নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আওতাধীন বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজারুল ইসলাম হিরন ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ লিটনের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় । 

নানা অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপি'র নেতৃবৃন্দ। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নে এক সংবাদ সম্মেলন করে তারা এই দাবি জানান। 

সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক শাহিন আহমেদ বলেন, সম্প্রীতি বন্দর উপজেলা বিএনপি সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ লিটন মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খানকে নিয়ে মিথ্যাচার ও তার বিরুদ্ধে নানান ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

হিরন ও লিটন ২৮ শে অক্টোবরের পর কোন আন্দোলন সংগ্রামে ছিল না তারা একটি ছবিও দেখাতে পারবেনা। তারা যদি কোন একটি ছবি দেখাতে পারে তাহলে আমরা বন্দর উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দগুলো আর রাজনীতি করবো না।

শুধু তাই নয় গত ৫ই আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন হল তাদের কোন ভূমিকা ছিল না। সভাপতিকে কোন কর্মসূচির কথা বললে উনি নিজেকে অসুস্থ দাবি করতেন। আর ৫ তারিখের পরের থেকে উনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছেন। আর সেক্রেটারি লিটন তার ভাই হলেন বন্দর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল কাদির।

আরেক ভাই হলেন মাদকসম্রাট কিছুদিন পূর্বে তার বিরুদ্ধে ১০ হাজার পিছ ইয়াবা সহকারে গ্রেপ্তারের পরে তাকে আদালত ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। তার পরিবার হলো আওয়ামী লীগের পরিবার। বিগত ১৭টি বছর আমরা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি আর সে কন্ট্রাক্টধারি করেছে আওয়ামী লীগের সাথে লেয়াজু করে। আর তার ভাইরা লুটপাট করেছে। আজকে বলে সেও নাকি বলে নির্যাতিত।

তিনি বলেন, হিরন সাব সবার কাছে বলে উনি নাকি ৪০বছর ধরে রাজনীতি করে। আর উনার লগে কার ছবি উনার লগে যত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছবি। জেলা পরিষদের নির্বাচনের পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য মাসুম চেয়ারম্যান কে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন হিরন।

উনার লগে যত আওয়ামী লীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক ছিল। যারা গত ছাত্র আন্দোলন ও বিগত সময় আমাদের বিএনপি নেতাকর্মীদের উপরে হামলা মামলা নির্যাতন করেছে তাদের সাথেই সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন হিরন - লিটন। এই সবকিছুর প্রমাণ কিন্তু আমাদের কাছে আছে। আজকে উনাদের জন্য বন্দর উপজেলা বিএনপির সুনাম ও মান ইজ্জত যা আছে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।

সভাপতি আর সেক্রেটারি যে সকল কার্যক্রম করছে বিএনপির আর ইজ্জত সম্মান থাকবে না। বিএনপির ভাপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন জনগণের পাশে থাকতে আর আমাদের সভাপতি হিরন সাহেব গিয়ে মানুষের জায়গা দখল করে। মানুষের জায়গা দখলতো করে আবার চাঁদাবাজি করে বিভিন্ন মিলস ফ্যাক্টরি থেকে জোরপূর্বক তারা মালামাল নামিয়ে আনেন। 

তিনি আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে হিরন ও লিটনের বিরুদ্ধে বন্দর উপজেলা বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীরা অভিযোগ দিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কিন্তু এটার তদন্ত করছেন।

তদন্ত শেষে কিন্তু এটা রিপোর্ট আপনারা পাবেন। বন্দর উপজেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যেভাবে চাঁদাবাজি ও লুটপাট করছে এটা তদন্ত কেন্দ্র থেকে করছে। এটার ফলাফল আপনার অতি শীগ্রই দেখতে পারবেন। 

সংবাদ সম্মেলনে বন্দর উপজেলা বিএনপির নেতা তাওলাদ মাহমুদ বলেন, আমি বরাবরই উপজেলা বিএনপির মাজারুল ইসলাম হিরনের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করেই যাচ্ছি। আমি কিন্তু আজও পর্যন্ত আমার এই প্রতিবাদের জবাব দিতে পারে নাই। তিনি ব্যর্থ তার এই সব কিছু অপকর্মেরই ডগুম্যান আমার কাছে আছে।

নিজের অপকর্ম কে ঢাকার জন্য তিনি মহানগর বিএনপির আহবায়ক একজন সাদা মনের মানুষ এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান জড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। কিন্তু আমি বলতে চাই হিরন সাহেব শাক দিয়ে কিন্তু মাছ ঢাকা যায় না। নিজের অপকর্মকে ডাকতে আপনি ওনার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। 

তিনি আরও বলেন, মহানগর বিএনপির আহবাক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ইউসুফ খান টিপু ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছি। রাতে মশাল মিছিল ও সকালে লিফলেট বিতরণ করেছি নিজের জীবন ঝুঁকি নিয়েছি ইটভাটায় ঘুমিয়ে জীবনযাপন করেছি।

গত ৫ই আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পূর্বে হিরন সাহেব ও লিটন সাহেব আপনারা কিন্তু রাজপথে ছিলেন না কোন একটা ডকুমেন্ট আপনারা দেখাতে পারবেন না। আর আমরা সাখাওয়াত - টিপু ভাইয়ের নেতৃত্বে নিজের জীবনে ঝুঁকি নিয়ে কিন্তু রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। মামলা হামলা সকল জীবনের মায়া ত্যাগ কর কিন্তু আমরা দলের জন্য কাজ করেছি আর আপনারা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন।

৫ তারিখের পরে থেকে আসে আপনারা কি লুটপাট শুরু করে দিয়েছেন। আপনাদের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলি দিকে এখন আপনারা আমাদের বিরুদ্ধে নানান অপবাদ দিচ্ছেন। আমরা অবিলম্বে হিরন ও লিটনের বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। 

এসময়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন , ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: মহসিন  সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পদাক হাবিবুর রহমান আপন, কলাছিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন, কলাগাছিয়া বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হুমায়ূন কবির, সাংগঠনিক সজীব খন্দকার, মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি মাসুদুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জসিম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পদাক আঃ রহিম।

উপস্থিত, মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অনিক আহম্মেদ, সহ-সভাপতি আবুল কালাম, দপ্তর সম্পদাক নূর আলম, ধামগড় বিএনপি সহ- সভাপতি কবির হোসেন প্রমুখ।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র স ন ত কর ম ল টন র ব ন ব এনপ ও ল টন র জপথ আওয় ম রহম ন আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

কেউ অপকর্ম করতে চাইলে সরাসরি ধরে পুলিশের কাছে দেবেন: মির্জা ফখরুল

বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী অপকর্ম করলে তাঁদের ধরে পুলিশের দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের মোলানী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গণসংযোগের সময় তিনি এ বক্তব্য দেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই দেশের জনগণের কাছে সবচাইতে নির্ভরশীল-নিরাপদ দল হচ্ছে বিএনপি। বিএনপিকে নিয়েই দেশের মানুষ আগামীর সরকার গঠন করতে চায়। এই অঞ্চলের মানুষ প্রথম থেকেই ধানের শীষে ভোট দিয়ে থাকে। আপনারা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করেন। অন্যায় করলে মানুষ ক্ষমা করবে না। আওয়ামী লীগকে যেভাবে ছুড়ে দিয়েছে, আপনাদেরও সেভাবে ছুড়ে দেবে। অন্যায় যেন কেউ না করেন, সেটা খেয়াল রাখবেন।’

নেতাদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নিজেরা অত্যন্ত শক্তি নিয়ে আপনারা অপকর্মগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করবেন। কেউ যদি করতে চায়, তবে আমাদের জেলার নেতাদের বলবেন, না হয় সরাসরি ধরে পুলিশের কাছে দেবেন।’

আয়নাঘর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা কী আয়নাঘরের কথা শুনেছেন? ওই ঘরটা কী জানেন? যাদের ওরা (আওয়ামী লীগ) মনে করেছে সরকারের জন্য ভালো না, সে সমস্যা করতে পারে; তাঁকে পুলিশ পাঠিয়ে তুলে নিয়ে গেছে। তুলে নিয়ে গুম। খবর নাই আর। এমন অসংখ্য ঘটনা। আমরা তো এমন ঘটনার হিসাব করেছিলাম ৮০০ থেকে ৯০০ হবে। পরে হাসিনা পালানোর পর জাতিসংঘ থেকে টিম আসল। তাঁরা বললেন, আয়নাঘরে ১ হাজার ৭০০ মানুষকে আটকে রাখা হয়েছিল।’

আরও পড়ুনরাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে সরকারের উচিত ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা: মির্জা ফখরুল২৮ এপ্রিল ২০২৫

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ দেশের এমন একটা মানুষ নেই, যে কষ্ট শিকার করেনি। আমাদের সামনে এখন একটা সুযোগ এসেছে। এই সুযোগটা কাজে লাগাতে আমরা সবাই মিলে ভোট দিয়ে সংসদ নির্বাচন করতে চাই, সরকার নির্বাচন করতে চাই। যে সরকার আমাদের কথা শুনবে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা এই সমাজে কোনো বিভেদ রাখতে চাই না। আমরা সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমরা একটা ভালোবাসার বাংলাদেশ দেখতে চাই। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা (আওয়ামী লীগ) একটা ধোয়া ওঠাল যে হিন্দুদের নাকি মেরে ফেলা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, এখানে কয়টা হিন্দু মারা গেছে? কিন্তু ওরা এই কথাটা তুলছে। শুধু তুলছে না, সারা পৃথিবীতে এই কথাটা ছড়িয়ে দিয়েছে। উল্টো আমাদের ছেলেরা হিন্দু ভাইদের মন্দির-বাড়ি পাহারা দিয়েছে। মিথ্যাকে সত্য দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না।’

হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘আপনারা সব সময় একটা কথা মনে রাখবেন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি, ঠাকুরগাঁও একটা শান্তিপ্রিয় এলাকা। আমরা এই এলাকায় সবাই ভাইবোনের মতো বসবাস করি। এখানে কারও যেন কোনো ক্ষতি না হয়, আমরা তা নিশ্চিত করতে চাই। যখন কোনো গোলযোগ সৃষ্টি হয়েছে, আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আপনাদের এতটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, বিএনপির আমলে আপনারা সবচাইতে নিরাপদে থাকবেন।’

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘কেউ কেউ সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ফ্যাসিবাদ হাসিনা নাকি আবার ফিরে আসবে। ফিরে এলে আমাদের কিছু করতে হবে না, তার ব্যবস্থা মানুষজনই নিয়ে নেবে। সে যে অত্যাচার–নির্যাতন চালিয়েছে, তার হিসেব মানুষই নিয়ে নেবে। আর ফিরে এলেও তাকে এ দেশের মানুষ আর রাজনৈতিকভাবে গ্রহণ করবে না।’

মোলানী উচ্চবিদ্যালয়ে গণসংযোগের পর মির্জা ফখরুল মহাদেবপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও চিলারং রেলঘুণ্টি এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহসভাপতি আল মামুন আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সদর থানা বিএনপির সভাপতি আবদুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুনট্রাম্প-সি-মোদি এসে বাংলাদেশে কিছু করে দিয়ে যাবেন না: মির্জা ফখরুল১৯ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেউ অপকর্ম করতে চাইলে সরাসরি ধরে পুলিশের কাছে দেবেন: মির্জা ফখরুল