কুষ্টিয়ার দৌলতপুর্ উপজেলার মরিচা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ও ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত আলীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রবিবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা ও সদস্য সচিব শহীদ সরকার মঙ্গল তাকে মরিচা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের পদ থেকে বহিষ্কার করেন।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শের আলী সবুজ বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা ও সদস্য সচিব শহীদ সরকার মঙ্গলের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, বিএনপির দৌলতপুর উপজেলা শাখার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে লিয়াকত আলীকে বহিষ্কার করা হলো।

আরো পড়ুন:

আ.

লীগের সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই: বিএনপি নেতা মিন্টু

যতটা ভাবছেন, সামনের নির্বাচন এত সহজ নয়: তারেক রহমান

দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শহীদ সরকার মঙ্গল বলেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

লিয়াকত আলীর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ও ইয়াবাসহ তার ছেলে ও স্ত্রীকে আটকের বিষয়ে রবিবার (১৯ জানুয়ারি) জানতে চাইলে শহীদ সরকার জানান, ঘটনার সত্যতা পেলে লিয়াকত আলীকে বহিষ্কার করা হবে। 

দৌলতপুরে বিএনপি নেতা লিয়াকত আলীর পিস্তল লেনদেনের ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। রবিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, লিয়াকত আলী টেবিলের নিচ থেকে একটা পিস্তল টেবিলের উপরে রাখেন। তার পাশের চেয়ারে বসা এক যুবক সেই পিস্তলটি হাতে নেন এবং বিভিন্ন কায়দায় চেক করছেন। এ সময় তাদের সামনে আরও দুইজন ব্যক্তি বসে ছিলেন। লিয়াকত আলী নিজ অফিসকক্ষে বসে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিজ অফিস কক্ষে বসে অস্ত্র বিক্রি করছিলেন বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। তার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্রসহ ৭-৮টি মামলা রয়েছে।

রবিবার ভোরে মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর গ্রামের লিয়াকত আলীর বাড়িতে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে ১৯ লাখ ৬৭ হাজার নগদ টাকা এবং ১ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। এ সময় লিয়াকত আলীর স্ত্রী কাজল রেখা (৪৬) ও ছেলে আবরাহাম লিংকন (২৪) কে আটক করা হয়।

এ ঘটনায় দৌলতপুর থানায় মামলা হয়েছে জানিয়ে দৌলতপুর থানার ওসি নাজমুল হুদা বলেন, আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
 

ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ