Samakal:
2025-08-01@02:31:14 GMT

নাটকের মধুসূদন

Published: 24th, January 2025 GMT

নাটকের মধুসূদন

১৮২৪ সালে আজকের এই দিনে জন্ম নেওয়া কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর কবি-প্রতিভার বাইরেও একজন নাট্যকার হিসেবে সুপরিচিত। মাত্র তিন বছর ১৮৫৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত রচনা করেছেন নাটক। এই অল্প সময়ে জুলিয়াস সিজারের ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ বাণীটি যেন মধুসূদনের নাটক রচনার ক্ষেত্রে যথোপযুক্তভাবেই প্রযোজ্য। 
শেকসপিয়রীয় রীতিতে মহাভারতের শর্মিষ্ঠা, যযাতি ও দেবযানী আখ্যান অবলম্বনে তিনি প্রথম নাটক রচনা করেন ১৮৫৯ সালে ‘শমির্ষ্ঠা’; যা সে বছরেই সেপ্টেম্বরে বেলগাছিয়া থিয়েটারে মঞ্চায়িত হয়। এটিই ছিল শুরু। এরপর প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ চরিত্রের সংলাপ শোনা যায় ‘পদ্মাবতী’ নাটকে; যা গ্রিক পুরাণের ‘অ্যাপল অব ডিসকোর্ড’ অবলম্বনে রচিত। প্রতিটি নাটকের মাধ্যমে নিজেকে ভাঙতে পছন্দ করতেন মধুসূদন; যা তাঁর প্রতিটি নাটকেই লক্ষণীয়। 
নাটকের পাশাপাশি প্রহসনও রচনা করেছেন তিনি। ‘বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ’ এবং ‘একেই কি বলে সভ্যতা’– দুটি প্রহসনের মাধ্যমে প্রচলিত সমাজব্যবস্থার ভঙ্গুর অবস্থাকে আঙুল তুলে দেখিয়েছেন তিনি। ১৮৬১ সালে বাংলা নাট্যসাহিত্যে রচিত হয় প্রথম ট্র্যাজেডি নাটক ‘কৃষ্ণকুমারী’। কৃষ্ণকুমারীর আত্মবিসর্জন নিয়ে পুরো নাটক রচিত; যা প্রথম মঞ্চস্থ হয় ১৮৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শোভাবাজার প্রাইভেট থিয়েট্রিক্যাল সোসাইটিতে। এ নাটকের মাধ্যমে বাংলা নাট্যজগতের নতুন এক দুয়ার উন্মোচন করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তাঁর জীবদ্দশায় অপ্রকাশিত নাটক ‘মায়াকানন’। পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে রচিত এই নাটক ১৮৭৪ সালে বেঙ্গল থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয় প্রথম। 
মধুসূদন প্রতিটি নাটকের মূল চরিত্রগুলো এমনভাবে সংলাপসহ উপস্থাপন করেছেন, যা ছিল গভীর সামাজিক ও নৈতিক বার্তার বাহক। নাটকের ঘটনা ও চরিত্রের একরৈখিক গতি নাটক ও প্রহসনের উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে। সমকালীন সমাজের ভণ্ডামি, ধর্মীয় কুসংস্কার এবং শোষণমূলক অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রতি তিনি প্রবল প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মার্ক্সীয় দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করলে তাঁর রচিত নাটকগুলোর শৈল্পিক ও আদর্শিক প্রভাব স্পষ্ট। ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের উক্তি, ‘সমাজতান্ত্রিক উদ্দেশ্যমূলক না হয়েও সাহিত্য সমাজের সংকট চিহ্নিত করতে পারে’– যথাযথভাবে বোঝা যায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাটকগুলোর মূল ভাবনা বোঝার মাধ্যমে।
মধুসূদনের সমাজভাবনা কেবল তাঁর সমকালীন সমাজ নয়, বর্তমান সময়েও প্রাসঙ্গিক। তিনি এমন একটি সমাজের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন, যেখানে পুঁজিবাদী শোষণ ও কপটতা সমাজের ক্ষত সৃষ্টি করে। তাঁর রচনার আধুনিক চিন্তা বর্তমান সমাজের সংকটকে বুঝতে এবং সমাধান খুঁজতে সাহায্য করে। মধুসূদন রচিত নাটক ও প্রহসন শুধু অতীত নয়, এটি একটি চলমান সংকটময় সমাজে পরিবর্তনের আহ্বান জানায় আমাদের। আজন্ম পাশ্চাত্যের প্রতি দুর্বল থাকা মাইকেল মধুসূদন দত্ত আত্মোপলব্ধি এবং মাত্র চারটি নাটক ও দুটি প্রহসন রচনা করে বাংলা নাটকের জগতে শক্ত ভিত তৈরি করেন। বাংলা নাট্যসাহিত্যে মোহময়তা এবং প্রতিবাদী লেখনী তুলে ধরা মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনের শেষ দিনগুলোও ছিল তাঁর রচিত নাটকের মতো ট্র্যাজেডিপূর্ণ। নিঃসঙ্গ, পরিবারহীন এক দাতব্য চিকিৎসালয়ে তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া’

ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীনন্দা শঙ্কর। সৃজিত মুখার্জির ‘এক যে ছিল রাজা’, সুমন ঘোষের ‘বসুপরিবার’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই তারকা। বলা যায়, টলিউডের প্রথম সারির সব নির্মাতার সঙ্গেই কাজ করেছেন এই নৃত্যশিল্পী। 

গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন শ্রীনন্দা। সেখানে সংসার, কাজ নিয়ে সময় কাটছে তার। তবে অভিনয়ে নেই। অভিনয় থেকে দূরে থাকার কারণ কী? ফের কী অভিনয়ে ফিরবেন না শ্রীনন্দা?  

ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে আলাপকালে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শ্রীনন্দা। এ অভিনেত্রী বলেন, “টলিউডে যাদের সঙ্গেই কাজ করেছি, তাদের সঙ্গে এখনো আমার খুব ভালো সম্পর্ক। ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতাও বলা চলে। মুশকিল হলো, বাংলা সিনেমায় তেমন বাজেট থাকে না। সত্যিই যদি খুব ভালো সিনেমা হয় বা এমন কোনো পরিচালক আমাকে অফার দেন যেখানে কোনো ভাবেই ‘না’ করব না। আমি নিশ্চয়ই আবার অভিনয়ে ফিরব।”

আরো পড়ুন:

কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী

পরিচালকের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন শোলাঙ্কি

কিছু কিছু লোকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গিয়েছেন শ্রীনন্দা। কারণ, তাদের সঙ্গে মানসিকভাবে মেলেনি। তার ভাষায়—“মুম্বাই, কলকাতা বা সাউথ ইন্ডাস্ট্রি যেখানেই হোক না কেন, আমি ভালো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কেউ এমন চরিত্রে সুযোগ দেন, যেখানে প্রয়োজনে টাকাটা ভুলে গিয়ে শুধু পরিচালকের নাম দেখেই কাজটা করব।”

কিছুটা ইঙ্গিপূর্ণভাবে শ্রীনন্দা বলেন, “কাজের পাশাপাশি আমার সংসারও রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই পেতে হবে, যার জন্য সংসারটা ইগনোর করার কথা ভাবব। অর্থাৎ মনে হবে সংসার ফেলে এই সিনেমাটা আমাকে করতেই হবে। এই বয়েসে একটু কফি খেতে যাবেন? কাজ দেবেন? এগুলো করতে পারব না। সবাই তো চেনেই আমাকে। কাজ দিতে হলে দেবেন।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব শ্রীনন্দা। অনেকে ভেবেছিলেন, এ মাধ্যমে কাজ করে টাকা আয় করে থাকেন। তাদের উদ্দেশে শ্রীনন্দা বলেন, “অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা এটাও আমার পেশা। এখান থেকে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। আমি নিজেও আগে বিষয়টা জানতাম না। পোস্ট করতে করতে বুঝেছি। আমি এখন মুম্বাইয়ে মায়ের সঙ্গে পুরোদমে নাচের স্কুল চালাচ্ছি। এখন মোট ছয়টা ব্রাঞ্চ এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। সব মিলিয়ে ভালো আছি।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলের শিকার হন শ্রীনন্দা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগে আমাকে একজন বলেছিলেন, ‘রিল মামনি’। আমি আর মা এটা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়েছি। মাঝেমধ্যে এসব বেশ মজাও লাগে। তবে যে পরিমাণ ভালোবাসা পাচ্ছি, সেটা খুব মন থেকেই ভক্তরা দিচ্ছেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনে আশীর্বাদ।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ