Samakal:
2025-08-01@17:19:53 GMT

জীবন থেকে নেওয়া

Published: 17th, January 2025 GMT

জীবন থেকে নেওয়া

আমাদের সমাজে নারী ও শিশু নানা দিক থেকে ভুক্তভোগী। পরিবার থেকে শুরু করে অফিসে, রাস্তায়, বাসে, শপিংমলে, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। প্রাসঙ্গিক ঘটনার অবতারণা করছি। গত সপ্তাহের মাঝামাঝি এক সকালে অফিসে আসার পথে এমনই এক ঘটনা দেখলাম। একজন মধ্যবয়সী নারী ও শিশু রিকশা করে জিগাতলা মুখে এগোচ্ছিলেন। আমি ছিলাম পেছনের রিকশায়। মোড়ে আসার পরপরই একজন ৩০-৩৫ বছরের লোক কিছু পাওয়ার আশায় তাঁর কাছে হাত পেতে দিল। তাতে ওই নারী কোনো ধরনের সাড়া না দিয়ে স্থির বসে রইলেন। তৎক্ষণাৎ সেই লোকটি ক্ষোভ দেখিয়ে রিকশার হুডে শক্ত হাতে ঝাঁকি দিল। পরক্ষণেই আমি রিকশা থেকে তাঁকে ধমক দিলে বিষয়টি সে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ওই নারীর পাশেই ছিল ৮ কি ৯ বছরের শিশু। ঘটনায় দু’জনই নির্বিকার দর্শক মাত্র!  

চারপাশে আমাদের চোখের সামনেই এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা ঘটে, যদিও তা আমরা অতটা গুরুত্ব দিই না। এতেই বোঝা যায়, নারী ও শিশুর প্রতি আমাদের মজ্জাগত ধ্যান-ধারণা কতটা নির্মম ও নিষ্ঠুর। 
একই দিন আরেকটি ঘটনার সাক্ষী হলাম। লেগুনায় ফার্মগেট আসছিলাম। ২২ কি ২৩ বছরের এক তরুণী জিগাতলা থেকে ধানমন্ডি ২৭-এর আগে চক্ষু হাসপাতালের উদ্দেশে লেগুনায় উঠেছে। সহকারীর সঙ্গে কথাবার্তায় বোঝা গেল, মেয়েটি নির্ধারিত ভাড়ার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল নয়। সহকারী ওই মেয়েকে সামনে গিয়ে ড্রাইভারকে ভাড়া দিতে বলেন। মেয়েটি লেগুনা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে চলে গেল। তৎক্ষণাৎ দেখলাম, চালক নির্ধারিত ভাড়ার প্রায় দ্বিগুণ রেখেছেন। এ ধরনের ঘটনা শুধু নারীর সঙ্গে ঘটে এমন নয়। বেশির ভাগ পরিস্থিতিতে বিশেষত নারী ও শিশুরা এর শিকার। 
শিশুর কথাই বলা যাক। মায়ের কোল ছাড়া শিশু কোথায় নিরাপদ? শিশু দুর্বল– এটি ভেবেই অনেকে তাদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করেন। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, শিশুর প্রতি এ উপেক্ষিত আচরণ শুরু হয় পরিবারেই। এমনভাবে তাদের গড়ে তোলা হয়, যাতে তার স্বাধীন সত্তার অমর্যাদা করা হয়। তারা ছোট– এমন চিন্তা মাথায় রেখে বড়রা তাদের সঙ্গে আচরণ করেন। এ চিন্তায় ‘ছোট’ ধারণাটি যতটা স্নেহ ও ভালোবাসার, তার চেয়ে বেশি থাকে শিশুকে ‘এত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই’ এমন মানসিকতা। 

আমাদের সমাজে নারী ও শিশু নিয়ে বিদ্যমান প্রভাবশালী ডিসকোর্স উভয়কে দমিয়ে রাখতে চায়। মূলত নারীকে সত্যিকার অর্থে ক্ষমতায়িত করতে হলে দরকার একটি মধ্যপন্থি ডিসকোর্স। এই বয়ানে একদিকে যেমন দেশের সমাজ, সংস্কৃতি ও আদব-কায়দার প্রতিফলন থাকবে, আবার তা বিশেষ কোনো দৃষ্টিভঙ্গির কারণে চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ থাকবে না। নারীর ব্যাপারে এ ধরনের মধ্যপন্থি বয়ানের জন্য এ সমাজের মাটি থেকেই আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বলয় তৈরি করতে হবে। বেগম রোকেয়ার চিন্তাভাবনায় অনেকটুকু সেই প্রভাব রয়েছে। পরবর্তী সময়ে পাশ্চাত্য চিন্তা ও সংস্কৃতির যথাযথ বিচারের মধ্য দিয়ে আমরা ‘নারীবাদ’ ডিসকোর্স গড়ে তুলতে পারিনি। বরং নির্বিচারে নারীবাদের পাশ্চাত্য ডিসকোর্স গ্রহণ করতে গিয়ে আরও জটিলতা বেড়েছে। 

নারী ও পুরুষ উভয়ে সমাজের চালিকাশক্তি– অনেকটা রেললাইনের মতো। কোনো একটি পাশে ত্রুটি থাকলে রেলের চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গেলে অর্থনীতি, রাজনীতিসহ বহুমুখী পুনর্গঠনের প্রয়োজন রয়েছে। সে জন্য প্রথমে আমাদের মনের পুনর্গঠন দরকার। সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে নারী ও শিশুর ওপর নির্যাতনের যেসব মর্মান্তিক খবর আমরা দেখি, তার মূলে আছে তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তাদের দেখলে সমাজে পরিবর্তন আসবে না।  

ইফতেখারুল ইসলাম: সহসম্পাদক, সমকাল
Iftekarulbd@gmail.

com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

গঙ্গাচড়ায় হিন্দুবাড়িতে হামলা ঠেকাতে ‘পর্যাপ্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি

তখন বেলা দুইটা। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজার থেকে একটি মিছিল তিন কিলোমিটার পশ্চিমে পাড়ের হাটের দিকে যায়। মিছিলে ৩০০-৪০০ মানুষ ছিলেন। তবে মিছিলটি যখন সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজারে ফিরে আসে, তখন লোকে লোকারণ্য। মিছিলে পাঁচ-ছয় হাজার মানুষ। এরপর তাঁরা রংপুরের গঙ্গাগড়া উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর গ্রামের দিকে রওনা দেন।

হিন্দুদের বসতবাড়িতে হামলার আগে এভাবেই প্রস্তুতি নেওয়ার বর্ণনা দিলেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দেখছি, দুজন ছিল গাড়ির ভেতরে। একজন ড্রাইভার, একজন এসআই (উপপরিদর্শক)। আমি বললাম, ভাইয়া, আমার সঙ্গে থাকেন, নিবৃত্ত করি। ওরা ভয়ে মনে হয় পিছিয়ে গিয়েছে! মাইকিং করে যেহেতু এত বড় কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, ওনাদের (পুলিশ) আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল।’

আলদাদপুর গ্রামের এক কিশোরের ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ফেসবুকে অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত রোববার মিছিল নিয়ে গিয়ে গ্রামটিতে হামলা চালানো হয়। আগের দিন শনিবারও গ্রামটিতে হামলা করা হয়। ওই দিন অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে কিশোরটিকে আটক করে থানায় নিয়ে গিয়েছিল গঙ্গাচড়া থানা–পুলিশ। সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করে পরদিন রোববার ওই কিশোরকে আদালতের মাধ্যমে সম্মিলিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আলদাদপুর গ্রামটি পাশের জেলা নীলফামারীর মাগুরা ইউনিয়নের সীমানা লাগোয়া। স্থানীয় ব্যক্তি ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ভাষ্য, সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজার থেকে মিছিল নিয়ে এসে দুই দফা হামলা চালানো হয়। রোববার সকাল থেকে মাগুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেওয়ার কথা বলা হয়। দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় কয়েকটি মসজিদের মাইকেও মানববন্ধনের বিষয়টি প্রচার করা হয়।

আমি দেখছি, দুজন ছিল গাড়ির ভেতরে। একজন ড্রাইভার, একজন এসআই (উপপরিদর্শক)। আমি বললাম, ভাইয়া, আমার সঙ্গে থাকেন, নিবৃত্ত করি। ওরা ভয়ে মনে হয় পিছিয়ে গিয়েছে! মাইকিং করে যেহেতু এত বড় কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, ওনাদের (পুলিশ) আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল।মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান

গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রশাসনের হিসাবে, ১৫টি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যে পাঁচ তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে, তাঁদের বাড়ি মাগুরা ইউনিয়নে।

সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজার, হাজির হাট ও পাড়ের হাটের অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেছেন, সেদিন মিছিলে অনেক অপরিচিতি তরুণ ছিলেন। মাইকিং করে হাজার হাজার মানুষ সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজারে জড়ো করা হলেও পুলিশের ভূমিকা ছিল দর্শকের মতো। মাগুরার ইউপি সদস্য রুহুল আমিনও অভিন্ন অভিযোগ করেন। বেতগাড়ির ইউপি সদস্য পরেশ চন্দ্র বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গাফিলতি না করলে হামলা ঠেকানো যেত।

তবে কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম দাবি করেন, তাঁরা ওই দিন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।

বিষয়টি জানার পর থানার ওসি ও ইউপি চেয়ারম্যানকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন বলে জানান কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা।

গঙ্গাচড়া থানার ওসি আল এমরান বলেন, তিনিসহ থানা ও পুলিশ লাইনসের ৩৫ সদস্য ছিলেন। কিন্তু খিলালগঞ্জ বাজার থেকে উচ্ছৃঙ্খল দেড় হাজার থেকে দুই হাজার তরুণ গ্রামটিতে ঢুকে পড়েন। তাঁদের বাধা দিতে গিয়ে এক কনস্টেবল আহত হন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গঙ্গাচড়ায় হিন্দুবাড়িতে হামলা ঠেকাতে ‘পর্যাপ্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
  • গাজায় ত্রাণ নেওয়ার কয়েক মিনিট পর হত্যা করা হয় ক্ষুধার্ত শিশুটিকে: সাবেক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা
  • থানা হোক ন্যায়বিচারের প্রথম ঠিকানা: আইজিপি
  • থানায় হয়রানিমুক্ত সেবা দেওয়ার আহ্বান আইজিপির
  • ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিয়ে উড়োজাহাজে গ্রেপ্তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক
  • শিক্ষার গতিপথ ও উন্নয়ন নিয়ে ঢাবিতে সেমিনার
  • শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা 
  • ‘আমি কী অপরাধ করেছি’— সবাই জানেন শিরোনামটা...
  • নারীদের নিয়ে বারে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আচরণ, আমিরাতের ক্ষোভে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিচ্ছে ইসরায়েল
  • অফিসে প্রেম করার আগে জেনে রাখুন