অনেক ঢাক ঢোল পিটিয়ে ‘বিপিএল এক্সপ্রেস’ যাত্রা শুরু করেছিল ঢাকা থেকে। সিলেট, চট্টগ্রাম ছুটে তা এখন পৌঁছেছে শেষ গন্তব্য ঢাকায়। যেখানে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্দা নামবে বিপিএলের।
৪৬ ম্যাচের বিপিএলের শেষ হয়েছে ৩২ ম্যাচ। বাকি ১০ ম্যাচ রয়েছে রাউন্ড রবিন লিগের। এরপর দুইটি কোয়ালিফায়ার, একটি এলিমিনেটর এবং সবশেষ ফাইনাল।
পয়েন্ট টেবিলের যে চিত্র তাতে সেরা চারের দৌড় থেকে এখনো ছিটকে পড়েনি কোনো দল। রংপুর রাইডার্স ১৬ পয়েন্ট নিয়ে সবার আগে নিশ্চিত করেছে প্লে অফ। ১২ ও ১০ পয়েন্ট নিয়ে সেই দৌড়ে এগিয়ে আছে ফরচুন বরিশাল ও চিটাগং কিংস। ৮ পয়েন্ট নিয়ে চার ও পাঁচ নম্বর পজিশনে খুলনা টাইগার্স ও দুর্বার রাজশাহী। ৬ ও ৪ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম স্থানে আছে ঢাকা ক্যাপিটালস ও সিলেট স্ট্রাইকার্স।
আরো পড়ুন:
বিপিএল খেলে কানাকড়িও পাননি ইমন, সামির কাদেরের হাতে আটকা
বিতর্কে শেষ হলো বিপিএলের চট্টগ্রামের পর্ব, প্লে’অফের দৌড়ে কারা?
নানা সমীকরণে খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা ও সিলেটের প্লে’ অফ যাত্রা টিকে আছে। রান রেটের হিসেবের ম্যাড়প্যাচ, অন্যান্য দলের জয়-পরাজয়ের সমীকরণের ওপর নির্ভর কছে তাদের শেষ চারে যাওয়ার লড়াই।
ঢাকায় প্রথম পর্বে ও সিলেটে রান বন্যায় ভেসেছিল বিপিএল। ঢাকায় প্রথম ৮ ম্যাচে ছক্কা হয়েছিল মোট ১৩২টি। সিলেটে ১২ ম্যাচে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ২১০টি। ঢাকায় ম্যাচ প্রতি ছক্কা হয়েছে ষোলোটি। সিলেটে সতেরটি। দুই মাঠের সীমানা নিয়ে প্রবল সমালোচনা হয়েছিল। মাঠ ছোট হওয়ার সুযোগ কাজে লাগান ব্যাটসম্যানরা। তাতে বোলারদের মুখের হাসি কেড়ে নেয়।
চট্টগ্রামে খেলা হয়েছিল আদর্শ ক্রিকেট মাঠে। যেখানে সীমানা ছিল একেবারেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠের আয়তনে। তাতে রান ফোয়ারা ছুটেনি। কিন্তু খেলা হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ। চট্টগ্রামে ১২ ম্যাচে ছক্কা হয়েছে ১৮০টি। ম্যাচ প্রতি সেই সংখ্যাটি আসে পনেরতে। রান তুলনাতেও সিলেট এগিয়ে। ১২ ম্যাচে রান হয়েছে ৪১৫৪। চট্টগ্রামে সমান ম্যাচে ৩৭৯৬।
ঢাকায় শেষ কয়েক ম্যাচের সীমানা বাড়বে বলেই জানা গেছে। প্রথম পর্বের মতো হচ্ছে না। তাতে শেষের লড়াই গুলোতে আরও প্রতিদ্বন্দীতা বাড়বে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। শেষের এই লড়াইয়ে কার ভাগ্যে শিরোপা লিখা হয় সেটাই দেখার।
ঢাকা/ইয়াসিন/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব প এল ব প এল
এছাড়াও পড়ুন:
স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার
২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।
মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।
ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।
স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।
শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’
তার জন্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”
"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।
প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"
ঢাকা/ইয়াসিন