মৌসুমের শুরুতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদে লোকসান হয়েছে কৃষকের। এবার চারার দাম কম হওয়ায় ২০ একর জমিতে রোপণ করছেন বাঘার চাষি জিল্লুর রহমান। তিনি বলছিলেন, চাষ, সেচ, শ্রমিক, কীটনাশক, সারসহ সব মিলিয়ে বিঘায় খরচ হবে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বিঘাপ্রতি ৮০ মণ উৎপাদন হবে বলে আশা তাঁর। এখন প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ১ হাজার ৪০০ টাকা। এ দাম থাকলেও পেঁয়াজ বিক্রি হবে ১ লাখ ১২ হাজার টাকায়। এতে খরচ বাদে বিঘায় লাভ হবে ৪২ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ায় নষ্ট হওয়া, দাম কমাসহ নানা কারণে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদে লোকসান হয়েছে। সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মৌসুমের শুরুতে চারা পেঁয়াজ রোপণ শুরু করেছেন চাষি। গত বছরের তুলনায় এবার চারার দাম কম। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তারা চারা রোপণ করছেন। এক বিঘা জমিতে এক কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। 
আগে প্রতি কেজির দাম ছিল ৬ হাজার টাকা। এবার প্রতি কেজি বীজ কিনতে হয়েছে ১ হাজার ৭শ থেকে ২ হাজার টাকায়। এতে বিঘায় চারা উৎপাদন হয় ৫ থেকে ৬ মণ। এবার মৌসুমের শুরুতেই প্রতি মণ চারা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। গত বছর ছিল ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রণোদনার বীজ নিয়ে চারা তৈরি করে অনেকে রোপণ করছেন। কেউ কেউ চারা কিনে নিচ্ছেন। এ আবাদে চাষ, বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ, শ্রমিকসহ প্রচুর খরচ হয়। কৃষকের ভাষ্য, সেচই দিতে হয় সাত-আটবার। 
কৃষক পিয়ার আলী প্রণোদনার বীজ নিয়ে পাঁচ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করেছেন। তাঁর ভাষ্য, উৎপাদন ও বাজারে দাম ভালো পেলে খরচ বাদে লাভ থাকবে। আর কৃষক আব্দুল্লাহ ও হারু চারা কিনে রোপণ করছেন। চাঁদপুর গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, গত বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজে ভালো দাম পেয়ে এবার উচ্চ মূল্যে বীজ কিনে ৪০ বিঘা জমিতে আবাদ করেছিলেন। দাম ভালো না পেয়ে বিঘায় লোকসান হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।
পাকুড়িয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম মুড়িকাটা পেঁয়াজের বীজ কিনেছিলেন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায়। চাষ, বীজ, সেচ, শ্রমিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ে খরচ হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার বেশি। তিনি বলেন, বিঘাপ্রতি উৎপাদন হয়েছে ৪০ থেকে ৬০ মণ। বাজার মূল্যে এক বিঘার পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। 
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, এবার ২ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে চারা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কন্দ জাতের ১ হাজার ৫০০ ও অন্যান্য ৫১৫ হেক্টর। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে কন্দ আর ৯৫ হেক্টরে চারা আবাদ হয়েছে, যা চলমান রয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ৬১৮ টন। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পরে বলে ধারণা কর্মকর্তাদের। বিঘায় ৭০ থেকে ১০০ মণ উৎপাদন হতে পারে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, চরাঞ্চলে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বেশি আবাদ হলেও চারার আবাদ কম। চারা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। মুড়িকাটা আবাদের পর বর্ষাকাল দীর্ঘায়িত হওয়ায় উৎপাদন কমেছে। দাম কম থাকায় লোকসান হয়েছে। প্রাকৃতিক কারণে মুড়িকাটা পেঁয়াজে লোকসান হলেও চারায় লোকসান হবে না।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ ম কম

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে সাবেক কাউন্সিলরের মৃত্যু

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক এক কাউন্সিলরের মৃত্যু হয়েছে। পরিবার বলছে, পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান। তবে পুলিশ বলছে, তারা অন্য কাজে এলাকায় গিয়েছিল, ওই কাউন্সিলরকে ধরতে যায়নি। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে নগরের দাসপুকুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া ওই কাউন্সিলরের নাম কামাল হোসেন (৫৫)। তিনি নগরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং দাসপুকুর এলাকার বাসিন্দা। একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তবে দলে তাঁর কোনো পদ–পদবি ছিল না।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কামাল হোসেনের নামে চারটি মামলা হয়। তিনি এলাকায় থাকলেও গা ঢাকা দিয়ে থাকতেন। পরিবারের ধারণা, মামলা থাকায় পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে কিংবা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

কামালের ছেলে সোহান শাকিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতে আমাদের এলাকায় পুলিশ এসেছিল। পুলিশ দেখে আমার বাবা তবজুল হক নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠতে যান। তখন সিঁড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মারা যান।’

নগরের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা আছে। তিনি আত্মগোপনে থাকতেন। শুনেছি রাতে তিনি মারা গেছেন।’

ওসি বলেন, রাতে দাসপুকুর এলাকায় পুলিশ গিয়েছিল। তবে কামালকে ধরতে যায়নি। পুলিশ গিয়েছিল অন্য কাজে। কিন্তু পুলিশ দেখে পালাচ্ছিলেন কামাল হোসেন। তখন হৃদ্‌রোগে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। লাশ পরিবারের কাছেই আছে। তারা দাফনের ব্যবস্থা করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ