জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন সারজিস আলম। 

বুধবার (২২ জানুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এই তথ্য জানান তিনি। 

স্ট্যাটাসে সারজিস লিখেছেন, “জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বে আমি নেই। এই ফাউন্ডেশনের গতি তরান্বিত করার জন্য ফাউন্ডেশনের গঠনতন্ত্র, কাঠামো ও কাজের প্রক্রিয়াতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে 'এক্সিকিউটিভ কমিটি' পুরো অফিসের সার্বিক বিষয় পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে ৷ চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সেখানে অফিসের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বর্তমানে সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।”

তিনি  বলেন, “গভর্নিং বডি  ফাউন্ডেশনের পলিসি মেকিংয়ে কাজ করবে। যেখানে প্রধান উপদেষ্টাসহ চার জন উপদেষ্টা রয়েছেন (স্বাস্থ্য, সমাজকল্যাণ, স্থানীয় সরকার, আইসিটি। “সাধারণ সম্পাদক’ নামে কোনো পদ এখন নেই। এই ফাউন্ডেশন প্রথম আর্থিক সহযোগিতা শুরু করে ১ অক্টোবর, অফিস চালু হয় ১৫ অক্টোবর থেকে। আমি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি ২১ অক্টোবর। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২ মাস ১০ দিন আমি দায়িত্ব পালন করি। এরপর আমি দায়িত্ব থেকে সরে আসি। ফাইনালি আমার সাইনিং অথোরিটি ৭ জানুয়ারি হস্তান্তর হয় এবং অফিসিয়ালি আমার দায়িত্ব শেষ করি।”

সাহায্যের বিষয়ে তিনি বলেন, “৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভ্যারিফাইড ৮২৬ জন শহীদ পরিবারের মধ্যে ৬২৮ জনকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়। পাশাপাশি প্রায় ১১ হাজার ভ্যারিফাইড আহতের মধ্যে প্রায় ২ হাজার আহতকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়। যতদিন পর্যন্ত আমি আমার সর্বোচ্চ সময় ফাউন্ডেশনে দিতে পেরেছি ততদিন আমি দায়িত্ব পালন করেছি। যখন মনে হয়েছে- এখন থেকে ফাউন্ডেশনে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া আমার জন্য সম্ভব হবে নয় তখন আমি দায়িত্ব থেকে সরে এসেছি। আমার কাছে নিজের সীমাবদ্ধতা এড্রেস করা এবং সে অনুযায়ী দায়িত্ব গ্রহণ বা ত্যাগ করা কোনো দুর্বলতা নয় বরং এটাতে সৎ সাহস লাগে। আমি চেষ্টা করেছি আমার চেয়ারের দায়িত্বের সাথে সৎ থাকতে।”

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে  হতাহতদের সহায়তায় গঠন করা হয় ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’। সেখানে সারজিস আলমকে সাধারণ সম্পাদক ও মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা করা হয়। 

ঢাকা/হাসান/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।

ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।

১৫ দফা প্রস্তাবনা

সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।

১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ