নোবিপ্রবি শিক্ষিকার বিরুদ্ধে নম্বর টেম্পারিংসহ নানা অভিযোগ, ক্লাস
Published: 16th, January 2025 GMT
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স (ফিমস) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নাহিদ সুলতানার বিরুদ্ধে নম্বর টেম্পারিং ও হেনস্তার অভিযোগ এনে ক্লাস বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) এ ঘোষণা দেন একই বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ৩৮ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া তারা গত রবিবার (১২ জানুয়ারি) বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর একটি অভিযোগপত্রও জমা দেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) ফিমস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.
অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, আমাদের বিভাগের একজন শিক্ষিকার (ড. নাহিদ সুলতানা) বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু অভিযোগ হচ্ছে, নম্বর টেম্পারিং, পর্দা নিয়ে হেনস্তা, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ, ক্লাসরুমে এসে হুমকি-ধামকি দেওয়া এবং এক শিক্ষার্থীকে মোবাইলে হুমকি দেওয়া অন্যতম। এ অবস্থায় তারা ওই শিক্ষিকার ক্লাস করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে ভবিষ্যতে কেউ তাদের সুপারভাইজার হিসেবে চান না বলে জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। শুধু নম্বর বৈষম্য নয়, ওই শিক্ষিকা পাঠদানের সময়ও অবজ্ঞাসূচক ও অবমাননাকর মন্তব্য করেন, যা শিক্ষার্থীদের মনোবলে প্রভাব ফেলে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযুক্ত শিক্ষিকা ড. নাহিদ সুলতানার বিরুদ্ধে দাঁড়ি রাখা নিয়ে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বলেন, “দাঁড়ি রাখায় নাহিদ ম্যাম আমাকে প্রায়ই হেনস্তা করতেন। তিনি দাঁড়ি দেখে বলতেন তোমাকে জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতার মত লাগছে। আমাদের ব্যাচের সব শিক্ষার্থী এর সাক্ষী। তিনি সবার সামনেই এভাবে আমাদের ধর্মীয় বিষয় নিয়ে লাঞ্ছিত করতেন। শুধু দাঁড়ি নয়, তিনি পর্দা নিয়ে হেনস্তা, মার্ক টেম্পারিং, ফোন করে হুমকি দেওয়াসহ শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন।”
পর্দা করায় হেনস্তার শিকার হওয়া তাবাসসুম জাহান সানজি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “ক্লাস টেস্ট চলাকালে আমাকে বিভিন্ন ব্যাক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করে সহপাঠীদের সামনে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেন। যেমন- আমি পর্দা কখন থেকে শুরু করলাম, কে আমাকে পর্দা করতে বলে, পর্দা করে দাদির মতো হয়ে থাকলে হবে নাকি? এমনকি আমার স্বামীর ব্যাপারেও নানা নেতিবাচক কথা বলে আমাকে সবার সামনে অপমান করে। এছাড়াও আমাকে ক্লাসে ইশারা-ইঙ্গিতে সবার সামনে অপমান করতেন।”
তিনি আরো বলেন, “পর্দার পাশাপাশি আমার পারিবারিক জীবন নিয়েও তিনি নানাভাবে আমাকে হেনস্তা করতেন। আমার বিয়ের পুরোপুরি পর্দা করা শুরু করি। ম্যাম সবার সামনে আমাকে দাঁড় করিয়ে আমার স্বামীকে নিয়ে অনেক আজেবাজে কথা বলতেন। তিনি বলতেন, ‘তোমার স্বামী তোমাকে বোরকা পরিয়ে দাদি বানিয়ে দেশে-বিদেশে হাফপ্যান্ট পরে ঘুরবে।’ কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ তিনি এভাবে ক্লাসে আমাকে লাঞ্ছিত করতেন। একদিন তিনি আমার স্বামী দেশের বাইরে চলে গেছে জেনে বারবার ইনফ্লুয়েন্স করেন বেপর্দা হওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ‘হাজবেন্ড চলে গেছে ভালো হইছে। খিমার টান দিয়ে আমাকে খুলে ফেলতে বলেন।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফিমস বিভাগের ১৬তম ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেন। তারা বলেন, পর্দা করা নিয়ে আমাদের ব্যাচের একটি মেয়েকে প্রায় হেনস্তা করতেন নাহিদ সুলতানা ম্যাম। ক্লাসের মধ্যে সবার সামনে তিনি এসব বিষয়ে কথা বলতেন। মনে হচ্ছিল, পর্দা করা এবং দাঁড়ি রাখা বড় কোনো অপরাধ।
অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক ড. নাহিদ সুলতানা বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। চেয়ারম্যান স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছে, চেয়ারম্যান স্যার খতিয়ে দেখুক। আমি তো বর্তমানে ওই ব্যাচের (১৬ তম ব্যাচ) ক্লাসই পায় না। তাহলে ওরা আমাকে বয়কট করে কিভাবে? আমি এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর করত ন বলত ন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে দুই স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ১
রাজবাড়ীর পাংশায় প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে দুই স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল রোববার রাতে পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
ভুক্তভোগী দুই ছাত্রীর মা ও বাবা গতকাল পৃথকভাবে বাদী হয়ে ধর্ষণের অভিযোগে পাংশা থানায় দুটি মামলা করেন। এতে হাসমত আলী (২২) ও শিহাব মণ্ডল (২০) নামের দুই তরুণকে আসামি করা হয়। তাঁদের বাড়ি উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নে। মামলা করার পর পুলিশ রাতে অভিযান চালিয়ে শিহাবকে গ্রেপ্তার করে।
ভুক্তভোগী দুই স্কুলছাত্রী স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের একজনের বয়স ১৪ বছর এবং অপরজনের বয়স ১৫ বছর।
মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া শেষে দুই বান্ধবী একসঙ্গে বাড়ি ফিরছিল। পথে উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের বনগ্রাম এলাকায় পৌঁছালে তাদের পথ রোধ করে হাসমত ও শিহাব। ধারালো ব্লেড বের করে স্কুলছাত্রী দুজনকে জিম্মি করে রাস্তার অদূরে একটি পানের বরজে জোর করে নিয়ে যান তাঁরা। সেখানে পৃথক স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করেন ওই দুই তরুণ। বিষয়টি কাউকে না জানাতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলে যান তাঁরা।
গতকাল রাতে পাংশা মডেল থানায় মামলা করতে আসা ভুক্তভোগী দুই স্কুলছাত্রীর পরিবার জানায়, হাসমত ও শিহাব ওই দুই স্কুলছাত্রীকে মাঝেমধ্যে উত্ত্যক্ত করতেন। এ ঘটনায় দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।
পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনের মা এবং অপরজনের বাবা বাদী হয়ে রোববার রাতে হাসমত আলী ও শিহাব মণ্ডলকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা করেন। রাতেই আসামি শিহাব মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামি হাসমতকে গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।
ওসি সালাহ উদ্দিন আরও বলেন, গ্রেপ্তার শিহাব পুলিশের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তাঁর পোশাকেও ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তাঁকে সোমবার রাজবাড়ীর আদালতে পাঠানো হবে। দুই স্কুলছাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।