খেলার বিকেএসপি পড়াশোনায়ও ভালো করছে
Published: 21st, October 2025 GMT
সকাল ও বিকেলে মাঠে ঘাম ঝড়ানো। অনুশীলনে নিজের পারফরম্যান্সকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অদম্য চেষ্টা ও কোচের মন জয় করার তাড়না। নিজেকে তৈরি করে প্রতিযোগিতার মঞ্চে গিয়ে প্রতিপক্ষকে হারানোর মানসিক যুদ্ধ। দিনের পর দিন এমন পরিশ্রম আর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শরীরে জমতে থাকে ক্লান্তির পাহাড়। এমন দৈনন্দিন জীবনে তাঁদের জন্য বইয়ের পাতায় চোখ রাখার কাজটি তো বড্ড কঠিন।
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের জীবনের গল্পের টাইমলাইনটা এমনই। তবু সব ক্লান্তিকে হার মানিয়ে বইয়ের পাতায় চোখ রাখেন তাঁরা। খেলোয়াড় তৈরির কারখানার ছেলেমেয়েরা নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন বোর্ড পরীক্ষাতেও। সাম্প্রতিক সময়ে বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলে চোখ বোলালে বলাই যাচ্ছে, খেলার প্রতিষ্ঠান বিকেএসপি পড়াশোনায়ও ভালো করছে।
আরও পড়ুনসাইনবোর্ডে ‘কলেজ’, লেখাপড়া নেই ২০ ঘণ্টা আগেঢাকা বোর্ডের অধীন সর্বশেষ ঘোষিত উচ্চমাধ্যমিক এইচএসসি পরীক্ষায় খেলার মাঠের মতো পরীক্ষাতেও সাড়া ফেলেছে বিকেএসপি। বোর্ড অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির পাসের হার ৯২ দশমিক ৪৫ শতাংশ । ১৬১ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ১৪৭ জন। ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথমবারের মতো শীর্ষ দশের তালিকায় উঠে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আছে সপ্তম স্থানে।
তবে বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী ১৬১ জন হলেও প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১৫৬ শিক্ষার্থী। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য শেষ মুহূর্তে তিনজন পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। সে হিসাব অনুযায়ী ১৫৬ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ১৪৭ জন। এতে পাসের গড় হিসাব দাঁড়াচ্ছে ৯৪ দশমিক ২৩ শতাংশ।
আরও পড়ুনজাপানে মেক্সট স্কলারশিপে উচ্চশিক্ষা, জিপিএ ২.৩০ হলে আবেদন ১৯ অক্টোবর ২০২৫শিক্ষা সফরে এইচএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ
এসএসসি পাস করার পর বাড়ি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন অনুরাগ চন্দ্র। তার মধ্যে ছিল সফল হওয়ার প্রবল আগ্রহ। সেটি তিনি প্রমাণ করেছেন এবারের এইচএসসি পরীক্ষায়। মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার চারটি কলেজের মধ্যে একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
অনুরাগের এমন রেজাল্টে খুশি পরিবারের প্রতিটি সদস্য। তারা আশা করছেন, অধ্যাবসায় আর মনযোগ অনুরাগকে সফলতার শিখরে পৌঁছে দেবে।
আরো পড়ুন:
কুষ্টিয়ার সাইফুল মাশরুম চাষে সফল, দিয়েছেন ৫০০ জনকে প্রশিক্ষণ
শিশুদের ‘নোবেল’ পুরস্কারে মনোনীত কিশোরগঞ্জের মাহবুব
অনুরাগ রাজনগর উপজেলার রাজনগর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় এই কলেজ থেকে অংশগ্রহণ করেন ৪৮৬ জন শিক্ষার্থী। পাস করেছেন ১৯৪ জন। পাসের হার ৩৯.৯২ শতাংশ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার চারটি কলেজের মোট এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন ৭৮১ জন। পাস করেছেন ২২৭ জন। পাসের হার ২৯.০৭ শতাংশ। অনুরাগই এবার এই উপজেলা থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া একমাত্র শিক্ষার্থী।
অনুরাগ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আমতৈইল ইউনিয়নের মাসকান্দি গ্রামের বাসিন্দা অভিকুমার চন্দ্রের ছেলে। তার মা সদর উপজেলার পরিবার কল্যাণ সহকারী।
অনুরাগ স্থানীয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। এসএসসি পাস করার পর তিনি রাজনগর সরকারি কলেজে পড়ালেখার সুযোগ পান।
সোমবার (২০ অক্টোবর) গ্রামের বাড়িতে গেলে কথা হয় অনুরাগের সঙ্গে। তিনি বলেন, “২০২৩ সালে এসএসসি পাস করি। এরপর ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাই রাজনগর সরকারি কলেজে। বাড়ি থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে কলেজটির অবস্থান। আমি নিয়মিত কলেজে গিয়ে ক্লাস করতে পারিনি।”
তিনি বলেন, “আমি কলেজ শিক্ষকদের তেমন সহযোগিতা পাইনি। নিজ উদ্যোগে প্রাইভেট পড়ে এবং মা-বাবার উৎসাহ আমাকে রেজাল্ট ভালো করতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।”
অনুরাগ বলেন, “সামনে মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। মেডিকেলে ভর্তি হতে পারবো এমনটি আশা করছি। একজন ভালো ডাক্তার হওয়া আমার স্বপ্ন।”
অনুরাগের বাবা অভি কুমার চন্দ্র বলেন, “অনুরাগ খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করছে। সে প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবহার করেনি। লেখাপড়াতে তার আগ্রহ ছিল অনেক বেশি। আমি তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছি। যখন যা লাগে তার যোগান দিয়েছি। ছেলের অধ্যাবসায় আর কষ্টে এমন সফলতা এসেছে। আমি তার জন্য অনেক প্রার্থনা করি। অধ্যাবসায় আর মনযোগ তাকে সফলতার শিখরে পৌঁছে দেবে এমনটি আশা করছি।”
রাজনগর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ তামান্না বেগম বলেন, “সদ্য জাতীয়করণ হওয়ায় আমাদের কলেজে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, শিক্ষার্থীদের ভালো পাঠদান নিশ্চিতের। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে অনেক কিছু করতে পারিনি। অনুরাগ জিপিএ-৫ পেয়ে আমাদের কলেজের সম্মান রক্ষা করেছেন। শুধু তাই না, তিনি রাজনগর উপজেলার সম্মান রেখেছেন।”
রাজনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জুলফিকার আলম বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের দায়িত্ব আমাদের ওপর নয়। আমরা শুধু মনিটরিং করি। এর মূেল দায়িত্বে রয়েছেন ডিডি মহোদয়। এবার এই উপজেলার ফলাফল ভালো হয়নি।”