ঘুরে দাঁড়াতে এখনও লড়ছেন ফেনীর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা
Published: 17th, January 2025 GMT
মুহুরী ও কহুয়া নদীর পার ঘেঁষে উত্তর দৌলতপুর গ্রাম। প্রায় প্রতিবছর বর্ষায় এ দুই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় উত্তর দৌলতপুরসহ অন্তত ১৪টি গ্রাম। দুই নদীর মোহনার খুব কাছেই মাত্র দেড় হাজার গজ দূরত্বে শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. কামালের ঘর। প্রতিবছর পানি ওঠে, কয়েক দিন পর তা কমেও যায়। তিন মেয়ে, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে বন্যার পানিতে থাকার অভিজ্ঞতা তাঁর আছে। তবে গত বছরের ২০ আগস্ট তুমুল বৃষ্টিপাতের সঙ্গে আকস্মিক বন্যা হানা দেয় কামালদের গ্রামে। প্রথম ধাক্কাতেই বন্যার স্রোত ভাসিয়ে নেয় তাঁর ঘরের জিনিসপত্রসহ গৃহপালিত পশুপাখি। বাধ্য হয়ে কামাল পরিবার নিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় গ্রামের উঁচু এক ভবনে আশ্রয় নেন। সেখানেই প্রায় তিন দিন তারা না খেয়ে পড়ে ছিলেন।
উত্তর দৌলতপুরের কামালই শুধু নন, পাঁচ শতাধিক পরিবার ফেনীর ওই বন্যায় জীবন বাঁচাতে লড়াই করেছিলেন। মুহুরী ও কহুয়ার এমন স্রোত আগে কখনও দেখেননি বলে জানান কামালের স্ত্রী জোৎস্না।
পানি নেমে গেলে বাড়ে দুর্ভোগ
সরেজমিন ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রায় পাঁচ মাস পার হলেও এখনও রয়ে গেছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। কারও ঘরের চাল এখনও ঠিক করা হয়নি। দেয়ালে মাটি লেপে ক্ষতচিহ্ন মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে। কেউ বাড়ি মোটামুটি ঠিক করলেও ল্যাট্রিন ছালা মোড়ানো; ব্যবহারের অনুপযোগী। সবকিছু হারানোর ধাক্কা কাটাতে নতুন করে হাঁস-মুরগি পালন শুরু করেছেন অনেকে।
ফুলগাজী উপজেলার উত্তর বরইয়া ইউনিয়নের মৌলভীবাড়ির ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘বানের পানি কমলেও ঘরে একটুও চাল ছিল না যে পাকাব। এমনকি হাঁড়ি, চুলা তাও ছিল না। ল্যাট্রিন ভেসে গেছে। ভিজা কাপড় নিয়ে ছিলাম সাত দিন।’
একই গ্রামের হাসিনা আক্তার বলেন, ‘বন্যার পানিতে আংগো (আমাদের) ঘর, ল্যাট্রিন কিছুই আছিলো না। ঘর দিমু নাকি ল্যাট্রিন? মাইয়া বিয়াও এই জন্য ভাঙানি পড়ছে।’ বিয়ে ভাঙার কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, পাত্রপক্ষ বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ও চট দিয়ে ঘেরা ল্যাট্রিন দেখে আত্মীয়তা করতে অস্বীকৃতি জানায়।
গত বছর ওই বন্যার সময় ২১ থেকে ২৩ আগস্ট আটকে পড়া কামাল, হাসিনাদের মতো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ফেনী ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবকরা। তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন তারা। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্তদের ঘুরে দাঁড়াতেও এখন কার্যক্রম চালাচ্ছে রেড ক্রিসেন্ট।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ফেনী জেলা ইউনিটের যুবপ্রধান শামসুল আরেফিন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রাথমিকভাবে ফুলগাজীতে ৭৫টি শৌচাগার নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ফেনী জেলার ইউনিট সভাপতি মো.
ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নানামুখী উদ্যোগ
রেড ক্রিসেন্টের ফেনী ইউনিট লেভেল অফিসার (ইউএলও) আবদুল মান্নান বলেন, বন্যার সময় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জাতীয় সদরদপ্তর ও ফেনী জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। ২৩ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চারটি ম্যানপ্যাক মেশিনের মাধ্যমে ২ লাখ লিটারের বেশি নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হয়। ৩১ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ জন স্বেচ্ছাসেবক ২১৫টি টিউবওয়েল মেরামত বা পানি বিশুদ্ধকরণ কার্যক্রমে অংশ নেন। ২৭ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনটি মেডিকেল টিমের মাধ্যমে ২২টি জায়গায় বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প করে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দেওয়া হয়। এ ছাড়া চারজন দক্ষ স্বেচ্ছাসেবকের সমন্বয়ে তিনটি দল মানসিকভাবে ট্রমাগ্রস্তদের মনোসামাজিক কাউন্সেলিং সহায়তা দেন। ২৩ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ৭৭ স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে ৪ হাজার প্যাকেট জরুরি শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। ৯৫ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি বিতরণ করা হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত গোটা জেলায় ১২ হাজার প্যাকেট সাত দিনের ফুড প্যাকেজ বিতরণ করা হয়। এর আওতায় প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত ও অসহায় পরিবারকে সাড়ে সাত কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, এক কেজি লবণ, এক কেজি চিনি, আধা কেজি সুজি, এক লিটার তেলসহ ১২ কেজি করে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। জরুরি সহায়তার আওতায় বিতরণ করা হয় ১ হাজার ৯৮৫ প্যাকেট স্যানিটারি প্যাড। ত্রাণের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে জরুরিভাবে ৫৫০ পিস তারপলিনও বিতরণ করা হয়।
তিনি আরও জানান, পরবর্তী সময় প্রথম ধাপে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ফুলগাজী, পরশুরাম উপজেলায় ২ হাজার পরিবারের মধ্যে ৬ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপে ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, ফেনী সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৫০০ পরিবারে ৬ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি সোনাগাজীর নবাবপুর ইউনিয়নে ৩৫টি পরিবারের মধ্যে ঘর মেরামতে ঢেউটিন ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার কাজ চলমান। এসব কার্যক্রম পরিচালনায় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স টিমের সদস্য তানজিম হাসানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি দল ‘ফেনী ফ্লাড অপারেশন-২০২৪’ কার্যক্রমে কারিগরি সহায়তা দিতে নজরদারি করছে।
ফুলগাজীর ইউএনও তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, ২০২৪ সালের বন্যা পরিস্থিতি এতটাই কঠিন ছিল, বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তার পরও উদ্ধার কার্যক্রমে স্থানীয় যুবসমাজ, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ বিভিন্ন সংস্থা এগিয়ে আসায় প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতির যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তা প্রশমিত করা সম্ভব হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বন য পর ব র ইউন ট আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন আগামীকাল মঙ্গলবার। ‘বিশ্বের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত এই শহরে প্রথমবার এমন একজন মেয়র পদে নির্বাচিত হতে পারেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির চলতি ধারার একদম বিপরীতমুখী। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবলিকান পার্টি এক ‘শ্বেতকায়, খ্রিষ্টান ও রক্ষণশীল’ আমেরিকার কথা বলছেন।
জোহরান মামদানি শ্বেতকায় নন, তিনি বাদামি রঙের দক্ষিণ এশীয়। তিনি খ্রিষ্টান নন, একজন মুসলিম। তিনি অবশ্যই রক্ষণশীল নন, তিনি খোলামেলাভাবে একজন প্রগতিশীল, যিনি নিজেকে সমাজতন্ত্রী বলতে দ্বিধা করেন না।
‘মামদানি একজন ভয়ানক মানুষ’, সাবধান করে বলেছেন অ্যান্ড্রু কুমো, মঙ্গলবারের নির্বাচনে যিনি মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী। সারা জীবন ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য থাকলেও বাছাইপর্বে পরাজিত হয়ে তিনি এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।
ব্যালটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম না থাকলেও এই নির্বাচনে তিনি একজন অদৃশ্য প্রার্থী। কুমোর পক্ষ নিয়ে তিনিও এই নির্বাচনের একজন অংশগ্রহণকারী। বড় ব্যবধানে মামদানির বিজয় হলে অনেকেই তা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অনাস্থা হিসেবেই দেখবেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কের আদি বাসিন্দা। তিনি কোনোভাবেই চান না মামদানি এই শহরের মেয়র নির্বাচিত হোন। তাঁর বিবেচনায় মামদানি শুধু একজন পাক্কা কমিউনিস্টই নন, রীতিমতো উন্মাদ। এমন একজনকে নির্বাচিত করা হলে তিনি নিউইয়র্ক সিটির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল আটকে দেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, মামদানি একজন অবৈধ অভিবাসী। তা প্রমাণিত হলে তাঁকে বহিষ্কার করা হবে। মেয়র নির্বাচিত হয়ে মামদানি যদি অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের চলতি অভিযানে বাধা দেন, তাহলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে, এমন হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
শহরের প্রতিটি প্রধান কেন্দ্র হেঁটে জনসংযোগ সেরেছেন মামদানি। ৫০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক, যাঁদের অধিকাংশই নবীন, শহরের প্রতিটি বাসায় কড়া নেড়েছেন। টিকটক ও ইউটিউবে তাঁর উপস্থিতি অভূতপূর্ব। মামদানির এই ‘মাঠপর্যায়ের খেলা’ ঠেকাতে কুমো বেছে নিয়েছেন একদিকে ঘৃণা, অন্যদিকে ভীতি।ট্রাম্পের ব্যাপারে জনরায়
শুধু নিউইয়র্কে নয়, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আরও অন্তত তিনটি রাজ্যে নির্বাচন হবে আগামীকাল, যার ফলাফল ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের ব্যাপারে একটি রেফারেন্ডাম বা জনরায় হবে ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ায় গভর্নর পদে নির্বাচন। এই দুই রাজ্যে প্রতিনিধি পরিষদ ও উচ্চ পরিষদেও ভোট গ্রহণ করা হবে। উভয় রাজ্যই ডেমোক্রেটিক রাজনীতির সমর্থক, বা ‘ব্লু স্টেট’। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই দুই রাজ্যেই ট্রাম্পের হার হয়, কিন্তু ২০১৬ সালের তুলনায় তিনি অনেক ভালো ফল করেন। দেখার বিষয়, দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে এই দুই রাজ্যে ট্রাম্পের জনসমর্থন এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে।
এ ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়ায় গভর্নর গেভিন ন্যুসাম নির্বাচনী ম্যাপ পরিবর্তনের অনুমতি চেয়ে একটি গণভোটের আয়োজন করেছেন। আগামী বছরের নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে রিপাবলিকান পার্টি বড় রকমের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে। তা ঠেকাতেই ট্রাম্পের নির্দেশে টেক্সাসের নির্বাচনী ম্যাপ ঢেলে সাজানো হয়েছে, যার ফলে রিপাবলিকান দল কংগ্রেসে আরও পাঁচটি আসন নিজেদের দখলে আনতে সক্ষম হবে ভাবা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ‘ব্লু স্টেট’ ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর ন্যুসামের নির্দেশে নির্বাচনী ম্যাপ বদলানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার ফলে সেখানে ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য কংগ্রেসে পাঁচটি আসনে বিজয়ের সম্ভাবনা তৈরি হবে।
এই তিনটি নির্বাচনের প্রতিটিতেই ভোটারদের মনে থাকবেন ট্রাম্প, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে আইনি বাধা উপেক্ষা করে বিভিন্ন ডেমোক্রেটিক শহরে অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানের নামে সেনাসদস্যদের পাঠাচ্ছেন তিনি। যেসব ডেমোক্রেটিক নেতাকে শত্রু মনে করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছেন। কোনো যুক্তি বা কারণ ছাড়াই ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁর পক্ষে ভোট দেয়নি এমন ডেমোক্রেটিক রাজ্যের কেন্দ্রীয় অনুদান বাতিল করছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই একাধিক সরকারি দপ্তর আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে মাদক পাচার বন্ধের নামে ভেনেজুয়েলার সমুদ্রসীমায় সামরিক হামলা চালাচ্ছেন। আমদানি শুল্কের নামে যে বাণিজ্যযুদ্ধ তিনি শুরু করেছেন, তার ফলে নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের দাম বাড়া শুরু হয়েছে।
গ্যালপ জানাচ্ছে, ২০২১ সালে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ধনতন্ত্রের সমর্থক ছিল, তা এখন কমে ৫৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই যে পরিবর্তিত আমেরিকা, ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা সে কথা জানেন না বা জানতে চান না। গাজা প্রশ্নে তাঁদের রক্ষণশীল অবস্থান দলটির প্রতি নবীন প্রজন্মের ভোটারদের অবজ্ঞার জন্ম দিয়েছে।এসব কার্যকলাপের ফলে সারা দেশে ট্রাম্পের জনসমর্থন কমেছে। অধিকাংশ জনমত জরিপে তাঁর প্রতি সমর্থন ৪২ থেকে ৪৫ শতাংশের বেশি নয়। সাম্প্রতিক সময়ে মাত্র ১০ মাসের মাথায় অন্য আর কোনো প্রেসিডেন্টের জনসমর্থনে এমন ধস নামেনি।
এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প কোনো রাজ্যেই ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি প্রচারে আসেননি। এমনকি রিপাবলিকান প্রার্থীদের পক্ষে সরব সমর্থনও জানাননি। এর একটা সম্ভাব্য কারণ, জয়ী হবেন এমন প্রার্থীর সমর্থন দিতেই ট্রাম্প ভালোবাসেন। আগামীকালের নির্বাচনে তেমন সম্ভাবনা কম।
এই নির্বাচন যে ট্রাম্পের ব্যাপারে জনরায়, তার আরেক প্রমাণ নির্বাচনী প্রচারণায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অংশগ্রহণ। ডেমোক্রেটিক পার্টিতে জাতীয় নেতা বলতে তিনিই সবেধন নীলমণি। শনিবার নিউ জার্সির ডেমোক্রেটিক গভর্নর পদপ্রার্থী মাইকি শেরিলকে পাশে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন তিনি। একই দিন ভার্জিনিয়ায় ডেমোক্রেটিক গভর্নর পদপ্রার্থী এবিগেইল স্প্যানবার্গারের পক্ষেও প্রচারণায় অংশ নেন তিনি। উভয় রাজ্যেই ওবামা কঠোর ভাষায় ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেন, ট্রাম্পের কর্তৃত্ববাদী নীতির কারণেই আমেরিকা আজ এক দুঃসময়ের মুখোমুখি।
জনমতে এগিয়ে মামদানি
ওবামা মামদানিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেননি। তবে তিনি যে মামদানির পাশে আছেন, সে কথাও গোপন রাখেননি। মামদানির ক্যাম্পেইন থেকে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি ওবামা নিজেই ফোন করে জানিয়েছেন, তাঁর (মামদানির) বিজয়ের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তিনি বলেছেন, মামদানির নির্বাচনী প্রচার ‘ইম্প্রেসিভ’ বা নজরে পড়ার মতো।
কুমো ক্যাম্প থেকে অহোরাত্রি তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ ও ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ হিসেবে প্রচার সত্ত্বেও মামদানি যেসব জনমত জরিপে এগিয়ে, তার একটি বড় কারণ মাঠপর্যায়ে তাঁর এই ‘ইম্প্রেসিভ’ প্রচারণা। শহরের প্রতিটি প্রধান কেন্দ্র হেঁটে জনসংযোগ সেরেছেন মামদানি। ৫০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক, যাঁদের অধিকাংশই নবীন, শহরের প্রতিটি বাসায় কড়া নেড়েছেন। টিকটক ও ইউটিউবে তাঁর উপস্থিতি অভূতপূর্ব। মামদানির এই ‘মাঠপর্যায়ের খেলা’ ঠেকাতে কুমো বেছে নিয়েছেন একদিকে ঘৃণা, অন্যদিকে ভীতি। এতে তিনি ফল পাচ্ছেন, গত দুই সপ্তাহে মামদানির সঙ্গে তাঁর ব্যবধান ১০ শতাংশের মতো কমে এসেছে। নিউইয়র্কের চলতি মেয়র নির্বাচন থেকে এরিক অ্যাডামস সরে দাঁড়ানোয় কুমোর লাভ হয়েছে সন্দেহ নেই, তবে এখনো মামদানির সঙ্গে যে ১৬-১৭ পয়েন্টের ব্যবধান রয়েছে, তা অতিক্রম করা কার্যত অসম্ভব, এই মত অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের।
ভূমিধস পরিবর্তন
একটা বিষয় স্পষ্ট। মেয়র নির্বাচনে মামদানি জয়ী হলে তা মার্কিন রাজনীতিতে প্রজন্মগত ও নীতিগত পরিবর্তনের সূচনা করবে। ভূমিধস পরিবর্তন আসবে ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতিতে। মধ্যপন্থী ও ডানঘেঁষা রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে এই দল অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে কম জনপ্রিয়। এই দলে যাঁরা নেতৃত্বে, তাঁদের অধিকাংশই বয়োবৃদ্ধ, করপোরেট আমেরিকার কাছে এদের হাত-পা বাঁধা। ইসরায়েল প্রশ্নে তাদের সমর্থন এখনো আগের মতো নতজানু।
পিউ রিসার্চের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েল প্রশ্নে এখন নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে এমন আমেরিকানের সংখ্যা ৫৩ শতাংশ, যা তিন বছর আগের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। একইভাবে ধনতন্ত্রের প্রতিও আমেরিকানদের সমর্থন নিম্নগামী। গ্যালপ জানাচ্ছে, ২০২১ সালে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ধনতন্ত্রের সমর্থক ছিল, তা এখন কমে ৫৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই যে পরিবর্তিত আমেরিকা, ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা সে কথা জানেন না বা জানতে চান না। গাজা প্রশ্নে তাঁদের রক্ষণশীল অবস্থান দলটির প্রতি নবীন প্রজন্মের ভোটারদের অবজ্ঞার জন্ম দিয়েছে।
অন্যদিকে ট্রাম্পের নেতৃত্বে রিপাবলিকান পার্টি খোলামেলাভাবে অভিবাসনবিরোধী, দক্ষিণপন্থী, খ্রিষ্টবাদী ও রক্ষণশীল। চলতি সপ্তাহের নতুন উদ্বাস্তু নীতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন শ্বেতকায় ও ইউরোপীয় আশ্রয়প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেবে। এই অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতকায় নাগরিকবৃন্দ, ট্রাম্প প্রশাসনের চোখে যারা সে দেশের সরকারের বৈষম্যের শিকার।
এই প্রতিক্রিয়াশীল রিপাবলিকান পার্টির বিপরীতে একটি আধুনিক ও প্রগতিশীল ডেমোক্রেটিক আন্দোলন গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও কংগ্রেস সদস্য ওকাসিও-কর্তেজ ইতিমধ্যে এই আন্দোলনের প্রধান মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন। সবাই মানেন, মামদানির মতো তরুণ ও বুদ্ধিমান নেতৃত্ব এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে।
এই সম্ভাবনার কথা খুব স্পষ্ট করে বলেছেন বার্নি স্যান্ডার্স। তাঁর কথায়, এই দেশ করপোরেট আমেরিকার নির্দেশে চলবে, না তার রাজনীতির কেন্দ্রে থাকবে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ—এ মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ‘যদি আমরা দ্বিতীয় পথটি বেছে নিতে চাই, করপোরেট আমেরিকার বদলে সাধারণ মানুষের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিই, তাহলে আমাদের মামদানির পাশে দাঁড়াতে হবে।’
কোন পথ বেছে নেবে নিউইয়র্ক, মঙ্গলবারেই তা নিশ্চিত হবে।