রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকরা হাত গুটিয়ে নিলে ইউক্রেনের অস্তিত্ব থাকবে না। মঙ্গলবার রুশ সাংবাদিক পাভেল জারুবিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, 'ওয়াশিংটন যদি কিয়েভকে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা প্রদান বন্ধ করে, সেক্ষেত্রে দুই মাসের মধ্যেই ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে। পশ্চিমাদের অর্থ ও গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেলে তারা এক মাসও টিকতে পারবে না।'

'আমি মনে করি, সবকিছু শেষ হতে পারে আগামী দেড় থেকে দু’মাসের মধ্যেই। এদিক থেকে বিবেচনা করলে, সত্যিকার অর্থে এ মুহূর্তে ইউক্রেনের কোনো সার্বভৌমত্ব নেই।'

'আরেকটি কথা আমি বলব— কিয়েভের পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকরা যদি সত্যিই শান্তি চায়, তাহলে এখনই আদর্শ সময়। আমরা ইতোমধ্যে এ ইস্যুতে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি।'

২০১৫ সালে সাক্ষরিত মিনস্ক চুক্তির শর্ত লঙ্ঘণ, ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী, যা এখনও চলছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

প্রায় তিন বছরের যুদ্ধে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, ঝাপোরিজ্জিয়া এবং খেরসন— এই চার প্রদেশের দখল করেছে রাশিয়া। মস্কোর প্রস্তাব— কিয়েভ যদি ক্রিমিয়াসহ এই চার প্রদেশকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। অন্যদিকে কিয়েভের বক্তব্য, রাশিয়া যদি অধিকৃত অঞ্চলগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়, শুধু তাহলেই শান্তি সংলাপে বসবে ইউক্রেন।

দুই পক্ষের অনড় অবস্থান এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ইউক্রেনকে ধারাবাহিকভাবে অর্থ ও সামরিক সহায়তা প্রদান করে যাওয়ায় এ যুদ্ধ থামানোর যাবতীয় প্রক্রিয়া কার্যত থেমে আছে।

তবে গত ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থ সহায়তা প্রদান স্থগিত রাখা সংক্রান্ত একটি বিলে স্বাক্ষর করেছেন। এর ফলে আগামী অন্তত ৯০ দিন বিশ্বের সব দেশে স্থগিত থাকবে মার্কিন সহায়তা।

ট্রাম্প অবশ্য নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানোর ব্যাপারটিকে তিনি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখেন এবং তার লক্ষ্য ক্ষমতা গ্রহণের পর যত দ্রুত সম্ভব এ যুদ্ধ থামানো।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ