খেলোয়াড়দের স্বার্থ সংরক্ষণের দাবি
Published: 17th, January 2025 GMT
ডিনারে বের হচ্ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। টিম হোটেলের লবিতে কিছু সাংবাদিকদের দেখে জাতীয় দলের অধিনায়কের জিজ্ঞাসা, ‘‘রাজশাহী কি শেষ পর্যন্ত টাকা দিল?’’
বিপিএলে পারিশ্রমিক জটিলতায় কোন ক্রিকেটার পড়েন-নি (অতীত-বর্তমান মিলিয়ে) সেই তালিকা খুঁজতে গেলে কাউকেই পাওয়া যাওয়া যাবে না। পারিশ্রমিক বকেয়া শান্তরও। কিন্তু, রাজশাহীর ক্রিকেটারদের নিয়ে তার বাড়তি উদ্বিগ্ন রীতিমত ভাবনার, ‘‘উনারা নাকি ডিএ’ও দিচ্ছে না…।’’
এক বছর আগে মুশফিকুর রহিমের কথাটা নিশ্চিতভাবেই প্রাসঙ্গিক, ‘‘সবকিছুর আগে, বিপিএল না হলে, সত্যি কথা, আমাদের সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাবে। বিপিএলে যে পারিশ্রমিক একজন ক্রিকেটার পায়, এটা নিয়েই… জাতীয় দলে কেউ যদি দুই-তিন বছর খেলে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের পারিশ্রমিক হয়, তাহলে হয়তো (ওই পরিমাণ) আয় করতে পারবে। অ্যাজ সিম্পল অ্যাজ ইট।”
বিপিএলের পারিশ্রমিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দলের ক্রিকেটার হয়েও অনুভব করেন মুশফিক। অথচ সেই পারিশ্রমিকটাই স্থানীয় ক্রিকেটাররা পান না! বিপিএলের পারিশ্রমিকের ৫০ শতাংশ এরই মধ্যে পেয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু, অংশগ্রহণকারী সাত দলের কেউই এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিক দেয়নি। দুর্বার রাজশাহীর বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে কারণ তারা গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৫ শতাংশ টাকাও দেয়নি। চেক দিয়েছিল অনেককেই যা বাউন্স করেছে।
ক্রিকেটাররা অনেকেই নিজেদের ‘প্রতারিত’ মনে করছেন। এখন পর্যন্ত যা খবর, রাজশাহীর ক্রিকেটাররা গতকাল রাতে ২৫ শতাংশ টাকা নগদ পেয়েছেন। দেওয়া হয়েছে ১৯ তারিখের চেক। তাতে কিছুটা হাসি ফুটেছে ক্রিকেটারদের মুখে। তাতে আজকের ম্যাচ বয়কট করার যে ‘হুমকি’ ছিল সেখান থেকেও সরে এসেছে তারা।
‘‘আমি গতকাল রাতে ২৫ শতাংশ টাকা পেয়েছি। শুনেছি বাকিদেরও ডেকে ডেকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। এখন আর আমাদের মাঠে নামতে কোনো সমস্যা নেই।’’ -বলছিলেন দলের স্থানীয় এক ক্রিকেটার।
পারিশ্রমিকের এই জটিলতার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিব্রত ক্রিকেটার, সংশ্লিষ্টরা। তারা স্বার্থ সংরক্ষণের ডাক দিয়েছেন। সিলেট স্ট্রাইকার্স ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়ে কোনো ঝামেলা করেনি। এ কারণে মুখে হাসি আছে রনি তালুকদারের। কিন্তু, এমন পরিস্থিতি মোটেও কাম্য নয় সেটা বলতে দ্বিধা করেননি।
‘‘সিলেটের অবস্থা খুবই ভালো। আমরা ২০ শতাংশ টাকা পেয়ে গেছি। এখানেই (চট্টগ্রামে) বাকি টাকা দেওয়া হবে। আমরা পেশাদার। আমাদের খেলতেই হবে। পারিশ্রমিক অনেক বড় বিষয়। আমারও দরকার। আপনারা যে কাজ করছেন সেখানেও দরকার। এজন্য প্রতিটি দলকে নিশ্চয়তা দিতে হবে যে তারা যেন খেলোয়াড়কে তাদের পারিশ্রমিকটা দেয়। তাহলে এটা খেলোয়াড়দের জন্য ভালো। দলের জন্যও ভালো।’’
বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান মেহরাব হোসেন অপি এবার রাজশাহী দলের ম্যানেজারের ভূমিকায় রয়েছেন। পারিশ্রমিক নিয়ে জটিলতায় তিনি ক্রিকেটারদের পক্ষেই কথা বললেন। আওয়াজ তুললেন সময়মত পারিশ্রমিক পরিশোধের।
‘‘ক্রিকেটারদের পক্ষটা অবশ্যই আগে দেখব। তারা সবাই পেশাদার। পারিশ্রমিকের জন্যই কিন্তু তারা খেলে। বিপিএলই তাদের আয়ের বড় উৎস। ক্রিকেটারদের আয়ের উৎস যদি ভালো থাকে সেটার প্রতিফলন মাঠেও ঘটবে আমার বিশ্বাস। আমাদের ক্রিকেটাররা ভালো খেলবে এবং পারিশ্রমিক নিয়ে হতাশ হবেন না। আগামীতে আমাদের পথচলাটা যেন সুন্দর হয়, সেভাবেই চেষ্টা করছি।’’
বিপিএলের দশম আসর চললেও টুর্নামেন্টে সুনির্দিষ্টই কোনো আর্থিক কাঠামো এখনও পর্যন্ত দাঁড় করাতে পারেনি বিসিবি। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর আয়ের কোনো নিশ্চিত বা সম্ভাব্য পথ তৈরি করা হয়নি। দেশের অনেক বড় প্রতিষ্ঠান আগ্রহ নিয়ে আসার পর ক্রমে সরে গেছে এখান থেকে। ধারাবাহিকতা ও পেশাদারিত্ব না থাকায় একসময় দারুণ সম্ভাবনা থাকলেও এখন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের লড়াইয়ে বিপিএল পড়ে গেছে অনেক পেছনে।
আইপিএল তো বটেই, বিগ ব্যাশ, পিএসএল, সিপিএল এখন যোজন যোজন এগিয়ে বিপিএলের চেয়ে। এমনকি দুই বছর আগের থেকে শুরু হওয়া দুবাইয়ের আইএল টি-টোয়েন্টি, দক্ষিণ আফ্রিকার এসএ টি-টোয়েন্টির সঙ্গেও তুলনায় আসার মতো জায়গায় নেই বিপিএল। এ নিয়ে খালেদ মাহমুদ সুজন একবার গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘‘ব্যবসায়ীরা এখানে এসে ১০-১৫ কোটি টাকা খরচ করছে, বিনিময়ে কী নিয়ে যাচ্ছে?’’
বিপিএলকে স্রেফ বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে চায় না কেউ। এখান থেকে লাভ হবে, প্রতিযোগিতার মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে সেটাই প্রত্যাশা করে। তাতে খেলোয়াড়দের স্বার্থ সংরক্ষণ আরো ভালোভাবে হবে বলে বিশ্বাস করেন জাতীয় দলের এক সাবেক অধিনায়ক,
‘‘বিপিএলকে কেন শুধু বিনিয়োগেই আটকে রাখবে? ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করবে, এখান থেকে প্রফিট নেবে। তখন দেখবেন খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক, কোনো বিল, সুন্দর কিট ব্যাগ, জার্সি, হেলমেট এগুলো নিয়ে সমস্যা থাকবে না। সুন্দর করে গুছিয়ে আয়োজন করলেই তো হয়। তড়িঘড়ির কোনো প্রয়োজন তো আমি দেখি না।’’
মেহরাব হোসেন অপিও প্রায় একই কথা বললেন, ‘‘অবশ্যই! আরেকটু গোছানো হলে আরও সুন্দর দেখাত। এটা আমাদের জন্য একটা শিক্ষণীয় বিষয় ছিল। আশা করি অন্যান্য দলগুলোও এটা দেখেছে এবং তারা সতর্ক থাকবে। আগামীতে যেন এগুলো যেন সুসম্পন্ন হয়, সবারই যেন সজাগ দৃষ্টি থাকে।’’
প্রত্যেকেরই পেশাদারিত্ব দেখানোর কথা বললেন তিনি, ‘‘পেশাদারদের ক্ষেত্রে পারিশ্রমিকের অর্থটা যখনই পকেটে চলে আসে, ভালো খেলার জিনিসগুলো কিন্তু জেগে ওঠে।’’
সঙ্গে আরেকটি বিষয়ও যোগ করলেন সংশ্লিষ্টরা, ‘‘খেলোয়াড়দের সম্মান করতে না পারে, খেলোয়াড়দের ভাবনা বুঝতে না পারে, ক্রিকেট অনুরাগী না হলে এমন ব্যবসায়ীকে যুক্ত না করার। তাতে বদনামের ভাগীদার হতে হয় বিসিবিকেই।’’
জাতীয় দলের ত্রিসীমানা না থাকা আরাফাত সানীদের ভরসা এই বিপিএল ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে তার সুযোগ হয়না। দেশের এই দুই টুর্নামেন্ট দিয়েই তার আয়ের উৎস। শুধু সানী নন, স্থানীয় অনেক ক্রিকেটারের ভরসা এই ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট।
‘‘দুয়েক দিনের মধ্যে ফ্রাঞ্চাইজি নিশ্চিত করেছে ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিক দিয়ে দেবে। দিন শেষে টাকাটা বড় বিষয়। কারণ ক্রিকেটই আমার পেশা। এটার ওপর নির্ভর করে অনেক খেলোয়াড়।’’
খেলোয়াড়ের স্বার্থ সংরক্ষণের দাবির ভেতরে তাদের পারিশ্রমিকটাই সবচেয়ে বড় ইস্যু। বিসিবি প্রধান দায়িত্ব নিয়ে এই দিকটায় জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু অর্ধেক বিপিএল যেতে না যেতেই বোর্ড সভাপতি ফ্রাঞ্চাইজির উপর বিরক্ত। বিপিএল শেষে খেলোয়াড়দের মুখে হাসি থাকবে কি না সেটাই দেখার।
ঢাকা/রাজীব
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় দল র ব প এল র র আয় র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
ফতুল্লার লামাপাড়ায় মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা, কোর্স সমাপনী সনদ প্রদান, বিভিন্ন মেয়াদে সুস্থতার বর্ষপূর্তি ও খেলাধূলার আয়োজন করা হয়।
বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রয়াসের জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়।
মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলায় মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে প্রয়াস বিগত ২২ বছর যাবত নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেবা করে যাচ্ছে।
সব ধরনের আইন ও বিধি-বিধান মেনে সেবার মানোন্নয়ন প্রয়াসের বর্তমান লক্ষ্য। শুধু চিকিৎসা সেবা প্রদান নয়, বরং মানসম্পন্ন টেকসই সেবা নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসা পরবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রম কেন্দ্রটি পরিচালনা করে থাকে।
জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রয়াসে চিকিৎসা কোর্স সম্পন্নকারীদের সার্টিফিকেট প্রদান, প্রাক্তন সদস্যদের মনিটরিং, বিভিন্ন মেয়াদে সুস্থ থাকার স্বীকৃতি ও জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারনায় অংশগ্রহণ প্রয়াসের টেকসই চিকিৎসা পরিকল্পনার অংশ।
তিনি আরো বলেন, আমরাই প্রথম নারায়ণগঞ্জে ৪০ বেডে লাইসেন্স প্রাপ্ত মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্র। প্রয়াসের প্রতিষ্ঠা ২০০৩ সালে হলেও আমরা লাইসেন্স পেয়েছি ২০০৬ সালে। গত ২০২১ সাল থেকে আমরা প্রতিবছর সরকারি অনুদানের জন্য নির্বাচিত হয়ে আসছি।
এসময় তিনি অভিভাবক প্রতিনিধি ও প্রাক্তন সদস্যদের প্রয়াসের সামগ্রিক কার্যক্রমে সংযুক্ত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের কাউন্সিলর মোঃ সাইফুল ইসলাম, অফিসার এডমিন সাজ্জাদ হোসেন, প্রোগ্রাম অফিসার শেখ ফরিদ উদ্দিন ও মেডিকেল অফিসার ডা. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, শওকত হোসেন, লিটন, আমজাদ, বাবুসহ রিকোভারীবৃন্দ।