদের চরম মূল‌্য দিতে হয়েছে।’’

মাঠে সামান‌্য ভুলের বড় খেসারত দিয়েছে দল। ইংল‌্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ক‌্যাচ মিস করে ম‌্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। স্নায়ু স্থির রাখতে পারেনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তীরে এসে তরি ডুবিয়েছে। বারবার এমন হারকে জ‌্যোতি ভাগ‌্যের দোষারপ দিচ্ছেন না। বরং নিজেদের ব‌্যর্থতাকেই বড় করে দেখছেন অধিনায়ক, 

‘‘না, না, এটা অবশ্যই আমাদের ভুল। এটা শুধু একটা ম্যাচ নয়; এটা তৃতীয়বারের মতো এরকম ঘটনা। আমার মনে হয় আমরা শেষ মুহূর্তে সঠিকভাবে শেষ করতে ব্যর্থ হচ্ছি। এই ধরণের লক্ষ্য তাড়া করার সময় আমাদের শেষ ওভারে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। এটা আমাদের দোষ।’’

নিজেদর ‘আত্মাহুতিতে’ শেষ চারের স্বপ্ন বিসর্জন বাংলাদেশের। এখন বাকি কেবল একটি ম‌্যাচ। আগামী রোববার ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ খেলে দেশে ফিরবে বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করেছিল দল। ভারতকে হারিয়ে শেষ করতে পারলে বলার মতো অর্জন থাকবে।

ঢাকা/ইয়াসিন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

বিপিএলে থাকবেন সালাহউদ্দিনও

ক্রিকেটারদের এখন ছুটি। অখন্ড অবসর। তবে চাইলেই মাঠে ফেরার সুযোগ আছে। টি-টোয়েন্টির ব্যাটসম্যানদের জন্য আলাদা একটি সেশন শুরু করেছেন সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। সেই সেশনে সাইফ হাসান, কাজী নুরুল হাসান সোহান, তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমনরা যোগ দিয়েছেন। 

কেন হঠাৎ এই আয়োজন? শনিবার বিকেলে মিরপুরে সেই উত্তর দিয়েছেন সালাহউদ্দিন, ‘‘উন্নতির তো শেষ নেই। আমরা সবাই বলি, স্কিলের ঘাটতি আছে। ওইটা উন্নতি করারও আসলে আমরা কোনো সময় সময় পাইনা। কারণ এত ইন্টারন্যাশনাল শিডিউল থাকে, ছেলেদের খেলা থাকে। এরকম একটা যেহেতু সুযোগ পেয়েছি তাই ব্যাটসম্যানদের স্কিলের আরেকটু উন্নতি…।’’ 

কোন দিকগুলো নিয়ে কাজ করছেন সেগুলো খোলাসা করলেন সালাহউদ্দিন, ‘‘টি-টোয়েন্টিতে আমাদের যেসব লাগবে, অনেক সময় হয়তো আমরা ভালো শট খেলি কিন্তু হয়তো ওগুলা হাতে চলে যায়। কিভাবে গ্যাপে মারতে হয়, কিভাবে বল ইউজ করতে হয়, পেসটা ইউজ করতে হয় এবং যদি নিজেকে আরেকটু ডেভেলপ করতে পারে, কম রিস্ক নিয়ে কিভাবে আসলে বাউন্ডারি আদায় করা যায় এবং কিভাবে আসলে সিঙ্গেলস ডেভেলপও করা যায়।’’

আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চিন্তা মাথায় রেখেই সালাহউদ্দিন প্রস্তুত করছেন ক্রিকেটারদের। যার পরীক্ষা হবে আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল)।  ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক এই প্রতিযোগিতার সবচেয়ে সফল কোচ সালাহউদ্দিন। জাতীয় দলে যুক্ত থাকায় এ বছর তার কাজ করা হবে না। তবে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পাখির চোখে পরখ করবেন তিনি। 

প্রধান কোচ ফিল সিমন্স দেশে থাকবেন না। দেশে ক্রিকেটারদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করবেন সালাহউদ্দিন। বিপিএলের পরপরই বিশ্বকাপ। ক্রিকেটাররা যেন পর্যাপ্ত অনুশীলন, ম্যাচ এবং সঠিক গাইডলাইন অনুযায়ী চলতে পারেন তা নিশ্চিত করবেন তিনি,

‘‘তাদের (ক্রিকেটারদের) সব দিকেই নজর রাখা হবে কারণ তাদের মানসিক অবস্থা কি রকম আছে, তাদের শারীরিক অবস্থা কিরকম আছে, তারা টেকনিক্যালি কি রকম করছে সবকিছুই তাদের নজর রাখতে হবে। কে কোথায় কিভাবে কাজ করছে দেখতে হবে। এখানে জাতীয় দলে একজন ট্রেনার যেভাবে ট্রেনিং করাচ্ছে, হয়তো বিপিএল এসে সে ওই ট্রেনিং পাচ্ছে না। ফিটনেস ডাউন হলে তো পরবর্তীতে আমাদেরই আবার এটা রিকভার করে তাকে ফিট করে নিয়ে আসতে হবে। এই জিনিসগুলো পুরো লক্ষ্য রাখা হবে, তারা যেন প্রতিটা সেক্টরেই তারা যেন বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত থাকেন। কারণ খুব বেশি সময় থাকবে না।’’

বিশ্বকাপের আগে বিপিএলকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা বলে মনে করছেন সালাহউদ্দিন, ‘‘ছেলেরা একটা প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ পরিবেশে একটা টুর্নামেন্ট খেলবে।  ভালো বোলাররা আসবে। ব্যাটসম্যানরা তাদের ম্যাচ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। আমি বলবো ভালো অনুশীলন হবে বিশ্বকাপের আগে। যেহেতু ফর্মটাই বিশ্বকাপে নিয়ে যেতে পারবে। তারা যদি ভালোভাবে সুযোগ ব্যবহার করতে পারে তাহলে দলের জন্য ভালো হবে।’’

জাতীয় দলের দায়িত্বে থাকায় বিপিএলে নির্দিষ্ট কোনো ফ্রাঞ্চাইজিতে কাজ করা হবে না সালাহউদ্দিনের। কোচ হিসেবে বিপিএলকে কি মিস করবেন তিনি? উত্তর দিয়েছেন সোজাসাপ্টা,‘‘আমি সচরাচর কোনো কিছু মিস করি না।’’

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ